
ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পাহেলগামে ২৬ বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার রাতেও নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারতীয় চৌকিগুলোর দিকে ‘উস্কানিমূলকভাবে’ গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। টানা দ্বিতীয় রাত এ ধরনের ঘটনা ঘটল।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর বরাতে এনডিটিভি জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাতে (২৫-২৬ এপ্রিল) রাতে পাকিস্তানের একাধিক চৌকি থেকে গুলি চালানো হয়। ভারতীয় সেনারা পরিস্থিতির উপযুক্ত জবাব দেয়। তবে এই গোলাগুলিতে কেউ হতাহত হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে— ‘২৫ থেকে ২৬ এপ্রিল রাতের মধ্যে কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানের সেনারা একাধিক টহল চৌকি থেকে উস্কানিমূলকভাবে গুলি চালিয়েছে। ভারতীয় সেনারাও পাল্টা গুলি চালায়। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
ভারতীয় সেনাসূত্রে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি সেনারা ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি ও সতর্কতা যাচাইয়ের জন্য এমন ফায়ারিং করে থাকতে পারে। বিশেষ করে যখন ভারতে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান উঠছে।
মঙ্গলবার কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ২৬ পর্যটক নিহত হন। এই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করে ভারত সরকার।
এই হামলার জবাবে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। দেশটির কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রী সি আর পাটিল জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে আর ‘এক ফোঁটা পানিও’ দেওয়া হবে না। ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। এই সিদ্ধান্তকে সীমান্তের অপর দিক থেকে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রত্যুত্তর বলে বর্ণনা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘যেখানেই পালাক না কেন, প্রতিটি সন্ত্রাসীকে খুঁজে বের করে এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না।’
এদিকে শুক্রবার পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ভারতের প্রতি তীব্র হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি আমাদের পানি বন্ধ করা হয়, তাহলে নদীতে তোমাদের রক্ত বইবে।’
ভারতের একতরফা সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার এক জনসভায় তিনি এই হুশিয়ারি দেন।
এছাড়াও উভয় দেশই একে অপরের কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে ও ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য এখন দেশে ফিরে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত পারাপার বন্ধ থাকবে।
এছাড়া, ইসলামাবাদ পক্ষ থেকেও ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে, যার মধ্যে শিমলা চুক্তিও রয়েছে। ওয়াঘা সীমান্তের জনপ্রিয় ‘বর্ডার সেরিমনি’ অনুষ্ঠানও আপাতত বন্ধ করা হয়েছে।
ওএফ