আন্তর্জাতিক আইন-নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
ইসরায়েলি আগ্রাসন ও সিরিয়ার পুনর্গঠন
মুহাম্মাদ শোয়াইব
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৫০
প্রতীকী ছবি
ইসরায়েলের ধারাবাহিক সামরিক অভিযান সিরিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে পরিচালিত হয়েছে। যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গভীর উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ সিরিয়া থেকে দামেস্ক, হামা ও লাতাকিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই হামলায় সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত, বিমান ঘাঁটি, কৌশলগত সামরিক কেন্দ্র ও নৌঘাঁটিগুলো ছিল ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
ইসরায়েলের বিমান বাহিনী সিরিয়ার বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জামকে ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে ছিল যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক ও নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম।
ধ্বংস হওয়া অস্ত্রের ধরন ছিল মিগ-২৯, সুখোই-২৪, মিগ-২৫-সহ অন্যান্য রুশ যুদ্ধবিমান। বিমান প্রতিরক্ষা এস-২০০, এস-৩০০ ও প্যান্টসির-এস১। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, স্কাড-এস ও স্কাড-ডি। নৌবাহিনীর সরঞ্জাম, রুশ আমুর সাবমেরিন, ক্ষেপণাস্ত্র নৌকা, এবং ইরানি টের মিসাইল বোট।
এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, হামা ও আলেপ্পোর গবেষণা কেন্দ্রে থাকা রাসায়নিক অস্ত্র ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
ইসরায়েলের এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ১৯৭৪ সালের সিরিয়া-ইসরায়েল বিচ্ছিন্নতা চুক্তি এবং জাতিসংঘের রেজুলেশন ৩৩৮ অনুযায়ী উভয় দেশ যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে প্রতিরোধমূলক হামলার বৈধতা নেই।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ বেন সাউলের মতে, প্রতিরোধমূলক বা আগে থেকে নিরস্ত্র করার নামে কোনো রাষ্ট্রের আক্রমণ বৈধতা পেতে পারে না। ফলে, ইসরায়েলের এসব অভিযান আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।
ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়া যদি নতুন সরকার পায়, তবে সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
পুনর্গঠনের প্রধান ধাপগুলো হতে পারে, সামরিক কারখানা, গবেষণা কেন্দ্র পুনঃস্থাপন এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত সামরিক অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করে অস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি। উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিহত করতে আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন, আন্তর্জাতিক সমর্থন ও অস্ত্র ক্রয় এবং পশ্চিমা দেশগুলোর (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি) থেকে অস্ত্র সংগ্রহ। বিকল্প হিসেবে রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের কাছ থেকেও সামরিক সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। স্থানীয় প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তোলা। সিরিয়ার বিরোধী দল ইতোমধ্যে ড্রোন ও স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। নতুন সরকার এই উদ্যোগকে প্রসারিত করতে পারে।
ইসরায়েলের হামলা শুধুমাত্র সিরিয়ার সামরিক ক্ষমতাকেই দুর্বল করেনি, এটি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তনের ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে, সিরিয়ার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সফল না হলে ইসরায়েলের প্রাধান্য আরও দৃঢ় হতে পারে।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ। সিরিয়ার নতুন সরকার যদি সামরিক পুনর্গঠনে সফল হয়, তবে তারা ইসরায়েলের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে। তবে এটি কেবল অভ্যন্তরীণ শক্তি নয়, আন্তর্জাতিক সমর্থন ও কূটনৈতিক কৌশলের ওপর নির্ভর করবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা হ্রাসে উদ্যোগ নেওয়া এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখা। মধ্যপ্রাচ্যের টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এ ধরনের আগ্রাসন রোধ অত্যন্ত জরুরি।
-আলজাজিরা এরাবিক অবলম্বনে
বিএইচ/