কৃত্রিম দ্বীপে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯
ছবি : সংগৃহীত
আঞ্চলিক পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে দেশের উত্তর-পূর্বের শহর ডালিয়ানের অবস্থানকে মজবুত করতে বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপে বিমানবন্দর তৈরি করছে চীন। লিয়াওনিং প্রাদেশিক সরকারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ডালিয়ান জিনঝোয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ২০ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে কৃত্রিম দ্বীপের বুকে তৈরি হবে।
এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়ে ১২.৪৮ বর্গকিমি এবং জাপানের ওসাকা বিমানবন্দরের চেয়ে ১০.৫ বর্গকিমি বড় হতে চলেছে কৃত্রিম দ্বীপের উপর তৈরি করা হচ্ছে ওই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি। উল্লেখ্য, হংকং এবং ওসাকা, উভয় বিমানবন্দরই কৃত্রিম দ্বীপে তৈরি।
কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, ডালিয়ান জিনঝোয়ান বিমানবন্দর তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৪৩০ কোটি ডলার। ২০৩৫ সালের মধ্যে বিমানবন্দরটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলেও মনে করছেন কর্মকর্তারা।
অবস্থানগত কারণে চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর-পূর্বের শহর ডালিয়ান। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া, এই দুই দেশের সঙ্গে চীন ব্যবসা করে মূলত এই বন্দর শহরের মাধ্যমেই।
এভিয়েশন কনসালট্যান্সির প্রতিষ্ঠাতা লি হ্যানমিংয় জানান, ‘বন্দরনগরী ডালিয়ানের জনগণের জন্য এই বিমানবন্দর একটা বড় উপহার হতে চলেছে।’
প্রসঙ্গত, ডালিয়ানের জনসংখ্যা ৬০ লক্ষের বেশি। বোহাই স্ট্রেটের উত্তর প্রান্তে উপদ্বীপে অবস্থিত শহরটি তেল শোধনাগার, বন্দর, ব্যবসা এবং উপকূলীয় পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে অনেক দিন ধরেই।
আর তাই প্রতিবেশীদের সঙ্গে ব্যবসা মজবুত করতে এবং আঞ্চলিক পরিবহণ কেন্দ্র হিসেবে ডালিয়ানকে প্রাধান্য দিতে, সেই শহরের কাছেই ওই কৃত্রিম দ্বীপে বিমানবন্দর তৈরি করতে চাইছে চীন।
সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, কৃত্রিম দ্বীপে তৈরি হওয়া ডালিয়ান জিনঝোয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চারটি রানওয়ে এবং একটি নয় লক্ষ বর্গমিটারের টার্মিনাল থাকবে।
ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছে, উন্নত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিমানবন্দরটি আঞ্চলিক বিমান পরিবহন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই বিমানবন্দর দিয়ে প্রাথমিক ভাবে প্রতি বছর চার কোটি ৩০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। পরবর্তীকালে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে বছরে আট কোটি।
এয়ারপোর্টস কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের চিনা প্রতিনিধিদের দাবি, প্রতি বছর ১০ লক্ষ টন মাল ওই বিমানবন্দর দিয়ে রপ্তানি হবে।
প্রসঙ্গত, ডালিয়ানে আগে থেকেই একটি বিমানবন্দর রয়েছে। কয়েক দশক আগে সেটি তৈরি হয়েছিল। তখন সেই শহর জাপানিদের দখলে ছিল। বর্তমানে ওই বিমানবন্দর দিয়ে বছরে প্রায় সাত লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন বলে সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
তবে নতুন বিমানবন্দর সব দিক থেকেই পুরোনো বিমানবন্দরকে টেক্কা দেবে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও নতুন বিমানবন্দরটিকে নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, নতুন বিমানবন্দরটির আশপাশে অনেক পাহাড় রয়েছে, যে কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন বিমানচালকেরা। এমনকি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বিমানবন্দরে বিমান অবতরণ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দ্বীপের বিমানবন্দর কোনও সেতু দিয়ে ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে ভূমিকম্প, সুনামি বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
সেন্টার ফর এভিয়েশন এর তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার খরচ করে ২২টি নতুন বিমানবন্দর তৈরি করছে চীন।
এসবি