Logo
Logo

আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি হামলা : যুদ্ধ এবং দুঃখের বছর ২০২৪

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৩

গাজায় ইসরায়েলি হামলা : যুদ্ধ এবং দুঃখের বছর ২০২৪

ছবি : সংগৃহীত

যুদ্ধ এবং চরম দুঃখে-কষ্টে কেটে গেছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ২০২৪ সাল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের বর্বর হামলার মুখে গাজার সদ্য বিদায়ী বছর ছিল দুঃসহ যন্ত্রণার।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ নতুন বছর উদযাপন করছে আনন্দ-উদ্দীপনা ও নতুন আশায় বুক বেঁধে। সেখানে অবরুদ্ধ গাজার অত্যাচারিত মানুষগুলোর নতুন বছরের শুরুটা হয়েছে ইসরায়েলি হামলায় মৃত্যু, কষ্ট ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কষ্ট দিয়ে।

ছবি : সংগৃহীত

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার বিভিন্ন প্রতিবেদনের আলোকে সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে গাজায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে এক নজরে গাজার বর্তমান পরিস্থিতি-

বছরের প্রথম দিনেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে আরও অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে এখন অব্দি অন্তত ৪৫ হাজার ৫৪১ ফিলিস্তিনিকে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও এক লাখ ৮ হাজার ৩৩৮ জন।

এদিকে ভারী বৃষ্টিতে গাজার শরণার্থী শিবিরের শত শত তাঁবু প্লাবিত হয়ে গেছে। যা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর জন্য আরও কষ্ট বাড়িয়েছে। সেই সাথে ঠান্ডার প্রকোপে মারা যাচ্ছে গাজার শিশুরা। তাছাড়া ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে রেখেছে। এর মাধ্যমে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েল।

ছবি : সংগৃহীত

সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২৪ সালে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মোট ২৩ হাজার ৮৪২ জন নিহত এবং ৫১ হাজার ৯২৫ জন আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ২০২৪ সালে গাজায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪৬ হাজার ৩৭৬ জনে পৌঁছেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে, কারণ উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।

হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

বিগত অক্টোবর মাসে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে জাতিসংঘের ত্রাণ সংগঠন (ইউএনআরডব্লিউএ) নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেয়। যা গাজার প্রধান জীবনরক্ষাকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে স্বীকৃত। নতুন বছরের জানুয়ারির শেষদিকে নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হলে গাজা তার প্রধান সাহায্য সংস্থা হারাবে। এর ফলে খাদ্য, ওষুধ এবং জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সংকটে পড়বে গাজাবাসী।

ছবি : সংগৃহীত

গাজার উপর ইসরায়েলের এই গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার মুখে পড়েছে। এর প্রেক্ষিতে গত ২১ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে ইসরায়েল।

তবে এতকিছুর পরও, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ থামানোর কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা যুদ্ধবিরতির চেষ্টা বেশিরভাগ সময়েই ব্যর্থ হয়েছে। 

এদিকে আন্তর্জাতিক মহলের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ থামাতে বা কমাতে ব্যর্থ হয়েছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে রাজনৈতিক এবং সামরিক সমর্থন দেওয়ার কারণে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলকে ২০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের জন্য করা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছে। বিশেষ করে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনার প্রতিবেদনগুলো এড়িয়ে গিয়েছে তারা।

নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বছর পার করলেও নতুন বছরের শুরুতে ভয়াবহ এই যুদ্ধ শেষ হবে এমনটাই আশা করছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার অবশিষ্ট জনগণ।

এসবি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর