Logo
Logo

আন্তর্জাতিক

২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নির্বাচন

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:২৩

২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নির্বাচন

ছবি : সংগৃহীত

২০২৫ সালে ভোটারদের মুখোমুখি হতে চলা ক্ষমতাসীনরা নিশ্চয়ই নানা আশঙ্কায় রয়েছেন। নতুন বছরের সাথে সাথে শুরু হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াই। সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে মোট ৮০টি দেশের চার বিলিয়ন মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদেরকে ভোট প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন। আবার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বিদ্রোহ-গণঅভ্যুত্থানের মুখে অনেক নেতাদের পতনও ঘটেছে।

এবার দেখা যাক, সদ্য বিদায়ী বছরের মতো ২০২৫ সালেও সেই প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ন মনোভাব বজায় থাকে কিনা। যদিও ২০২৪ সালের তুলনায় অনেক কম দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তবুও এসব নির্বাচনের ফলাফল নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক এবং সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করবে।

২০২৫ সালে অনেক দেশেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে ১০টি দেশের ওপর বিশ্ববাসীর বিশেষ নজর থাকবে। এই তালিকা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত সপ্তাহে ফরাসি সরকারের পতনের কারণে ফ্রান্সে ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে পার্লামেন্ট নির্বাচন এবং সম্ভবত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সরকার পতনের কারণেও কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে অথবা নিয়মিত সংসদীয় কৌশল বা অভ্যুত্থানের কারণেও কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এখন পর্যন্ত তারিখ ধার্য করা ২০২৫ সালের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নির্বাচন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক- 

  • বেলারুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন :

কখনও কখনও নির্বাচন শুরু থেকেই মরীচিকা। আগামী ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বেলারুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তার উদাহরণ।

১৯৯৪ সালে বেলারুশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। পাঁচ বছর আগে, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে বেলারুশিয়ানরা বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকে অবসরে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু লুকাশেঙ্কো এত দ্রুত অবসর নিতে আগ্রহী নন। বেলারুশের নির্বাচন কমিশন ষষ্ঠবারের মতো বিপুল ভোটে জয়ীর নাম হিসেবে লুকাশেঙ্কোর নামই ঘোষণা করেছিল। 

এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রকৃত বিজয়ী বলা হয় সোয়েতলানা তিখানোভস্কায়াকে। তিনি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে প্রচার শুরু করেছিলেন। তিনি লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তবে নির্বাচনে লুকাশেঙ্কোর জয় লাভের পর তাকে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। ২০২০ সালের নির্বাচন ছিল বেলারুশে সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচন। এরপরই বিক্ষোভের ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। নড়েচড়ে বসে নিরাপত্তা বাহিনী।

লুকাশেঙ্কো রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সহায়তায় তার বিরোধীদের সরিয়ে নিজ পথ কাঁটামুক্ত করেছিলেন। এই পদক্ষেপটি বেলারুশকে রাশিয়ার কাছে কার্যত de facto vassal  বা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েও বাস্তবে রাশিয়ার আধিপত্যের অধীনে থাকতে বাধ্য করেছে।

চলতি বছর লুকাশেঙ্কো তার সপ্তম মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ প্রতিযোগিতায় তিনি কোন বিষয়কেই ভাগ্য বা সুযোগের উপর ছেড়ে দিচ্ছেন না। যে রাজনৈতিক দলগুলো তাকে সমর্থন দিচ্ছে শুধু তাদেরকেই তিনি কাজ করতে দিচ্ছেন।

এছাড়া বিতর্কিত এক আইন পাস করেছেন লুকাশেঙ্কো। যেখানে বলা আছে, তিনি যদি কখনও রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগও করেন, তবুও তিনি আজীবন দায়মুক্তি এবং সরকারী সংস্থাগুলোতে উদার প্রবেশাধিকার পাবেন।

এই আইনে বিদেশে বসবাসরত বিরোধী নেতাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে আইনের এই ধারাটি সোয়েতলানা তিখানোভস্কায়া লক্ষ্য করে করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সুতরাং, সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এখনও অব্দি ৭০ বছর বয়সী লুকাশেঙ্কো আবারও প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন বলেই সম্ভাবনা রয়েছে।

  • ইকুয়েডরের সাধারণ নির্বাচন :

আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইকুয়েডরের সাধারণ নির্বাচন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া ইকুয়েডরের জাতীয় নির্বাচনে পুনর্নির্বাচন চাইছেন। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নির্বাচিত সরকার নেতা নোবোয়া। গত বছর তিনি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হওয়ার পর তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আগাম নির্বাচনের ডাক দেওয়ায় এই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় তার।

দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে ইকুয়েডরে হত্যাকাণ্ডের হার সবচেয়ে বেশি এই সংগঠিত অপরাধী দলগুলোর সহিংসতা নোবোয়াকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য করেছে। এবারের নির্বাচনে নোবোয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লুইসা গঞ্জালেজ। বর্তমানে বেলজিয়ামে নির্বাসিত এই নেতা ২০২৩ সালের রান-অফে নোবোয়ার কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি।

ইকুয়েডরের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল স্বার্থের সংঘাতের কারণে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ী জ্যান টপিককে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। যদি কোন প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পায় অথবা ৪০ শতাংশ ভোট না পায় এবং রানার-আপের চেয়ে দশ পয়েন্ট এগিয়ে থাকে, তাহলে ১৩ এপ্রিল ইকুয়েডরে রান-অফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

  • কসোভোর সংসদীয় নির্বাচন : 

আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে পারে কসোভোর পার্লামেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশটির ১৪ বছরের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। প্রধানমন্ত্রী আলবিন কুর্তির লিভিজা ভেটেভেন্ডোজে (এলভিভি), বা স্ব-সংকল্প পার্টি, প্রথম কসোভান পার্টি হতে চলেছে যা অফিসে চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ করবে।

কসোভোতে ভোট খুব কমই আছে, তবে এলভিভি সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও এই নির্বাচনে বহু আসন জিততে পারে বলে মনে হচ্ছে। 

২০২৫ সালের নির্বাচন কসোভোর প্রতিবেশী দেশ সার্বিয়ার সাথে অব্যাহত উত্তেজনার ছায়ায় অনুষ্ঠিত হবে। যা জোর দিয়ে বলে যে কসোভো একটি স্বাধীন দেশ নয় বরং একটি সার্বিয়ান প্রদেশ।

জাতিগতভাবে সার্বিয়ানরা উত্তর কসোভোতে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর মিত্রোভিকায় ইবার নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতু গোটা দেশকে বিভক্তকারী উত্তেজনার প্রতীক। ২০১১ সাল থেকে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ সার্বিয়ানরা বলে যে এটি খুলে দিলে আলবেনীয়রা তাদের আক্রমণ করতে পারবে। ইইউ এবং ন্যাটো দীর্ঘদিন ধরে কসোভো এবং সার্বিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা করার চেষ্টা করেছে। তবে খুব বেশি সাফল্য পায়নি। শুধু দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী লক্ষ্যই নয়, রাশিয়াও সার্বিয়ার দাবিকে সমর্থন করে। ফলে এই দুই অঞ্চলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনার মাঝেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এবারের নির্বাচন।

  • জার্মান বুন্ডেসটাগ নির্বাচন :

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। জার্মানির নির্বাচন ২০২৫ সালের সবচেয়ে ফলপ্রসূ ভোট হতে পারে। জার্মানরা নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে কারণ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস, গ্রিন পার্টি এবং ফ্রি ডেমোক্র্যাটদের সমন্বয়ে গঠিত ক্ষমতাসীন জোট গত নভেম্বরে পরস্পরবিরোধী নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিগত শত্রুতা এবং সাম্প্রতিক রাজ্য (ল্যান্ডার) নির্বাচনে খারাপ পারফরম্যান্সের প্রেক্ষাপটে ভেঙে পড়েছিল।

এ নির্বাচন সংক্রান্ত জরিপে মধ্য-ডানপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটদেরকে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে মনে করো হচ্ছে। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন ফ্রিডরিখ মার্টজ। প্রতি তিনজন জার্মান ভোটারের মধ্যে একজনের সমর্থন রয়েছে তাদের। কট্টর ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) ১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। যেখানে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা ১৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস নির্বাচনে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্ব দেবেন। কারণ জনপ্রিয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস দলের নেতৃত্বের জন্য তাকে চ্যালেঞ্জ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জরিপে গ্রিন পার্টি মাত্র ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। নতুন বুন্ডেসটাগে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়ায় জার্মানির পরবর্তী জোট সরকার নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। 

ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটরা চরম ডানপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এএফডির সাথে জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। তবে যে কোনো জোটের রূপরেখা নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফল এবং ফ্রি ডেমোক্র্যাটদের মতো ছোট দলগুলো বুন্ডেসটাগে বসার জন্য পর্যাপ্ত ভোট পায় কিনা তার ওপর।

  • অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন :

আগামী ১৭ মে ও ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন। অস্ট্রেলিয়ানরা ২০২৫ সালে তাদের জাতীয় সরকার নির্বাচন করার জন্য দুটি সুযোগ পাবে। আগামী ১৭ মে'র মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সিনেটের ৭৬টি আসনের প্রায় অর্ধেক আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হাউসের ১৫০ টি আসনের সবকটিই ২৭ সেপ্টেম্বরের আগে নির্ধারণ করা হবে। 

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ আশা করছেন, ভোটাররা তার মধ্য-বামপন্থী লেবার পার্টিকে নতুন করে ম্যান্ডেট দেবে। তবে সেটা নাও হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যালবানিজের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা কমে গেছে এবং মধ্য-ডানপন্থী লিবারেল পার্টির নেতা পিটার ডাটনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, লিবারেল পার্টিকে ডানপন্থী কৃষিভিত্তিক ন্যাশনাল পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ করা লিবারেল ন্যাশনাল জোট জরিপে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু দুই দলের নেতা নির্বাচনে কিছু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আসছেন।

অ্যালবানিজ ‘অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যৎ নির্মাণ’ স্লোগানে এগিয়ে চলেছেন। যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মসূচিতে একটি উচ্চাভিলাষী ব্যয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরে। তিনি আশা করছেন যে, ভোটাররা জাতীয় আবাসন সংকটের সময়ে তার একটি দামী সমুদ্রতীরের বাড়ি কেনার ঘটনায় সৃষ্ট বিতর্ক এবং ২০২৪ সালের শরৎকালে তার এবং তার সরকারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে সরকারী কাজে যাওয়ার সময় বিমানের টিকিট বুকিংয়ের নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ ভুলে যাবে।

এদিকে ডাটন জ্বালানি, আবাসন এবং জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ‘অস্ট্রেলিয়াকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এর আগে সরকারে থাকাকালে বিতর্কিত বক্তব্য ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ড করে অনেক অস্ট্রেলিয়ানকে ভুল পথে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। তবে, অ্যালবানিজ বা ডাটন কেউই মার্কিন-অস্ট্রেলিয়ান সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের প্রস্তাব দিচ্ছেন না।

  • গ্যাবনিজ সাধারণ নির্বাচন :

আগস্ট মাসে গ্যাবনের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে, এর নির্দিষ্ট কোন তারিখ এখনও নির্ধারিত হয় নি। ২০২৫ সালে গ্যাবনের জনগণ গণতন্ত্রের সুযোগ পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ৫৬ বছর ধরে প্রথমে ওমর বঙ্গো এবং তারপরে তার পুত্র আলী বঙ্গো দেশটি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আলী বঙ্গো ২০০৯ সালে তার বাবার মৃত্যুর পরে এবং তারপরে আবার ২০১৬ সালে অনিয়মের মাধ্যমে ভোটে নির্বাচনে জয়ী হন। ২০২৩ সালের আগস্টে তিনি আবার নির্বাচনে দাঁড়ান। গ্যাবনের নির্বাচন কমিশন তার পুনঃনির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই দেশটির অভিজাত প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্যরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ২০২০ সালের পর মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় এটি সপ্তম অভ্যুত্থান।

২০২৩ সালের নভেম্বরে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা ২০২৫ সালের আগস্টে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেয়। গত নভেম্বরে গ্যাবনিজ নাগরিকরা নতুন সংবিধানের পক্ষে বিপুল ভোট দেয়। এই সংবিধানে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ সাত বছর করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিদের দুটি মেয়াদে সীমাবদ্ধ করে, পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রপতির উত্তরসূরি হতে বাঁধা দেয় এবং রাষ্ট্রপতিদের কমপক্ষে একজন গ্যাবন-বংশোদ্ভূত পিতামাতা এবং গ্যাবনিজ পত্নী থাকা প্রয়োজন। মনে করা হয়, এই শেষোক্ত প্রয়োজনীয়তাটি সম্পূর্ণরূপে আলি বঙ্গোকে লক্ষ্য করা হয়েছিল। কেননা তার স্ত্রী ফরাসি।

নতুন সংবিধান সামরিক জান্তার নেতা জেনারেল ব্রাইস ওলিউগি এনগুয়েমাকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোন বাঁধা দেয়নি। উনচল্লিশ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় এখনও নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা তা জানাননি। তবে তিনি প্রার্থী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গ্যাবন ওপেকের একটি তেল সমৃদ্ধ সদস্য দেশ, যার মাথাপিছু জিডিপি আফ্রিকার মধ্যে সর্বোচ্চ। এবারের নতুন গ্যাবনিজ সরকার দেশের ব্যাপক দুর্নীতি হ্রাস করবে কিনা এবং দেশের তেল সম্পদের সুবিধাগুলো সামগ্রিকভাবে সমাজের কাছে সরাসরি উন্মুক্ত করবে কিনা তা দেখার বিষয়।

  • বলিভিয়ার সাধারণ নির্বাচন :

আগামী ১৭ আগস্ট বলিভিয়াপর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে নির্বাচন করেছিল বলিভিয়ানরা। তখন তারা বামপন্থী মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম (এমএএস) পার্টির মধ্যপন্থী লুইস আরসকে নির্বাচিত করেছিল। অনেক বলিভিয়ান আশা করেছিলেন যে, আরস তার গুরু ইভো মোরালেসের রাষ্ট্রপতির পাথুরে সমাপ্তির পরে বলিভিয়ার সংস্কার করবেন। 

ইভো মোরালেস বলিভিয়ার প্রথম আদিবাসী বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মোরালেস ২০০৫ সালে প্রথম নির্বাচিত হন এবং দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পরবর্তী ১৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। অবশেষে ২০১৯ সালে জালিয়াতির করে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার অভিযোগে গণবিক্ষোভের মুখে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

১২ বছর মোরালেসের অর্থমন্ত্রী থাকলেও লুইস আরস ক্ষমতায় আসার পর দুজনের মধ্যে তিক্ত মনোমালিন্য হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে লুইসকে এমএএস পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং গত সেপ্টেম্বরে মোরালেস সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত করেন যা ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠে। গত নভেম্বরে বলিভিয়ার একটি আদালত মোরালেসকে পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কারণ তিনি ইতোমধ্যে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আরস আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারলেও সে জনপ্রিয় নয়। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি এবং মোরালেস ও অন্যরা জনগণের আনুকূল্য ফিরে পেতে আরস একটি 'স্ব-অভ্যুত্থান' করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে এমএএস পার্টি নিজেদের বিপক্ষেই বিভক্ত হয়ে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে, বলিভিয়ার অন্য কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সুযোগ পেলে বলিভিয়ার জনগণের সমর্থন পাবে কি না এবং কার্যকরভাবে শাসন করতে পারবে কিনা।

  • তানজানিয়ার সাধারণ নির্বাচন :

তারিখ নির্ধারিত না হলেও আগামী অক্টোবরে তানজানিয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আফ্রিকার পঞ্চম জনবহুল এই দেশটিতে ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। তবে এর রাজনীতিতে দীর্ঘ ছয় দশক ধরে আধিপত্য বিস্তার করছে চামা চা মাপিন্দুজি (সিসিএম) পার্টি।

২০১৫ সালে জন মাগুফুলি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটির রাজনীতির উন্মুক্ততা থেমে যায়। তিনি তার রাজনৈতিক বিরোধীদের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের উপরও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। মাগুফুলি ২০২১ সালে মারা যান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন তানজানিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান। ‘৪ আর’ উদ্যোগের ব্যানারে (পুনর্মিলন, স্থিতিস্থাপকতা, সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণ)- তিনি প্রাথমিকভাবে মাগুফুলির অনৈতিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে তার সরকার ব্যবস্থা শুরু করেছিলেন।

বিরোধী দলগুলোকে জনসভা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং প্রেসের বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক উন্মুক্ততার প্রতি অঙ্গীকার দ্রুত ম্লান হয়ে যায়। তার সরকারে কর্মীদের অস্থিরতা এবং প্রধান বিরোধী দল চাদেমা জনপ্রিয়তা অর্জনের সাথে সাথে দমন-পীড়ন ফিরে আসে। বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, একজনকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি পুলিশ রাজনৈতিক সমাবেশগুলো ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করেছিল।

বর্তমান সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার ঝড় তুলেছে। সেই সমালোচনা এখনও দমন-পীড়ন শিথিল করতে পারেনি। সব লক্ষণই ইঙ্গিত দিচ্ছে সামিয়া সিসিএমের প্রার্থী হিসেবে পুনর্নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চাদেমার উপনেতা টুন্ডু লিসু। পেশায় আইনজীবী হিসেবে ২০১৭ সালে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর তিন বছর তিনি বেলজিয়ামে নির্বাসিত জীবন কাটান। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে এবং চাদেমার চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ফলে তিনি সামিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

  • কানাডার ফেডারেল নির্বাচন :

চলতি বছরের ২০ অক্টোবর বা তার আগে অনুষ্ঠিত হতে পারে কানাডার ফেডারেল নির্বাচন। ২০২৫ সালে কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। যেখানে তিনজনের মধ্যে একজন কানাডিয়ান তার কাজের পারফরম্যান্সকে অনুমোদন করেছেন এবং অন্যদিকে তার সহকর্মী লিবারেল পার্টির কিছু সদস্য তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে তার সমস্যার একটা বড় অংশ হলো পরিচিতি। ২০১৫ সাল থেকে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক কানাডিয়ান এটা বিশ্বাস করেন যে, কানাডা দেশের সমস্যাকে অবহেলা করে অনেক বেশি অভিবাসী নিয়েছে। সাথে শিখ নেতা হরদ্বীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ট্রুডো ও ভারত সরকারের টানাপোড়েন তো আছেই!

এদিকে ট্রুডোর ক্রমহ্রাসমান জনপ্রিয়তায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি এবং এর নেতা পিয়েরে পোইলিয়েভরে। ২০২১ সালের কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি দেশব্যাপী সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। তবে, কানাডার নির্বাচনী ব্যবস্থার অস্পষ্টতার অর্থ হল লিবারেলরা সর্বাধিক আসন জিতেছে। আগাম জনমত জরিপ বলছে, এবার কনজারভেটিভরা সবচেয়ে বেশি ভোট এবং সবচেয়ে বেশি সংসদীয় আসন দুটোই পাবে। 

আলবার্টায় বেড়ে ওঠা পোইলিয়েভরে ট্রুডোর নীতির বিস্তারিত নীতি প্রকাশের পরিবর্তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আক্রমণ করেছেন। কানাডার আইন অনুযায়ী ২০ অক্টোবরের মধ্যে ফেডারেল নির্বাচন হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা আরও আগে বা পরে হতে পারে। বিরোধী দলগুলো এই বসন্তের শুরুতেই নতুন নির্বাচন দিতে পারে। একই সঙ্গে দীপাবলির হিন্দু উৎসবের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা পিছিয়ে ২৭ অক্টোবর করা হতে পারে।

  • হন্ডুরাসের সাধারণ নির্বাচন :

আগামী নভেম্বরের মধ্যে মধ্য আমেরিকার দেশ হন্ডুরাসের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে হন্ডুরাস জিওমারা কাস্ত্রোকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। তবে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তিনি অপরিচিত ছিলেন না। তার স্বামী ম্যানুয়েল জেলায়া ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

কাস্ত্রো বামপন্থী লিবার্টি অ্যান্ড রিফাউন্ডেশন (লিব্রে) পার্টির প্রার্থী ছিলেন। তার স্বামীকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে হন্ডুরাসের শাসন পরিচালনা করছিল ন্যাশনাল পার্টি। তিনি এই নীতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর অর্থ ছিল মাদক পাচার মোকাবেলা, দুর্নীতি দমন এবং নারীর অধিকার সম্প্রসারণ।

কাস্ত্রোর পূর্বসূরি হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজের বিরুদ্ধে মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি মাদকের অভিযোগে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে দুই বছরে তিনি অপরাধ হ্রাস, সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কিছুটা সাফল্য অর্জন করেছেন। তবে দুর্নীতি তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি তিনি এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেননি। 

২০২৪ সালে তার ভগ্নিপতির একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে যেখানে তার ভগ্নিপতি জেলায়া রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তার জন্য ঘুষ পেতে মাদক পাচারকারীদের সাথে আলোচনা করছেন। এরপর কাস্ত্রো ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটানোর অভিযোগ আনেন এবং যুক্তরাষ্ট্র-হন্ডুরাসের প্রত্যর্পণ চুক্তির অবসান ঘটান।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বহিষ্কারের অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্র-হন্ডুরাস সম্পর্ক এবং হন্ডুরাসের অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলতে পারে।

সূত্র : কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস।

এসবি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর