৬ হাজারেরও বেশি বন্দিকে মুক্তি দিল মিয়ানমার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০২
ছবি : সংগৃহীত
ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতার ৭৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি সাধারণ গণ-ক্ষমার অংশ হিসাবে ৬ হাজারেরও বেশি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এছাড়া, অন্যান্য বন্দির সাজা কমিয়ে দিয়েছে। শনিবার (৪ জানুয়ারি) তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
রোববার (৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা ভয়েস অব আমেরিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালিত এমআরটিভি টেলিভিশন জানায়, সামরিক সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারের ৫ হাজার ৮৬৪ জন বন্দিকে এবং সেই সাথে ১৮০ বিদেশিকে সাধারণ ক্ষমা মঞ্জুর করেছেন।
বিদেশি বন্দিদের নির্বাসিত করা হবে। মিয়ানমারে ছুটির দিন এবং অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপলক্ষ্যগুলোতে বন্দিদের গণ-মুক্তি দেওয়া সাধারণ ঘটনা।
মুক্তির শর্তে সতর্ক করে দেওয়া হয় যে, যদি মুক্তি প্রাপ্ত বন্দিরা আবার আইন লঙ্ঘন করেন, তবে তাদের মূল শাস্তির বাকি অংশসহ নতুন যে কোনো শাস্তি গ্রহণ করতে হবে।
এই বন্দিরা হলেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকার অং সান সুচির কাছ থেকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে সেনা শাসনের বিরোধিতা করার জন্য কারাগারে বন্দি শত শত রাজনৈতিক বন্দিদের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।
সেই ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অহিংস প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল, যা পরবর্তীতে একটি বিস্তৃত সশস্ত্র সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।
একটি পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিন অং হ্লাইং ১৪৪ জন বন্দির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে কমিয়ে ১৫ বছরের কারাদণ্ডে পরিণত করেছেন। প্রতিবেদনে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অন্যান্য সকল বন্দির শাস্তি এক-ষষ্ঠাংশ কমিয়ে দেওয়া হবে।
তবে যারা বিস্ফোরক পদার্থ আইন, অবৈধ সংগঠন আইন, অস্ত্র আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দোষী সাব্যস্ত, তাদের শাস্তি কমানো হবে না। এই সকল আইন প্রায়শই সামরিক শাসনের বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
সামরিক সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন এক অডিও নোটে সাংবাদিকদের জানান, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে প্রায় ৬০০ জন রয়েছে যারা মিয়ানমারের দণ্ডবিধির ৫০৫(এ) ধারায় অভিযুক্ত, যা জনসাধারণের মধ্যে অস্থিরতা বা আতংক সৃষ্টি করা বা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।
তিনি বলেন, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে কাচিন রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী খেত অংও রয়েছেন। খেত অংকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পরপরই গ্রেপ্তার করে এবং তাকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে দুর্নীতির অভিযোগে ১২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
শনিবার থেকে বন্দিদের মুক্তি দেওয়া শুরু হলেও শেষ হতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের বাসগুলো ইনসেইন কারাগার থেকে বন্দিদের প্রায় সাড়ে ১১টায় বের করে নিয়ে যায়, যেখানে আটক ব্যক্তিদের বন্ধু ও পরিবার সদস্যরা সকাল থেকেই ঘোষিত মুক্তিপ্রাপ্তদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
বন্দি মুক্তির মধ্যে অং সান সুচিকে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ইঙ্গিত ছিল না। তিনি সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রায় পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। ৭৯ বছর বয়সী অং সান সুচি সামরিক বাহিনী কর্তৃক আনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা অনুযায়ী ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
তার সমর্থক এবং স্বাধীন বিশ্লেষকরা বলেন, তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো তাকে অসম্মান করার এবং সেনাবাহিনীর প্রতিশ্রুত নির্বাচনে তাকে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রেখে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। নির্বাচনের জন্য এখনও কোনও তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
একটি অধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা, অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস-এর মতে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে রাজনৈতিক অভিযোগে ২৮ হাজার ৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এএপিপি জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ২১ হাজার ৮৯৯ জন এখনও বন্দী। সংস্থাটি বলছে, একই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৬ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এই তালিকায় যুদ্ধে সংঘটিত সকল হতাহতের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত নয়।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার ১৯ শতকের শেষ দিকে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয় এবং ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী দেশটি আবার স্বাধীনতা ফিরে পায়।
রাজধানী নাইপিতাওতে, সিটি হলে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক সরকার বার্ষিকী উদযাপন করে।
এসবি