কানাডার ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী
কর কমানো ও সমকামী বিয়ে বাতিল নিয়ে আলোচনায়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৮
পিয়েরে পোইলিয়েভর। মাত্র ২০ বছর বয়সে রচনা প্রতিযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কী কী করবেন তার একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই কিশোর পোলিয়েভর এখন কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ নেতা।
কিশোর বয়সে দেওয়া পরিকল্পনার বদৌলতে তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে। ওই রচনা প্রতিযোগিতায় তিনি দেশের জন্য করহার কমানো এবং ছোট আকারের সরকার ও মন্ত্রিপরিষদের গঠনসহ নানা দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা এক ডলার একজন রাজনীতিবিদের ব্যয় করা ডলারের চেয়ে বেশি উৎপাদনশীল।’
এখন ৪৫ বছর বয়সে এসে সেই ধারণাই যেন তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর পোইলিয়েভর তার সেই স্বপ্ন ও দর্শন বাস্তবায়নের আরও এক ধাপ কাছাকাছি। জর্ডান পিটারসনকে দেওয়ার এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান তিনি।
গেল কয়েকমাসের জনমত জরিপে দেখা গেছে, কানাডার কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতাসীন লিবারেলদের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। এই মুহূর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কনাজারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতে সরকার গঠন করবে।
ইতোমধ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে শিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কানাডার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন পোইলিয়েভর। কানাডায় ‘সাধারণ জ্ঞানের রাজনীতি’ ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
পোইলিয়েভর কানাডার স্থবির অর্থনীতি ও আবাসন সংকটে হতাশ কানাডিয়ানদের জন্য ট্রুডোর ‘কর্তৃত্ববাদী সমাজতন্ত্র’ নীতির একটি বিকল্প ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত।
তবে এই নির্বাচনে জয় পোইলিয়েভরকে জনপ্রিয় ডানপন্থী নেতাতে পরিণত করবে, যারা পশ্চিমে ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাত করেছে। যদিও তার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনা করা হচ্ছে। তার সমর্থকদের মধ্যে ইলন মাস্কসহ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আছেন। তবুও পোইলিয়েভরের গল্পটা পুরোপুরি কানাডিয়ান।
কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় আলবার্টা প্রদেশে ১৬ বছর বয়সী এক মায়ের ঘরে জন্ম হয় তার। তার মা তাকে দুজন স্কুল শিক্ষকের কাছে দত্তক দিয়ে দেন। তিনি ওই পরিবারের সাথে ক্যালগরির উপকণ্ঠে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বেড়ে ওঠেন।
২০২২ সালে ম্যাকলিন’স ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি, পরিবার ও সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী ও উদার হওয়া আমাদের সবচেয়ে বড় সামাজিক সুরক্ষাজাল। এটাই আমার শুরুর দিকের সূত্র।’
কিশোর বয়সেই পোইলিয়েভর রাজনীতিতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি স্থানীয় কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। পোইলিয়েভর ক্যালগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়াশোনার সময় স্টকওয়েল ডের সাথে দেখা করেন। ডে কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পারের অধীনে ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ওই সময় স্টকওয়েল ডে কানাডিয়ান অ্যালায়েন্সের জন্য নেতৃত্ব খুঁজছিলেন। তার পক্ষে ক্যাম্পাসে প্রচারে সহায়তার জন্য পোইলিয়েভরকে নিযুক্ত করেছিলেন।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডে বলেন, ‘শুরু থেকেই পোইলিয়েভর আমাকে মুগ্ধ করেছেন। তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণ ছিল। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের অসাধারণ শক্তি তার মধ্যে ছিল।
‘স্কিপি’ নামে পরিচিত পোইলিয়েভর তার ভাষণ ও দৃঢ় রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য পরিচিত। তিনি ২০০৪ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে অটোয়ায় একটি আসনে জয় লাভ করেন। যা তাকে সেই সময়ের সর্বকনিষ্ঠ নির্বাচিত কনজারভেটিভদের একজন করে তুলেছিল।
কনজারভেটিভ নেতা হিসেবে, তিনি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন। এতে তাকে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ‘ওয়াকো’ বলায় গত এপ্রিলে হাউস অব কমন্স থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
মন্ট্রিল গেজেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোইলিয়েভর বলেন, আমি সোজা কথার ভক্ত। ভদ্রতা যখন সত্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তখন আমি সত্যকে বেছে নিই। আমি মনে করি আমরা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে খুব ভদ্র ছিলাম।’
সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, কানাডিয়ানরা ট্রুডোর প্রগতিশীল রাজনীতির ব্র্যান্ড থেকে পরিবর্তন হিসেবে বিরোধীদলীয় নেতার বার্তার প্রতি উন্মুক্ত থাকলেও তাদের অর্ধেকেরও বেশি ট্রুডোর প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন।
তিনি ২০২১ সালের ‘ফ্রিডম কনভয়’ বিক্ষোভের সময় যারা ভ্যাকসিন ম্যান্ডেটের প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের সমর্থন করেছিলেন।
পোইলিয়েভর ‘কানাডার ইতিহাসে অপরাধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ক্র্যাকডাউন’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং অপরাধীদের কারাগারে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এছাড়া, পোইলিয়েভর ২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে সমকামী বিবাহকে বৈধতা দেওয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে এটি আইন করে বন্ধ করে দেব।
গত জুনে পোইলিয়েভর বলেন, ‘আমি একটি ছোট সরকারের নেতৃত্ব দেব যা তার নিজের কাজ।’
এদিকে চলতি মাসের শেষের দিকে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর কানাডাও চড়া শুল্কের হুমকির মুখে পড়বে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্ক একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের জবাবে পোইলিয়েভর ‘কানাডা সবার আগে’ রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি আপাতত ‘কানাডিয়ান স্বপ্ন’ পুনরুদ্ধারের দিকেই মনোনিবেশ করছেন।
এসবি/ওএফ/এনজে