ভারতের প্রয়াগরাজে শুরু হলো মহা কুম্ভ উৎসব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৭

ছবি : সংগৃহীত
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহর প্রয়াগরাজে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান মহা কুম্ভ উৎসব। এদিন দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ভক্ত, সাধু এবং পূর্ন্যার্থী নারী ও পুরুষ মহা কুম্ভ মেলার কার্যক্রম শুরু করতে জমায়েত হয়েছেন।
পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা ভয়েস অব আমেরিকা ও এপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ উৎসবে ছয় সপ্তাহ ধরে হিন্দু তীর্থযাত্রীরা তিনটি পবিত্র নদী– গঙ্গা, যমুনা এবং পৌরাণিক সরস্বতীর সংযোগস্থলে সমবেত হবেন। সেখানেই তারা ব্যাপক বিস্তৃত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এটা হচ্ছে হিন্দু দর্শনের মতে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের আশায় যাত্রা শুরু। যার ভেতর দিয়ে পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তিলাভ আসবে বলে মনে করেন তারা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নদী পূজা করে এবং তাদের বিশ্বাস গঙ্গা ও যমুনার উপরে আর কিছু নেই। তাদের বিশ্বাস নদীতে ডুব দিলে আত্মশুদ্ধি ঘটবে এবং অতীতের পাপমোচন হবে। বিশেষত শুভ দিনগুলোতে তাদের পুনর্জন্ম থেকে মুক্তির প্রক্রিয়া শেষ হবে। আর এর জন্য সবচেয়ে শুভ দিনগুলো আসে ১২ বছর পরপর চক্রাকারে মহা কুম্ভ মেলা বা কলস উৎসবের সময়।
এই উৎসবটি অন্তত মধ্যযুগ থেকে শুরু হয়েছে যা তিনটি পবিত্র নদীর সংযোগস্থলে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হিন্দু সাধু সন্ত বা সাধু পুরুষ এবং অন্যান্য তীর্থযাত্রীরা আনুষ্ঠানিকভাবে পর পর কয়েকবার স্নান করেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে, পৌরাণিক সরস্বতী নদী একসময় হিমালয় থেকে প্রয়াগরাজের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা ও যমুনার সাথে মিলিত হয়েছিল।
হিন্দু প্রথায় বলা হয়ে থাকে এই উৎসবের সূত্র বা শেকড় হচ্ছে দেবতা বিষ্ণু রাক্ষসদের কাছ থেকে অমরত্বের অমৃতসহ একটি সোনার কলসি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, সেই অমৃতের কয়েক ফোঁটা প্রয়াগরাজ, নাসিক, উজ্জয়িনী এবং হরিদ্বার শহরে পড়েছিল। সে কারণেই ঐ চারটি জায়গায় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জ্যোতিষশাস্ত্রের নির্ধারিত তারিখে ঐ চারটি তীর্থস্থানের একটিতে প্রতি তিন বছর পরপর কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবারের উৎসব তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ। এই উৎসবটির একটি ছোট সংস্করণ, যা অর্ধ কুম্ভ বা আধা কুম্ভ নামে পরিচিত সংগঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে । সেখানে ২৪ কোটি দর্শনার্থী অংশগ্রহণ করেছিল। সবচেয়ে ব্যস্ততম দিনে প্রায় পাঁচ কোটি দর্শনার্থী ধর্মীয় আচারের মধ্যদিয়ে স্নানে অংশ নিয়েছিলেন।
নদীর তীর বরাবর একটি বিস্তীর্ণ এলাকাকে অসংখ্য তাঁবু খাঁটিয়ে একটি শহরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে ৩ হাজারের বেশি রান্নাঘর এবং ১ লক্ষ ৫০ হাজার বাথরুম। চল্লিশ বর্গকিলোমিটার (১৫ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে তাঁবুর শহরটিকে ২৫টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ঐ শহরটিতে আবাসন, রাস্তা, বিদ্যুৎ ও পানি, যোগাযোগ টাওয়ার এবং ১১টি হাসপাতাল রয়েছে। শহরের দেয়ালে হিন্দু ধর্মগ্রন্থের কাহিনী অবলম্বনে আঁকা হয়েছে মিউরাল।
ভারতীয় রেল নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি ধর্মবিশ্বাসীদের চলাচলের জন্য ৯০টিরও বেশি বিশেষ ট্রেন চালু করেছে যা উৎসব চলার সময়ে প্রায় ৩ হাজার ৩০০টি ট্রিপ করবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নগরীতে প্রায় ৫০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
ভারতের ১৪২ কোটির জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিন্দু। অতীতেও ভারতের নেতারা দেশটির হিন্দু জনগোষ্ঠীর সাথে তাদের সম্পর্ক জোরদার করার জন্য এই উৎসবকে ব্যবহার করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এই উৎসব হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রচারণার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মোদী ও তার দলের কাছে ভারতীয় সভ্যতা হিন্দু ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যদিও সমালোচকরা বলছেন যে দলটির দর্শন হিন্দু আধিপত্যবাদের মাঝে নিহিত।
এই উৎসব ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমর্থনের জন্য হিন্দু সাংস্কৃতিক প্রতীক প্রচারের অতীত রেকর্ডকে আরও জোরদার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক কুম্ভমেলার জমায়েতও বিতর্কে জড়িয়েছে।
মোদী সরকার ২০১৯ সালের উৎসব এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী মুসলিম নাম থেকে হিন্দু নাম পরিবর্তনের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে শহরের নাম মুঘল আমলের এলাহাবাদ থেকে প্রয়াগরাজে পরিবর্তন করেছিল এবং ঐ নির্বাচনে তার দল জয়লাভ করে।
এর আগে, কোভিড মহামারির সময় ২০২১ সালে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ধর্মীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে তার সরকার হরিদ্বারে উৎসব বাতিল করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
এসবি