Logo

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের জন্য বাইডেনের চিঠি, কি বার্তা রেখেছেন তিনি

Icon

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪২

ট্রাম্পের জন্য বাইডেনের চিঠি, কি বার্তা রেখেছেন তিনি

ছবি : সংগৃহীত

দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ওভাল অফিসে প্রথমদিনের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এসময় পূর্বসূরী জো বাইডেনের রেখে যাওয়া একটি চিঠি খুঁজে পান তিনি।

ওভাল অফিসের রেজোলিউট ডেস্কে বসে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার সময়, রেজোলিউট ডেস্কের ড্রয়ারে সাদা খামে আবৃত চিঠিটি পান ট্রাম্প। খামের ওপরে লেখা ছিল ‘৪৭’।

আমেরিকান রাজনীতিতে এটি দীর্ঘদিনের একটি প্রথা, যেখানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরির জন্য একটি ব্যক্তিগত বার্তা রেখে যান। এরই ধারাবাহিকতায় এই চিঠি পেলেন ট্রাম্প।

ওভাল অফিসে দায়িত্ব পালনের সময় একজন সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, বাইডেন তার জন্য কোনো চিঠি রেখে গেছেন কি না। তখন ট্রাম্প হেসে বলেন, ‘সম্ভবত রেখেছেন’। এরপর রেজোলিউট ডেস্কের ড্রয়ার খুলে তিনি এই চিঠিটি পান। 

তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদেরও খামটি দেখান। এ সময় তিনি মজা করে বলেন, ‘তুমি না বললে হয়তো আমার এটা খুঁজে পেতে কয়েক বছর লেগে যেত।’ 

চিঠি পেয়েই ট্রাম্প প্রথমে বলেন, ‘চলুন আমরা সবাই একসঙ্গে এটা পড়ি।’ তবে পরে তিনি মত পরিবর্তন করে বলেন, ‘প্রথমে আমি পড়ি, তারপর আপনাদের শোনাব।’ এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেও বাইডেনের জন্য ড্রয়ারে একটি চিঠি রেখে গিয়েছিলাম।’ 

প্রসঙ্গত, এই চিঠি বিনিময়ের প্রথা শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মাধ্যমে। তিনি তার উত্তরসূরি জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশের জন্য একটি মজার নোট লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে ছিল টার্কি পরিবেষ্টিত এক হাতির ছবি, এবং তাতে লেখা ছিল- ‘টার্কিগুলো যেন তোমাকে হতাশ না করে।’ 

এরপর থেকেই প্রত্যেক বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরির জন্য ব্যক্তিগত বার্তা রেখে যান। যেখানে ভালোবাসা, শুভকামনা এবং প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা জানানো হয়। 

কিছু ঐতিহাসিক চিঠি 

রিগ্যান-জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ (১৯৮৯) 

১৯৮৯ সালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে রোনাল্ড রিগ্যান জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশের জন্য রেখে যাওয়া চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘চিঠিটি তুমি এমন সময়ে পাবে যখন তুমি এই টেবিলটি ব্যবহার করছ। জর্জ, তোমার এবং বারবারার জন্য শুভকামনা রইল। তুমি আমার প্রার্থনায় থাকবে। আমাদের বৃহস্পতিবারের মধ্যাহ্নভোজটা আমি মিস করবো।’ 

জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ-বিল ক্লিনটন (১৯৯৩) 

বুশ তার উত্তরসূরি বিল ক্লিনটনকে লিখেছিলেন, ‘তুমি যখন এই চিঠি পড়বে, তখন তুমি আমাদের প্রেসিডেন্ট। তোমার সাফল্য, এখন আমাদের দেশের সাফল্য। তোমার জন্য শুভকামনা।’ 

বিল ক্লিনটন-জর্জ ডব্লিউ বুশ (২০০১) 

২০০১ সালে বিল ক্লিনটন তার চিঠিতে দেশ পরিচালনার সম্মান ও আনন্দের কথা উল্লেখ করে জর্জ ডব্লিউ. বুশকে লেখেন, ‘আজ তুমি সবচেয়ে বড় একটি দায়িত্ব গ্রহণ করছ। তুমি একটি গর্বিত জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছ। আমি তোমার সাফল্য এবং সুখ কামনা করি।’ 

জর্জ ডব্লিউ বুশ - বারাক ওবামা (২০০৯) 

২০০৯ সালে জর্জ ডব্লিউ. বুশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্দেশ্যে রেখে যাওয়া চিঠিতে লেখেন, ‘প্রিয় ওবামা, অভিনন্দন। তোমার সামনে কিছু কঠিন সময় আসবে। তুমি সমালোচনার মুখোমুখি হবে। তোমার বন্ধুরা তোমাকে নিরাশ করবে। কিন্তু তোমার পাশে থাকবে ঈশ্বর, তোমার পরিবার, আমি এবং এ দেশের হাজারো মানুষ।’ 

বারাক ওবামা-ডোনাল্ড ট্রাম্প (২০১৭) 

২০১৭ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্পের জন্য একটি সুদীর্ঘ চিঠি রেখে যান বারাক ওবামা। ট্রাম্পের জন্য রাখা চিঠিটি ছিল এখন পর্যন্ত উত্তসূরীদের জন্য লেখা সর্বাধিক দীর্ঘ চিঠি।

ওই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘প্রথমত, আমরা দুজনেই আলাদা ভাবে, বড় সৌভাগ্যের অধিকারী। সবাই এমন সৌভাগ্যবান নয়। আমাদের দায়িত্ব হল, যতটা সম্ভব, প্রতিটি শিশু ও পরিবারকে সফলতার আরও সিঁড়ি তৈরি করে দেওয়া যারা কঠোর পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক।’

‘দ্বিতীয়ত, বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব সত্যিই অপরিহার্য। আমাদের দায়িত্ব হল, কাজ ও উদাহরণের মাধ্যমে সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বজায় রাখা যা ঠান্ডা যুদ্ধের পর থেকে ক্রমাগত প্রসারিত হয়েছে এবং যার উপর আমাদের নিজস্ব সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নির্ভর করে ‘

‘তৃতীয়ত, আমরা এই অফিসের শুধু সাময়িক অধিকারী। এটি আমাদেরকে সেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহ্যের রক্ষক করে তোলে- যেমন আইনশৃঙ্খলা, ক্ষমতার পৃথকীকরণ, সমান সুরক্ষা এবং নাগরিক স্বাধীনতা- যেগুলোর জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা যুদ্ধ করেছে এবং জীবন দিয়েছিল। দৈনিক রাজনীতি ও চাপের মধ্যে, আমাদের দায়িত্ব হল সেগুলোকে অন্তত একই শক্তিশালী অবস্থায় রেখে যাওয়া, যেমনটি আমরা পেয়ে ছিলাম’।

ওবামা আরও লেখেন, ‘মিশেল এবং আমি তোমার ও মেলানিয়ার জন্য শুভকামনা জানাই।’

এসবি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর