জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলে ট্রাম্পের আদেশ আদালতে স্থগিত

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:২২
-67935bd007cf8.jpg)
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বাতিলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করেছেন দেশটির একটি আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ডিস্ট্রিক্ট বিচারক জন সি. কফেনওয়ার এ রায় দিয়েছেন।
ট্রাম্পের আদেশ অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের নাগরিকত্বের অধিকার পিতামাতার অভিবাসন স্থিতির ওপর নির্ভরশীল হবে। এটি কার্যকর হলে অসংখ্য শিশুর নাগরিকত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
১৪তম সংশোধনীতে সংরক্ষিত অধিকার
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী জন্মসূত্রে নাগরিকত্বকে নিশ্চয়তা দেয়। এই সংশোধনীতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বা প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের রাজ্যের নাগরিক।
১৮৯৮ সালের ওং কিম আর্ক মামলার উল্লেখযোগ্য রায়ে সুপ্রিম কোর্ট এই অধিকার নিশ্চিত করেছিল। মামলায় সান ফ্রান্সিসকোতে চীনা অভিবাসীদের সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণকারী ওং কিম আর্কের নাগরিকত্ব বহাল রাখা হয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, অ-নাগরিক পিতামাতার সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রের আইনি কর্তৃত্বাধীন নয়।
আদালতের স্থগিতাদেশ
বিচারক কফেনওয়ার তার রায়ে বলেন, “এই আদেশটি সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী এবং সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।” ওয়াশিংটন, অ্যারিজোনা, ইলিনয় ও ওরেগনসহ ২২টি রাজ্যের যৌথ মামলার ভিত্তিতে রায়টি দেওয়া হয়।
নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কা
২০২২ সালে, প্রায় ২৫৫,০০০ শিশুর জন্ম হয়েছিল যাদের মায়েরা ছিলেন অবৈধ অভিবাসী। এর মধ্যে প্রায় ১,৫৩,০০০ শিশুর বাবা-মা উভয়েই ছিলেন অবৈধ অভিবাসী। ট্রাম্পের আদেশ কার্যকর হলে এদের নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ
কানেকটিকাটের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম টং এই মামলাকে ব্যক্তিগত বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধান স্পষ্টভাবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করে। এটি শুধুমাত্র আইনি বিষয় নয়, বরং মানবিক দৃষ্টিকোণেও গুরুত্বপূর্ণ।”
মামলাগুলোর মধ্যে একটিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে “কারমেন” নামের এক অভিবাসী নারীর ঘটনা। তিনি ১৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং তার সন্তানের নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় ৩০টি দেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ট্রাম্পের আদেশটি যদি কার্যকর হতো, তাহলে এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতেই নয়, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের প্রশ্নে প্রভাব ফেলতে পারত।
এই রায়ের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত নীতির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। তবে আদালতের স্থগিতাদেশ সাময়িক হওয়ায় বিষয়টি চূড়ান্ত সমাধান পেতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে।
কেআই/এমএইচএস