Logo

আন্তর্জাতিক

আত্মহত্যা

মিহিরকে চাটানো হয় টয়লেটের সিট, অপমানে ২৬ তলা থেকে ঝাঁপ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:১২

মিহিরকে চাটানো হয় টয়লেটের সিট, অপমানে ২৬ তলা থেকে ঝাঁপ

ভারতের কেরালায় মিহির আহমেদ নামে ১৫ বছরের এক স্কুলছাত্র পাশবিক র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। গত ১৫ জানুয়ারি মিহির স্কুল থেকে ফেরার ঘণ্টাখানেক পর কোচির থ্রিপুনিথারাতে তাদের ২৬ তলা ফ্ল্যাট থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপর তার পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, সে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে অপমানে আত্মহত্যা করে। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে মিহির আহমেদের মা রাজনা অভিযোগ করেছেন, তার ছেলেকে মারধর করা হয়েছে, গালি দেওয়া হয়েছে এবং টয়লেটের সিট চাটতে বাধ্য করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ আত্মহত্যার একটি মামলা নথিভুক্ত করেছে। মিহিরের মা কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের অফিস ও কেরালার পুলিশ প্রধানকে চিঠি লিখেছেন এবং অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। 

মিহিরের মা বলেন, আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর আমি ও আমার স্বামী খুঁজতে শুরু করি কেন এভাবে আত্মহত্যার পথ নেবে। তার বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীদের সাথে কথা বলেছি। তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মেসেজ পড়ে ভয়াবহ ঘটনার আঁচ পেয়েছি। মিহির স্কুলে ও স্কুলের বাসে পাশবিক র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিল। তার উপর একদল শিক্ষার্থী শারীরিক আক্রমণ ও মানসিক নির্যাতন চালায়।

মিহিরের মা আর বলেন, আমরা যে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছি তা খুবই করুণ দৃশ্যের। মিহিরকে মারধর করা হয়, গালিগালাজ করা হয়। এমনকি যে দিন আত্মহত্যা করে সেদিনও তাকে অকল্পনীয় অপমান সহ্য করতে বাধ্য করা হয়। তাকে জোর করে টয়লেটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কমোডের সিট চাটতে বাধ্য করে, এরপর কমোডের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে ফ্লাশ করা হয়। এসবের মাধ্যমে তাকে ভেতরে ভেতরে শেষ করে দিয়েছিল, যা আমরা তখনো বুঝতে পারিনি।

মিহিরের মা জানান, গায়ের রঙের জন্যও তাকে নির্যাতন করা হতো। তার মৃত্যুতে এসব নিষ্ঠুরতার অবসান ঘটেনি। মিহিরের মৃত্যুর পরে একটি জঘন্য স্ক্রিনশট তাদের নিষ্ঠুরতার মাত্রা প্রকাশ করে। গ্রুপ চ্যাটে তারা মিহিরকে বিকৃত গালি দিয়ে তার মৃত্যুতে উল্লাস করছিল।

তিনি বলেন, মিহিরের বন্ধুরা ন্যায়বিচারের দাবিতে ‘জাস্টিস ফর মিহির’ নামে একটি ইনস্টাগ্রাম পেজ চালু করেছিল। কিন্তু এখন এটি মুছে ফেলা হয়েছে। এমন খবর রয়েছে যে মিহিরের স্কুল সত্য ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাচ্ছে। পরে আমি প্রমাণসহ স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে যাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা আমাকে জানায় যে এসব তথ্য পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস তারা স্কুলের সুনাম রক্ষার জন্য এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ও ডিজিপির কাছে আবেদন করা হয়েছে। আশঙ্কা করছি ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহে বিলম্ব করলে অপরাধীরা এসব মুছে ফেলতে পারে।

কেরালার শিক্ষামন্ত্রী ভি শিভানকুট্টি শীতল ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

শীর্ষস্থানীয় অভিনেতারা র‌্যাগিং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। মিহিরের মৃত্যুর ঘটনায় সামান্থা রুথ প্রভু বলেন, এই খবর একেবারে ভেঙে দিয়েছে। এখন ২০২৫। তবুও, আমরা আরেকটি সম্ভাবনাময় তরুণকে হারিয়েছি। কারণ কিছু ব্যক্তি ঘৃণা ও বিষ ঢেলে কাউকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে! মিহিরের মৃত্যু এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে হয়রানি ও র‌্যাগিং নির্দোষ প্রথা বা আচার নয়।

অভিনেতা পৃথ্বীরাজ সুকুমারন ও কীর্তি সুরেশসহ অন্যানরাও মিহিরের মৃত্যুকে হৃদয় বিদারক বলছেন।

  • ওএফ
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর