যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে অভিবাসী নজরদারি

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:২০
-67adb9428249c.jpg)
প্রতীকী ছবি
অনলাইন নজরদারি কার্যক্রম বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে মার্কিন ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। এখন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আইসিই সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্যকারীদের পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়া আইসিই-এর কর্মকর্তা বা স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে হুমকি প্রদানকারী ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
সংস্থাটি উল্লেখ করেছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন পোস্টিংয়ে 'বহিরাগত হুমকির ক্রমবর্ধমান মাত্রা' লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, কর্মী এবং স্থাপনাগুলোর প্রতি নির্দেশিত হচ্ছে। তাই গত নভেম্বরে তারা এমন সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তথ্য চেয়েছিল যারা অনলাইনে করা মন্তব্য পর্যবেক্ষণে সাহায্য করতে পারবে।
সম্প্রতি ১৫-পৃষ্ঠার এক বিবৃতিতে আইসিই জানিয়েছে, তারা এমন একটি সংস্থা খুঁজছে যারা সোশ্যাল মিডিয়া, ওপেন-সোর্স অনলাইন ডাটাবেস, ডার্ক ওয়েব ও ডিপ ওয়েব পর্যবেক্ষণ করে সম্ভাব্য হুমকি শনাক্ত করতে পারে। জিওলোকেশন, মনস্তাত্ত্বিক প্রোফাইলিং, ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি এবং অন্যান্য উপায়ে এজেন্সিকে সেই তথ্য সরবরাহ করতে পারে এমন ব্যক্তিদের তারা নিয়োগ দেবে।
যদি কেউ আইসিই সম্পর্কে নিয়মিত নেতিবাচক মন্তব্য করে বা অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে পোস্ট করে তবে সরকার তাকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে পারে।
বারবারিকাম নামে ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক একটি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে করছে এমন একটি সংস্থার ইতোমধ্যে আইসিই-এর ৫.৫ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি রয়েছে। তবে এই চুক্তিটি মার্চ মাসে শেষ হয়ে যাবে।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর তিনি ব্যাপক গণনির্বাসনের পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত নভেম্বরে সরকারি চুক্তির ওয়েবসাইটে আইসিই তাদের লক্ষ্য, বিবৃতি ও তথ্য অনুরোধ পোস্ট করেছিল। তবে তারা প্রতিক্রিয়ার সময়সীমা ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ নির্ধারণ করেছিল যা ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহ আগের সময়।
এটি এখনও পরিষ্কার নয় যে এই লক্ষ্য ও অনুরোধের ফলস্বরূপ কোনও আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে কিনা। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এ বিষয়ে আইসিই-এর কাছে আরও তথ্য চেয়েছে।
সরকারের পক্ষে অনলাইনে সম্ভাব্য হুমকি বা বিপজ্জনক বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করা নতুন কিছু নয়। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলই আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মচারী, বিচারক এবং রাজনীতিবিদদের সুরক্ষার জন্য অনলাইন বক্তব্য সম্পর্কে সতর্ক থাকার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
২০২০ সালে, ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) একই ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্দিষ্ট ধরনের হুমকিগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য কোম্পানিগুলোর খোঁজ করা হয়েছিল। এটি আইসিই-এর গত পাঁচ বছরে অন্তত দ্বিতীয় অনলাইন নজরদারি চুক্তি। তবে,নতুন চুক্তি ট্রাম্পের বিতর্কিত অভিবাসন ও গণনির্বাসন নীতির সঙ্গে সময়োচিতভাবে মিলে গেছে।
সারা দেশ জুড়ে ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। যেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রক্রিয়া সীমিত করা হয়েছে। দেশের প্রধান শহরগুলোতে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং কিছু অভিবাসীদের গুয়ানতানামো বে’র মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে।
ট্রাম্প আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যেকোনো জায়গায় অভিযান চালানোর অনুমতি দিয়েছেন, এমনকি স্কুল, উপাসনালয়, হাসপাতালের মতো সাধারণত সংবেদনশীল স্থানগুলোতেও।
নতুন অনলাইন পর্যবেক্ষণ চুক্তির মাধ্যমে, সরকার আরও শক্তিশালী অনলাইন নজরদারি সরঞ্জাম যুক্ত করতে পারে, যাতে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরোধীদের ওপর আরও নিবিড়ভাবে নজর রাখা যায়।
আইসিই-এর লক্ষ্য বিবৃতি ইঙ্গিত দেয় যে, তারা এমন একটি সংস্থা চায় যারা সংস্থার নেতাদের বিরুদ্ধে অনলাইন হুমকির অন্ধকার দিকগুলো চিহ্নিত করতে পারে এবং সংস্থার বিরুদ্ধে প্রকাশিত মন্তব্য পর্যবেক্ষণ করে যে কোনো হুমকিকে চিহ্নিত করতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা স্থানীয় ও রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না, যারা তার কঠোর অভিবাসন নীতির বিরোধিতা করবে। তারা মামলার হুমকি দিয়েছে এবং ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করার পরিকল্পনাও করছে।
কেআই/এমএইচএস