ভারতে যুদ্ধবিমানসহ সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০২

ভবিষ্যতে ভারতে এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার যুদ্ধবিমান সরবরাহসহ চলতি বছর থেকে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, আমরা ভারতের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি কয়েক বিলিয়ন ডলার বাড়াবো। এছাড়া, শেষ পর্যন্ত ভারতকে এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার দেওয়ার পথ তৈরি করছি। তিনি এফ-৩৫ সরবরাহের নির্দিষ্ট সময়সীমা দেননি, তবে সাধারণত এমন উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র বিক্রির চুক্তি সম্পন্ন হতে কয়েক বছর লেগে যায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরও জানান যে, দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, যার আওতায় ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে তেল ও গ্যাস আমদানি করবে। এর ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।
তিনি আরও বলেন, 'ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি একসঙ্গে কাজ করবে চরমপন্থি ইসলামি সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলা করতে।
এফ-৩৫ জেটের নির্মাতা সংস্থা লকহিড মার্টিন ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। সাধারণত এফ-৩৫-এর মতো যুদ্ধবিমান বিক্রি সরকার-টু-সরকার ভিত্তিতে হয়, সেখানে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর (পেন্টাগন) মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে।
ভারত ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে। গত বছর, ভারত ৩১টি এমকিউ-৯বি সী গার্ডিয়ান ও সী গার্ডিয়ান ড্রোন কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ছয় বছরের আলোচনার পর চূড়ান্ত হয়।
মার্কিন কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী ভারত আগামী দশ বছরে সামরিক আধুনিকায়নের জন্য ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করবে।
লকহিড মার্টিন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, তুরস্ক, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, ইসরায়েল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও বেলজিয়ামসহ বেশ কয়েকটি মিত্র দেশের জন্য তিনটি মডেলের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করছে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ এবং তার প্রধান সরবরাহকারী ছিল রাশিয়া। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে, ফলে ভারত তার প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে।
রাশিয়া ভারতের জন্য সু-৫৭ পঞ্চম-প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার জেট ভারতে উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে, যা ভারতের বিমানবাহিনীর জন্য তৈরি করা হবে। একজন রুশ ও একজন ভারতীয় কর্মকর্তা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, মস্কো নয়াদিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে এই উদ্যোগ নিচ্ছে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি বলেন, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই হবে বলে। এ সময় তিনি তেল ও গ্যাসের ওপর গুরুত্ব দেন। শুল্কে ছাড়, নতুন ব্যবসায়িক চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনা বাণিজ্য যুদ্ধ রুখে দিতে পারে বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন মোদি।
হোয়াইট হাউসে মোদিকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। সাক্ষাতের কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি দেশের আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে সে সময় ট্রাম্প ভারতকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘খুব বড় অপব্যবহারকারী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আর ওই সময় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্কের প্রভাব পড়েছিল ভারতে।
ওভাল অফিসে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (ভারত) আমাদের কাছ থেকে প্রচুর তেল ও গ্যাস কিনতে যাচ্ছে। আমরা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চমৎকার বাণিজ্য চুক্তি করতে যাচ্ছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে মোদির প্রতিনিধি দল ট্রাম্পকে সম্ভাব্য কী প্রতিশ্রুতি দেবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিল। এর মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), যুদ্ধযান ও জেট ইঞ্জিন ক্রয় বাড়ানোর বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের পাশে বসে মোদি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে যে ব্যাপারটি শিখেছি এবং গভীরভাবে যেটির প্রশংসা করি তা হলো— তিনি জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে রাখেন। আর তাঁর মতো আমিও ভারতের জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে রাখি।’
এই সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে মার্কিন কৃষিপণ্য রপ্তানি, পারমাণবিক শক্তিতে বিনিয়োগের জন্য চুক্তি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার সরঞ্জাম এবং রাসায়নিকসহ বিভিন্ন খাতে শুল্ক কমানো হতে পারে বলে মনে করছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বলেছে, এসব কিছুই ট্রাম্পের জন্য মোদির উপহার হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতীয় কর্মকর্তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এই বছরই একটি চুক্তি হবে বলে আশা করছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘খুব শিগগিরই বড় বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছি।’ ট্রাম্পের সহকারী বলেছেন, ভারতে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিক্রির মাধ্যমে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ভারতের কাছ থেকে আরও সাহায্য চেয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের অনেক অভিবাসী রয়েছে। ভারতীয়দের বড় একটি অংশ প্রযুক্তি শিল্প খাতে কাজের ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। অনেকে অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করে।
কেআই/এমএইচএস