তিমির পেট থেকে ফিরে আসার অবিশ্বাস্য গল্প, ধরা পড়ল বাবার ক্যামেরায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৬

চিলির প্রশান্ত মহাসাগরের পাটাগোনিয়ান উপকূলের ম্যাগেলান প্রণালীতে কায়াকিং করছিলেন ভেনেজুয়েলার অ্যাড্রিয়ান সিমানকাস ও তার বাবা ডাল সিমানকাস। অ্যাড্রিয়ানের বাবা আবার সেসব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করছিলেন। হঠাৎ ঘটে এক ভয়ংকর ঘটনা। একটি তিমি অ্যাড্রিয়ানকে কায়াকসহ গিলে ফেলে। মাত্র কয়েক মিটার দূরে থাকা তার বাবার ক্যামেরায় ধরা পড়ে এই ভয়ংকর দৃশ্যটি।
২৩ বছর বয়সী অ্যাড্রিয়ান বিবিসিকে তার অভিজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এক মুহূর্তর জন্য বুঝতে পারছিলাম যে আমি কিছু একটার মুখের ভেতরে আছি। এটি সম্ভবত আমাকে গিলে ফেলেছে। আমি ধরে নিয়েছিলাম যে এটি একটি অর্কা বা সমুদ্র দানব হতে পারে।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই ভিডিওতে দেখা যায় যে কায়াকসহ অ্যাড্রিয়ানকে তিমিটি উগড়ে ফেলেছে। পরে কায়াক ও অ্যাড্রিয়ান পানিতে ভেসে উঠে।
তিমি মুখের ভেতরে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে অ্যাড্রিয়ান বলেন, আমি চোখ বন্ধ করে যখন আবার চোখ খুললাম, তখন বুঝতে পারলাম যে আমি তিমির মুখের ভেতরে আছি। আমি একটি পিচ্ছিল বস্তু অনুভব করলাম।
এ সময় তিনি গাঢ় নীল ও সাদা রং দেখেছিলেন উল্লেখ করে বলেন, আমি ভাবছিলাম যে এটি যদি আমাকে গিলে ফেলে তাহলে আমি কী করতে পারতাম। একে থামানোর জন্য আমার কিছুই করার ছিল না। আমাকে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে চিন্তা করতে হয়েছিল।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অ্যাড্রিয়ান অনুভব করতে শুরু করলেন যে তিনি পানির উপরের দিকে উঠে আসছেন।
তিনি বলেন, আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম যে আমি আমার শ্বাস ধরে রাখতে পারব কিনা। কারণ আমি জানতাম না আমি কত গভীরে ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল যে আমি উপরে আসতে অনেক সময় নিয়েছি। আমি দুই সেকেন্ডের মধ্যে উপরে ভেসে উঠলাম। অবশেষে বুঝতে পারলাম যে এটি আমাকে গিলে ফেলেনি।
কাছাকাছি অপর একটি কায়াকে থেকে অ্যাড্রিয়ানের বাবা ডাল সিমানকাস অবিশ্বাসের সাথে এই দৃশ্য দেখছিলেন।
৪৯ বছর বয়সী ডাল বলেন, যখন আমি শব্দ শুনে পেছনে ফিরলাম, আমি অ্যাড্রিয়ানকে দেখতে পাইনি। আমি হঠাৎ চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিন্তু মুহূর্তেই তাকে সমুদ্র থেকে উঠে আসতে দেখলাম। তারপর আমি কিছু দেখলাম। শরীর দেখে মনে হলো এটি একটি তিমি।
ডাল তার কায়াকের পেছনে একটি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন উঁচু ঢেউয়ের দৃশ্য ধারণের জন্য। সেই ক্যামেরায় তার ছেলের অসাধারণ অভিজ্ঞতা ধরা পড়ে।
একটি ভাল জীবনের সন্ধানে বাবার সাথে সাত বছর আগে ভেনেজুয়েলা থেকে চিলিতে আসা অ্যাড্রিয়ান ভিডিওটি দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি দেখলেন যে তিমিটি কত বড় ছিল।
অ্যাড্রিয়ান বলেন, আমি সেই মুহূর্তটি দেখিনি যখন তিমির পিঠ ও পাখনা দেখা গিয়েছিল। আমি এটি দেখিনি, আমি এটি শুনেছি। এটি আমাকে নার্ভাস করে তুলেছিল। কিন্তু পরে, ভিডিওটি দেখে আমি বুঝতে পারলাম যে এটি আসলে আমার সামনে এত বড় আকারে উপস্থিত হয়েছিল যে যদি আমি এটি দেখতাম, তাহলে এটি আমাকে আরও ভয় পাইয়ে দিত।
গিলে ফেলা অসম্ভব
অ্যাড্রিয়ানের জন্য, এই অভিজ্ঞতা শুধু বেঁচে থাকার বিষয় ছিল না। তিমিটি তাকে বের করে দেওয়ায় তার জীবনকে ‘দ্বিতীয় সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞের মতে, তিমির মুখ থেকে বের হতে পেরেছেন কারণ এটি একটি হাম্পব্যাক তিমি। যার গলা ছোট পাইপের মতো সরু। যা ছোট মাছ ও চিংড়ি গিলে খাওয়ার জন্য তৈরি।
ব্রাজিলিয়ান বিশেষজ্ঞ রোচেড জ্যাকবসন সেবা বিবিসিকে বলেছেন, এই জাতের তিমি শারীরিকভাবে বড় বস্তু যেমন কায়াক, টায়ার বা এমনকি টুনার মতো বড় মাছ গিলে ফেলতে পারে না। শেষ পর্যন্ত, তিমিটি কায়াকটি বের করে দিয়েছে কারণ এটি গিলে ফেলা শারীরিকভাবে অসম্ভব।
তার মতে, হাম্পব্যাক তিমিটি হয়ত দুর্ঘটনাবশত অ্যাড্রিয়ানকে গিলে ফেলেছিল। তিমিটি সম্ভবত একটি মাছের ঝাঁক খাচ্ছিল যখন এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে কায়াকটিকে তার খাবারের সাথে তুলে নিয়েছিল। তিমিগুলি খাওয়ার সময় খুব দ্রুত পানির উপরে উঠে আসে, তখন তারা তাদের পথে থাকা বস্তুগুলিকে আঘাত করতে বা গিলে ফেলতে পারে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ঘটনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সাধারণত যেসব স্থানে তিমি সাঁতার কাটে এমন এলাকায় প্যাডেল বোট, সার্ফ বোট বা অন্যান্য নিঃশব্দ জলযান ব্যবহার না করা উচিত।
তিনি বলেন, তিমি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার জন্য ব্যবহৃত নৌকাগুলোর ইঞ্জিন সর্বদা চালু রাখা উচিত। কারণ এসব শব্দ তিমিগুলোকে তাদের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- ওএফ