ছবি : সংগৃহীত
মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বিজয় বোঝাতে মূলত দুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, ‘ফাতহ’ এবং ‘নাসর’। এর মধ্যে ফাতহ শব্দটি সমগ্র কুরআনে ৩৮ বার এসেছে এবং এটি একাধিক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। সুরা ফাতহের প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।’
এই আয়াতে আল্লাহ মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামের বিজয়ের কথা ঘোষণা করেছেন। তবে ‘ফাতহ’ শুধু মক্কার বিজয়কেই বুঝায় না, এটি এক আধ্যাত্মিক জয়ও। যখন আল্লাহর সাহায্য মুমিনদের সঙ্গে থাকে, তখন তারা যেকোনো পরিস্থিতিতেই বিজয়ী হয়।
এদিকে ‘নাসর’ শব্দের মাধ্যমেও আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয়ের কথা বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে (সুরা নাসর : ১)।’
জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে
কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জয়-পরাজয় কেবলই আল্লাহর হাতে। রব্বুল আলামিন বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করলে তোমাদের ওপর জয়ী হওয়ার কেউ থাকবে না। আর তিনি তোমাদের সাহায্য না করলে, তিনি ছাড়া কে এমন আছে যে তোমাদের সাহায্য করবে?’ (আলে ইমরান : ১৬০)
এর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের বুঝিয়েছেন যে, বিজয় কোনো জনবল বা শক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়, এটি আল্লাহর ইচ্ছা ও সাহায্যের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, আল্লাহ যদি কাউকে বিজয়ী করতে চান, তবে সে বিজয় লাভ করবে। আর আল্লাহ যাকে পরাজিত করতে চান, সে কখনোই বিজয়ী হতে পারবে না।
বিজয় চিরস্থায়ী নয়
কোনো বিজয়ই চিরস্থায়ী নয়, এটি পরিবর্তনশীল। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, অনুরূপ আঘাত তাদেরও লেগেছিল। মানুষের মধ্যে এই দিনগুলো (বিজয় ও বিপর্যয়) পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই।’ (আলে ইমরান : ১৪০)
অর্থাৎ, বিজয় বা পরাজয় কোনোটিই চিরস্থায়ী নয়, এটি একটি পরিভ্রমণ যা আল্লাহ ইচ্ছেমতো পরিচালনা করেন।
বিজয়ের জন্য সংগ্রাম
বিজয়ের জন্য কুরআন মুমিনদের ধৈর্য ধারণ এবং আল্লাহর পথে সংগ্রামের নির্দেশ দিয়েছে। রব্বেকা’বা বলেন, ‘কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (আল বাকারাহ : ২৪৯)
এই আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের জন্য বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যারা তাঁর পথে ধৈর্য ধরে সংগ্রাম করবে।
বিজয়ের পর করণীয়
কুরআনে বিজয় লাভের পর করণীয়ও রয়েছে। বিজয়ের পর মুমিনরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। আল্লাহ বলেন, ‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো তাওবা কবুলকারী (সুরা নাসর)।’
বিজয় দিবস উদযাপন
বিজয় দিবসে আনন্দ উদযাপন ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। বরং ইতিহাস বিকৃত না করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এ দিবসটিকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন করা জরুরি। পাশাপাশি দেশের বিজয়ের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আত্মদানকারী সব শহীদকে স্মরণ ও দোয়া করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের ঈমানের একান্ত দাবি। যদিও বর্তমান সময়ে অনেকেই মনে করেন যে, বিজয় দিবস উদযাপন মানেই ইসলামের অবমাননা। না, বিষয়টি তা নয়; কারণ রাসুলু (সা.) নিজেও বিজয় দিবস উদযাপন করেছিলেন।
ডিআর/এটিআর