বিয়ের তিন মাস পর রাফি আগের বাসা পরিবর্তন করে নিতুকে নিয়ে আজকেই নতুন ফ্লাটে উঠেছে।
সবকিছু গোছগাছ করা এখনো হয়নি। নিতু সামলাচ্ছে, এমন সময় তার সিগারেটের নেশা পেয়ে বসলো। সে মনে মনে ভাবলো, শালা মদ সব বদনাম নিয়ে বসে আছে, অথচ সিগারেটের নেশাও কম মারাত্মক নয়।
নিতু সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না।
নিতু তুমি সামলাও, রাস্তা থেকে এক কাপ চা খেয়ে আসি, আমার খুবই চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে। বলেই রাফি দরজা খুলে বেরিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সামনের ফ্লাটের দরজার হাতল ধরে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাক্তন প্রেমিকা সিমি।
তুমি এখানে? সিমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
তুমি এখানে কী করছো? রাফির পালটা প্রশ্ন।
এটা তো আমার বাসা। আমরা এই বাসায় ভাড়া থাকি।
আমরাও আজকে এই বাসায় ভাড়াটে হিসেবে আসলাম।
সিমি চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, তুই আর বাসা ভাড়া নেওয়ার জায়গা পেলি না? আমার এখানেই তোকে মরতে আসতে হলো? ভার্সিটিতে পিছনে পিছনে ঘুরঘুর করতি, এখানেও এসেছিস আমার হাড় চিবিয়ে খেতে?
রাফি আঙুল উঁচিয়ে এলো, একদম ফাউল কথা বলবি না। আমি কি জানতাম, আগে থেকেই শয়তান এখানে ওৎ পেতে আছে? এহ্ কী অহংকার! বিয়ে তো করেছিস একটা টাকলুকে,,,
টাকলু বিয়ে করেছি, বেশ করেছি। তোর মতো ভুঁড়িওয়ালা তো বিয়ে করি নাই। তুই না বলছিলি ঐশ্বরিয়ার মতো বিশ্ব সুন্দরী বিয়ে করবি, করেছিস?
তোর কি ধারণা, আমি তোর মতো পেত্নী বিয়ে করেছি? আমার বউ দেখলে তুই হিংসায় জ্বলেপুড়ে খাক খাক হয়ে যাবি। আমার বউ ঐশ্বরিয়া না হলেও মাধুরী দীক্ষিত।
থাক থাক, আর বলতে হবে না। আমাকে অবহেলা করেছিস না, এখন বুঝবি আমি তোর কে ছিলাম। আমার মতো ভালোবাসা তুই কোথাও পাবি না।
শোন, তোর মতো পেত্নীকে আমি বাদশাহ শাহজাহানের মতো ভালোবাসতাম, শুধু মানিব্যাগে টাকাপয়সা শর্ট ছিল বলে তাজমহলটা বানাতে পারি নাই, নইলে,,,
রাফি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, সিমির ফ্লাটের ভিতর থেকে তার স্বামীর আওয়াজ এল, এই তুমি কই?
সিমি রাফির দিকে চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে জবাব দিল, আসছি জান। তারপর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে দরজা খুলে ঢুকে গেল।
রাফি স্তম্ভিত হয়ে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তায় গিয়ে সিগারেট টানতে লাগল।
রাফি প্রতিদিনই খেয়াল করে, সিমি তার জামাইকে প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় হাসতে হাসতে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। বিকেলে চা খেতে খেতে বারান্দায় বসে কপোত-কপোতি স্টাইলে গল্প করে। এসব দেখে হিংসায় তার গা জ্বলে যায় । সে বুঝতে পারে তাকে দেখানোর জন্যই এসব আদিখ্যেতা।
রাফিদের বারান্দা থেকে সিমিদের বারান্দা দেখা যায়, কাছাকাছি হওয়ায় শব্দও শোনা যায়। একদিন সিমি বারান্দায় কাপড় শুকাতে দিচ্ছে, রাফি সিমিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, ঐ মহিলা কে জানো নিতু? ঐ যে ভুঁড়িওয়ালা টাকলুকে দেখো না প্রতিদিন আধমরা হয়ে হেলেদুলে অফিসে যায়, এটা তার বউ। দেখো না কী আহ্লাদ, এই মহিলা আবার প্রতিদিন হাসিমুখে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। ন্যাকা!
নিতু অবাক হয়ে বলল, ভদ্রলোক তো টাকলু নয়, মাথায় একটু চুল কম। আর তুমি তার ভুঁড়ি দেখলে কোথায়?
আছে, আছে। তুমি ভালো করে খেয়াল করো নাই।
তাদের কথায় সিমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
রাফি লক্ষ্য করে, প্রতিদিনই নবাবজাদা অফিসে যাওয়ার আগে বারান্দায় একটা চেয়ার নিয়ে পেপার পড়তে বসে। তারপর শুরু করে ডাকাডাকি, এই সিমি চা দিয়ে যাও, সিগারেটের প্যাকটা আনো, গোসল করবো আমার গরম পানি কই? বাথরুমে তোয়ালে দাও। রাফি বুঝতে পারে, সিমিও দৌড়ে দৌড়ে এসব করে তাকে দেখাতে চায়, সে তার জামাইকে খুবই ভালোবাসে!
একদিন বিকেলে সিমি তার জামাইকে নিয়ে বারান্দায় বসে গল্প করছিল আর হাসাহাসি করছিল, তা দেখে হিংসায় রাফির গা জ্বলে গেল। এতো প্রেম!
সেদিন নিতু বাসায় ছিল না। হঠাৎ তার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল। সে বারান্দা থেকে ঘরে ডাক দিয়ে বলল, এই নিতু, তোমাকে যে গরম পানি করে দিলাম, গোসল ঠিকঠাক করেছো তো? দেখো তোমার টেবিলে গরম কফি দিয়ে এসেছি, খেয়ে নাও লক্ষ্মীটি। আর কিছু লাগবে? দুই পিস কেক দিয়ে যাই? মাথাব্যথা তোমার কমেছে? দাঁড়াও আমি আসছি। আমি কিছুক্ষণ তোমার মাথাটা টিপে দিলেই দেখবে, তোমার মাথাব্যথা নাই হয়ে গেছে। তোমার মাথার কাছে ঔষধ রেখেছি, তাড়াতাড়ি কফিটা খেয়ে নাও, আমি এসে তোমাকে ঔষধ খাইয়ে দিচ্ছি। আর শোনো, রাতের খাবার নিয়ে তোমাকে টেনশন করতে হবে না, আমি নিজেই রান্না করে নিবো।
কথা শেষ করে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে, সিমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে ধুপধাপ পা ফেলে ঘরে ঢুকে গেল।
এরপর থেকে আর একদিনও তাদেরকে বারান্দায় গল্প করতে দেখা গেল না, গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে দেখা গেল না।
এমএইচএস