আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:১১
-6808cad71b716.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের আশ্বাসে সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করার পর ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে তা প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন তারা।
তবে ছয় দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির ওপর ‘ভরসা রাখতে না পারায়’ সিদ্ধান্ত পালটে আবার আন্দোলনে ফিরেছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক (অস্থায়ী) মো. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে কমিটি গঠন করেছে, তার ওপর শিক্ষার্থীরা ভরসা করছে না। আগেও এমন কমিটি হয়েছিল, কিন্তু দাবি-দাওয়া পূরণ হয়নি। তাই সব শিক্ষার্থীর সম্মতিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি সম্মেলন হবে। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ সম্মেলনে অংশ নিতে বিভিন্ন বিভাগীয় পর্যায়ে থেকে পলিটটেকনিক শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। অন্যদেরও আমরা চলে আসতে বলছি।’
এর আগে, মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে চলমান আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তবে দাবি বাস্তবায়নে গড়িমসি দেখলে ফের আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন তারা। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে মঙ্গলবার বিকালে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের একজন উপদেষ্টাকেও কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়।
ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন করে তিন সপ্তাহের মধ্যে বিভাগের সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত। নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল সহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং। হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ। এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে " কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়" নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইন্সটিটিউট হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) এ পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এসআইবি/এমআই