মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে ১৩৪ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন
ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০৮
সাংবাদিক মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে বেতনের বাইরে জমা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা, যা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে তিনি বিভিন্ন সময়ে ১২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন, আর বর্তমানে তার ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ১৪ কোটি টাকা, যা বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ কোথা থেকে এসেছে, তা নিয়ে চলছে তদন্ত।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে, এই অর্থ পাচার হয়েছে কি না। এ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির ব্যাংক লেনদেনেরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
তদন্তে উঠে আসছে নতুন তথ্য
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ৬ অক্টোবর বিএফআইইউ মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব করে। গোয়েন্দা সংস্থা তাদের অনুসন্ধানে জানায়, মুন্নী সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন তাপসের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশন এবং তাদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এই বিপুল অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর হয়েছে।
এফআইইউ সূত্র জানায়, ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেন তাপসের নামে ২০১৭ সালে এমএস প্রমোশনের হিসাব খোলা হয়, যেখানে মুন্নী সাহাকে নমিনি করা হয়েছে। এছাড়া, গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডের শান্তি নিকেতনে তাদের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা, যা নতুন তথ্য হিসেবে উঠে এসেছে।
ব্যাংক লেনদেন ও ঋণের খোঁজ
২০১৭ সালের ২ মে এমএস প্রমোশনের নামে ওয়ান ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি টাকার ওভারড্রাফট (ওডি) ঋণ নেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালে এই ঋণ নবায়ন করা হয় এবং ঋণের পরিমাণ ২৫ কোটি টাকায় পৌঁছায়। তাছাড়া, ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে চলতি হিসাব থেকে অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরিত হয়। এ ধরনের লেনদেন ও ঋণ মওকুফের ঘটনায় সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার চ্যালেঞ্জ
এ ধরনের বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মধ্যে যেকোনো সন্দেহের অবকাশ রয়েছে এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্ন উত্থাপন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক লেনদেন আরও স্বচ্ছ হতে পারে।
এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে, ঋণ পরিশোধ না করায় এবং বারবার সুদ মওকুফের ঘটনাগুলো এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে আরও গভীর তদন্তের প্রয়োজন।
মুন্নী সাহা একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক এবং টেলিভিশন টকশো সঞ্চালক। তিনি আজকের কাগজ, ভোরের কাগজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি এটিএন নিউজ থেকে পদত্যাগ করেন এবং বর্তমানে ‘এক টাকার খবর’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া, ২০২৩ সালে যাত্রাবাড়িতে ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদারের হত্যাকাণ্ডের মামলায় মুন্নী সাহা একজন আসামি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
ডিআর/এমএইচএস