বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৬
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপনে এরই মধ্যে স্মৃতিসৌধ চত্বরে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। দিনটিতে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রয়েছে লাল সবুজের গালিচার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সাত স্তম্ভের স্মৃতিসৌধ।
জাতির গৌরব আর অহংকারের এই দিনে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে নামবে লাখো মানুষের ঢল। তাদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদী।
দিবসটি পালন উপলক্ষে স্মৃতিসৌধ চত্বরটি এক নতুন রূপ পেয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করার পর রংতুলির নতুন সাজে সেজেছে স্মৃতিসৌধ চত্বরের প্রতিটি স্থাপনা। স্মৃতিসৌধ চত্বরের চারপাশের টবে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের রঙিন ফুল আর পাতাবাহারের গাছ।
সেদিন শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে উচ্চমাত্রার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। যা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবে। এ ছাড়াও স্মৃতিসৌধ এলাকায় থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়। এখন শুধু শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর অপেক্ষা।
১৬ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ বেদীতে বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় থাকবে তিন বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও গাড়ি বহরের মহড়া।
রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ চত্বর ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এতে করে লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে স্মৃতিসৌধ চত্বরে। তাই আগত দর্শনার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এবং স্মৃতিসৌধ চত্বরের চারপাশের এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিসহ মোতায়েন থাকবে বিপুলসংখ্যক পুলিশ।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও আমন্ত্রিত অতিথিসহ লাখ লাখ জনতা জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সে লক্ষ্যে আমরা গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, রঙ-বেরঙের ফুল দিয়ে সাজানো, ফুল ও পাতাবাহারের গাছ, আলোকসজ্জার কাজ, নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব কার্যক্রম সম্পূর্ণ করেছি। সব মিলিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সাভার স্মৃতিসৌধ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।’
ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম আওলাদ হোসেন বলেন, ‘মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ অন্তত ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে ১১টি সেক্টরের মাধ্যমে তিন হাজার পুলিশের চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। নিরাপত্তাব্যবস্থা শুধু স্মৃতিসৌধকেন্দ্রিক নয়, আশপাশের যে জেলাগুলো রয়েছে, অর্থাৎ মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও গাজীপুর মেট্রো এলাকাও নিরাপত্তা বলয়ে চলে আসবে।’
এ ছাড়াও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং, পুলিশ, র্যাব ট্রাফিকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্মৃতিসৌধের ভেতর ও বাইরে সতর্ক অবস্থায় থাকবে।
ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন আরও জানান, ১৬ ডিসেম্বর ভোর ৪টা থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসা মানুষদের চলাচলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা নেওয়া হয়েছে। স্মৃতিসৌধ এলাকার আশপাশের বাসিন্দাদের আগামী কয়েকদিনে বহিরাগত অথবা নতুন কোনো লোকজন এলাকায় এলে তাদের বিষয়ে থানা পুলিশকে তথ্য প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ছাড়াও বিজয় দিবসের দিন যানজট এড়াতে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের পরিবহনকে চন্দ্রা থেকে গাজীপুর হয়ে চলাচলের অনুরোধ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
হাসান ভূঁইয়া/এমজে