Logo

জাতীয়

দাবি আদায়ের তোপে দিনভর উত্তাল সচিবালয়

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:০৯

দাবি আদায়ের তোপে দিনভর উত্তাল সচিবালয়

অব্যাহতিপ্রাপ্ত ৪০ ক্যাডেট এসআইদের আমরণ অনশন
চূড়ান্ত সুপারিশের পরও নিয়োগবঞ্চিত ৪৮ কারারক্ষীর অবস্থান
ক্যাডেট সিডিসি না দেওয়ায় ১৭ নাবিকের মানবন্ধন
তিন দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের সচিবালয় ঘেরাও
ভোগান্তিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

দিনভর উত্তাল ছিল প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। সোমবার দিনের শুরুতে সকাল ১০টায় সচিবালয়ের সামনে রাস্তায় অবস্থান নেয় পুলিশের ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শকরা (এসআই)। এ সময় তাদের পাশেই অবস্থান নেয় ৪৮ জন নারী ও পুরুষ কারারক্ষী। একই সময় চীনের জিয়াংশু মেরিটাইম ইনস্টিটিউট থেকে নাবিক প্রশিক্ষণ শেষ করের পরও প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ক্যাডেট সিডিসি না পাওয়ায় অবস্থান নেন ১৭ নাবিক। সবশেষে সন্ধ্যার কিছু সময় আগে সচিবালয় এলাকা রীতিমতো দখলে রাখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দিন শেষে তারা পেছনের গেট দিয়ে বের হয়েছেন।

অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসআইদের অবস্থান
সরকারের দেওয়া আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হওয়ায় চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে অবস্থান নেন চাকরিচ্যুত এসআইরা। তারা জানান, তাদেরকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে। তাদের দাবি, কোনো কারণ ছাড়াই চূড়ান্ত সুপারিশের পরও তাদের নিয়োগ দেয়া হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুরের দিকে সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় এসে ৪০তম ক্যাডেট এসআইদের রাস্তা ছাড়ার জন্য বোঝাচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসদু আলম। তিনি বলেন, দাবি আদায়ের আরও অনেক মাধ্যম আছে। তোমরা রাস্তা ছেড়ে দাও। স্মারকলিপি দাও। যদিও তারা পুলিশের এমন কথা রাখেননি। 

তারা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোনো সিন্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এখানেই অবস্থান করবো আমরা। কারণ এর আগেও আমাদের আশ্বাস দিয়ে আশ্বাসের বাস্তবায়ন করেনি সরকার। পরে বিকাল ৪টা নাগাদ অপেক্ষা করেও সরকারের কোনো বার্তা না পেয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচী ঘোষণা করেন তারা। সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে বসে পড়েন। এ সময় চাকরিচ্যুত নারী এসআইদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

কান্নারত কণ্ঠে তারা বলেন, আমাদের কি অপরাধ? আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। এটা অজুহাত মাত্র। সরকারের এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে আমরা যাইনি। কেউই আমাদের রেসপন্স করেনি। যে কারণে এই কর্মসূচি ঘোষণা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।’


এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুলিশের একজন কর্মকর্তা এসে তাদের তিনজন প্রতিনিধিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকার কথা জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে তাদের মিটিংয়ের কথা বলা হয়েছে। ভেতরে যাওয়ার আগে তারা বলে গেছেন, সরকার হয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে অথবা প্রেস ব্রিফিং ডেকে আমাদের চাকরিতে পুনর্বহালের কথা জানাবে। অন্য কোনো প্রস্তাব আমরা মানব না।

বৈঠক শেষে ফিরে এসে চাকরিচ্যুত এসআইয়ের সমন্বয়ক মো. আলমগীর আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বৈঠকে কোনো সুরাহা হয়নি। তাই অনশন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

জবির দখলে সচিবালয় এলাকা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা সোমবার বিকেলে ক্যাম্পাস থেকে সচিবালয়ের উদ্দেশে তিন দাবি পূরণে পদযাত্রা শুরু করে। তারা জিপিও মোড়ে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের এক নম্বর গেটে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করে। তাদের স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে সচিবালয় এলাকা। এ সময় সচিবালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলেও কোনো রকম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। 

অনশনরত অবস্থায় ৩৫ ঘণ্টা পর দুটি দাবির লিখিত অঙ্গীকার পাওয়ায় অনশন কর্মসূচি প্র্যতাহার করেন জবি শিক্ষার্থীরা। তবে তৃতীয় দাবির সুরাহা না পাওয়া পর্যন্ত শাটডাউন কর্মসূচি চলবে বলেও জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অনশন কর্মসূচির মুখপাত্র এ কে এম রাকিব এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 


জবি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে। পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। যতদিন অবধি আবাসন ব্যবস্থা না হয়, ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।

নিয়োগবঞ্চিত কারারক্ষীরাও সচিবালয়ে
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই, নেই রাষ্টদ্রোহিতার অভিযোগ কিংবা ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ডও। হয়েছে চূড়ান্ত সুপারিশও। তারপরও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বাদ পড়েন ৪৮ জন। তারাও সচিবালয়ের ১নং গেটের সামনে চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে অবস্থান নেন।

গত বছরের জুলাইয়ে কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী পদে ৫৬৯ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ডিএসবি ও এনএসআইয়ের তদন্ত শেষে ৮টি ধাপে ৫৬৯ জনের মধ্যে ৫২১ জনকে নিয়োগপত্র দিয়ে রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগদান করানো হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বাকি ৪৮ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি।


তারা বলেন, ‘আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ কিংবা এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকারও নজির নেই। আমাদের শিক্ষাজীবনেও কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি পরিবারের সদস্য কিংবা আমাদের কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগও নেই। তাহলে কী কারণে আমাদের ৪৮ জনকে নিয়োগবঞ্চিত করা হয়েছে?’

অবস্থানরত নিয়োগবঞ্চিতরা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমরা কারা মহাপরিদর্শক স্যারের সাথেও দেখা করেছি। তিনি আবেদন দেওয়ার কথা বলেছেন। আবেদন দিয়েছি। তাতেও কোনো সিদ্ধান্ত জানতে পারছি না। ফলে আজ আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।’

সিডিসির দাবিতে এলেন ১৭ নাবিক
চীন থেকে নাবিক প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা ১৭ জনও সোমবার অবস্থান নেন সচিবালয়ের সামনে। তারা অবস্থান নিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ‘ক্যাডেট সিডিসি’ সনদের দাবিতে।

চীনে প্রশিক্ষণধারীদের একজন বলেন, আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বৃত্তি নিয়ে চীনের জিয়াংসু মেরিটাইম ইনস্টিটিউট থেকে নাবিকের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছি। দেশে এসে আমাদের নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে ‘ক্যাডেট সিডিসি’ সনদ পাওয়ার কথা।

সিডিসির দাবিতে অবস্থান নেয়া ১৭ নাবিক বলেন, যদি মন্ত্রণালয়ে আমাদের ক্যাডেট সিডিসি দিতে না পারে তাহলে তারা চীনে নাবিক হিসেবে পড়াশুনা করার জন্য কেন স্কলারশিপ দিচ্ছে। তাদের দেওয়া স্কলারশিপেই আমরা চীন গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসি। এখন কেন আমাদের সিডিসি দেওয়া হচ্ছে না। এটা বৈষম্য, আমরা বৈষম্যের শিকার। আমরা অতি দ্রুতই এর সমাধান চাই।

ভোগান্তিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
অফিস শেষে যখন বের হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, তখনই সচিবালয়ের সবগুলো গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষভাবে একটি গেট খোলা রাখা হয়েছে। সে গেটে দিয়ে মানুষ বের হতে পারলেও গাড়ি বের হতে পারছিল না। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার বিকেলে প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল খ্যাত সচিবালয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

তবে নিরাপত্তার জন্য সচিবালয়ের গেটগুলো বন্ধ থাকলেও ভেতরে এবং বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। একটি মাত্র গেট হওয়ায় একসঙ্গে শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী বের হতে গেলে ভিড় জমে যায়। তবে গাড়ি বের হওয়ার ১ ও ২ নম্বর গেট বন্ধ থাকায় কোনো গাড়ি সচিবালয় থেকে বের হতে পারেনি।

এনএমএম/ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর