রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও দেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৮
ছবি : সংগৃহীত
রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ও দেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
সংবিধানের রাষ্ট্রীয় মূলনীতির পরিবর্তন সুপারিশ করে কমিশন বলেছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রের পাঁচটি নতুন মূলনীতি প্রবর্তন করা প্রয়োজন। সেগুলো হলো, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র।
বর্তমান সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
দেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব
কমিশন বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ করেছে। অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের ধারণার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ ইচ্ছার প্রতিফলন যথাযথভাবে মিলছে না। ‘জনগণতন্ত্রী’ শব্দটি দেশকে আরও গণমুখী করে তুলবে।’
প্রতিবেদনে মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা এবং তা বলবৎ নিশ্চিত করার জন্য একটি সমন্বিত সনদ তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।
দ্বিকক্ষের সংসদ প্রবর্তন
সংবিধান সংস্কারের অংশ হিসেবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে উচ্চকক্ষ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নিম্নকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বিকক্ষের সংসদ অত্যন্ত কার্যকরী হবে। এতে দেশের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করা সম্ভব।’
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রস্তাব
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই কাউন্সিলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সংসদীয় দলের নেতা, দুই কক্ষের স্পিকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
কমিশন বলেছে, প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস করতে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে এই কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নতুন শাসন কাঠামো
১. গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ের দায়িত্ব জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের হাতে অর্পণ।
৩. বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন।
৪. স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে সমন্বয় কাউন্সিল গঠন।
কমিশনের কাজ ও আশা
কমিশনের কাজে অংশ নিয়েছেন ৩২ জন গবেষক। এ ছাড়া প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
ড. রীয়াজ বলেন, ‘গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এই সুপারিশগুলো করা হয়েছে। আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো সুপারিশগুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে।’
ডিআর/এমজে