সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল
কুকুর-বিড়ালের আক্রমণের শিকার লক্ষাধিক মানুষ, মৃত্যু ৫৮
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৪৯
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম। রাস্তার কুকুরের আক্রমণের শিকার আট বছর বয়সী ছেলে হাসিবকে নিয়ে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসকের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। একই চিকিৎসকের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন মালিবাগ থেকে আসা শান্তা রহমানও।
তিনি বাসার নিচেই বিড়ালের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। শুধু হাসিব বা শান্তা রহমান নয় মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রাজধানী আশপাশের জেলার প্রতিদিন এমন কয়েকশত মানুষ আসেন কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, কুকুর, বিড়াল, বেজি, বানর ও শিয়ালের আক্রমণে ২০২৪ সালে চিকিৎসা নিয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ২৬৩ জন। এ সময়ের মধ্যে জলাতঙ্কে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২০২৩ সালে ৯৪ হাজার ৩৮০ জন ও ২০২২ সালে ৮৯ হাজার ৯২৮ জন চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ২০২২ ও ২০২৩ সালে বেশিরভাগ মানুষ কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিলেও গেল বছরের দুই–তৃতীয়াংশ রোগী বিড়ালের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
বিড়ালে আক্রমণের শিকার রোগী বাড়তে থাকার কারণ হিসেবে হাসপাতালটির একজন আবাসিক চিকিৎসক জানান, অনেকে শখ করে বাসায় বিড়াল পোষেন। বিড়াল পোষার আগে ভাইরাস প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দিতে হয়। ভ্যাকসিন না দিলে বিড়ালের কামড় বা আঁচড় থেকে নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
তিনি বলেন, সচেতনতার অভাবে বিড়ালে আক্রমণের শিকার রোগী বাড়ছে। তাছাড়া অনেকে রাস্তাঘাটে বিড়াল দেখলে ধরতে যান। তাদের অনেকে বিড়ালের আক্রমণের শিকার হন।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কুকুরের আক্রমণে শিকার রোগী কমলেও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে কুকুরের আক্রমণে জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যা। ২০২৩ সালে জলাতঙ্কে এই হাসপাতালে ৪২ জন মারা গেছেন। গত বছর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ জনে।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, জলাতঙ্ক রোগ ঠেকাতে স্থানীয় সরকার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কুকুর বন্ধ্যাকরণ ও টিকাদানসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। এটা জলাতঙ্কে মৃত্যু বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।
কুকুর-বিড়ালের আক্রমণের চিকিৎসা
কুকুর, বিড়াল, বেজি, বানর ও শিয়ালসহ অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণের শিকার হলে কয়েক ধরনের টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- জলাতঙ্কের টিকা, টিটেনাস শট ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক। আক্রমণের শিকার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব টিকা নিতে হয়। প্রথম টিকা নেওয়ার তিন দিন পর দ্বিতীয় টিকা ও সাত দিন পর তৃতীয় টিকা নিতে হয়। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারে ১০ টাকার টিকিটে তিন দিনের এসব টিকা দেওয়া হয়। এছাড়া সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রেও টিকা পাওয়া যায়।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরিফুল বাশার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কুকুর-বিড়ালসহ অন্যান্য প্রাণীদের আক্রমণে শিকার রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। তারা রাস্তা-ঘাটে কুকুর-বিড়াল ধরতে গিয়ে আক্রমণে শিকার হয়।
তিনি বলেন, অনেকে বাসা-বাড়িতে কুকুর বিড়াল পোষেন। কিন্তু এসব প্রাণীদের ভ্যাকসিন দেন না। এতে আক্রমণের শিকার হলেই হাসপাতালে ছুটে আসেন। টিকা দেওয়া ছাড়া এসব প্রাণী বাসাবাড়িতে পোষা যাবে না এমন আইন করা জরুরি। এছাড়া বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালকে টিকার আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে হবে।
জলাতঙ্কে মৃত্যুর বিষয়ে আরিফুল বাশার বলেন, কুকুর-বিড়ালের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ বেশি হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি। দেশে কিছু কুসংস্কার এখনো চালু রয়েছে। কুকুরে কামড় দিলে কবিরাজ বা ঝাড়ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। আমরা যেসব রোগী পাই এর বেশিরভাগই হাসপাতালে আসেন দেরি করে। তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না। আমাদের পরামর্শ হলো কেউ যেকোনো প্রাণীর আক্রমণের শিকার হলে সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
ওএফ/এমআই