সারাদেশে রেল চলাচল বন্ধ হতে পারে মধ্যরাত থেকে
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:০৯
রাত ১২টা থেকে সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পেনশন, আনুতোষিক সুবিধাসহ বেশ কয়েকটি দাবি ২৭ জানুয়ারির মধ্যে পূরণ না হলে কর্মবিরতির ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ (লোকোমাস্টার, গার্ড, টিটিই)। এখন পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণ হয়নি। যে কারণে রেল যোগাযোগ বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ নিয়ে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রেলভবনে রানিং স্টাফ কর্মচারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো অনুষ্ঠিত হয়েছে কিনা কিংবা আজ হবে কিনা এমনটা জানতে চেয়ে রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির নেতারা বলছেন, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়। এছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া ভাতা যোগ করার বিষয়টিও বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা।
এই মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি। ফলে ফের তারা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়, যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ওই মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়।
রানিং স্টাফরা বলছেন, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এ নিয়ে আমরা কথা বলছি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশ্বাস দেন, আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। এভাবেই চলছে। তাই আমরা ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারির প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ট্রেন চালানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ট্রেন চালানো বন্ধের বিষয় থেকে সরে আসতে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে স্পষ্ট চিঠি দিতে হবে।
এনএমএম/এমএইচএস