মেহদী হাসান খান
‘এদের ছাড়া আমি একুশে পদক গ্রহণ করতে পারব না’

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৪

এ বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন অভ্র কিবোর্ডের আবিষ্কারক মেহদী হাসান খান। কিন্তু একাই একুশে পদক নিতে চান না তিনি। এ আবিষ্কারক বলেন, ‘শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আমরা যারা একসাথে কাজ করেছি- রিফাত, সিয়াম, শাবাব। এদের ছাড়া আমি অভ্রর নামে একুশে পদক গ্রহণ করতে পারব না।’
মেহদী হাসান খানের এ দাবির পর অভ্র তৈরিতে সহযোগিতা করা রিফাত নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম ও শাবাব মুস্তাফাকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেছে সরকার। রোববার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভ্রর জন্য দলগতভাবে একুশে পদকের এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ‘অভ্র কীবোর্ড-বাংলা সফটওয়্যার’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে মেহদী হাসান খান লিখেছেন, ‘ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় একটু পরিচিতি পেয়ে যাওয়ার সুবিধা অসুবিধা দুইটাই আছে। বিড়ম্বনার কথা আজকে না বলি। সুবিধার একটা হলো প্রয়োজনে ডাকলে সাথে থাকার মানুষ পাওয়া যায়। পরিচিতি পাওয়ার আগে এরকম সাথে থাকার মানুষ পাওয়া কঠিন, কাজের মানুষ পাওয়া আরও কঠিন।’
তিনি লিখেছেন, ‘২০০৩ সালে যখন অভ্রর কাজ শুরু করলাম তখন অভ্র বা আমাকে কেউই চিনতো না। একটা ফোরাম বানালাম মানুষের টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্য। ইউনিকোডের ব্যবহার তখনো নতুন, হাজারটা সমস্যা। ধীরে ধীরে মানুষ জমতে শুরু করলো অনলাইন ফোরামে, তারা সমস্যা নিয়ে আসেন, আমি সমাধান বের করার চেষ্টা করি, অথবা bug থাকলে ঠিক করে নতুন রিলিজ দেই।’
‘কিছু মানুষ, আমি যাদের চিনি না, তারাও আমাকে চিনে না, এরা শুধু সমস্যা নিয়ে আসার বদলে ধীরে ধীরে বাকিদের সমস্যা সমাধানে আমার সাথে যোগ দেয়া শুরু করলো। একসময় অনলাইন ফোরামের বাইরে এদের সাথে দেখা করলাম। সবাই ছাত্র তখন আমরা। কোন কারণে অভ্রর মিশনটায় তারা বিশ্বাস করেছে, এর বাইরে আর কোন চাওয়া পাওয়া নাই তাদের।’
মেহদী হাসান খান লিখেছেন, ‘ফোরাম থেকে শুরু হয়ে বাংলা ফন্ট বানানো, সফটওয়্যার বানানো, সবকিছু একসাথে করলাম আমরা। বিভিন্ন সময়ে এরকম অবদান রাখা অনেকে এসেছেন, চলেও গিয়েছেন নানা কারণে, কিন্তু কোন কারণে হাতে গোনা কয়েকজন লেগে থাকলাম আমরা বছর দশকের উপর। স্বার্থহীন এমন মানুষজন একসাথে ছিল দেখে স্বার্থপর লোকজন চেষ্টা করেও আমাদের আটকাতে পারে নাই।’
‘আমি সবাইকে খুশি করতে পারব না। কিন্তু দলের কাজের কৃতিত্ব একক ব্যক্তি না পাক, আমার সামর্থ্য দিয়ে এটুকু চেষ্টা করতে পারি। একুশে পদক ঘোষণার পরে অ্যাডভাইজার ফারুকী ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ হলো। ওনাকে ব্যাপারটা বোঝাতে খুব বেশি চেষ্টা করতে হয় নাই, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
মেহদী হাসান খান লিখেছেন, ‘২০০৩ সাল থেকে অনেকে অভ্র কাজে সাহায্য করেছেন, এদের সবার অবদান আছে। কিন্তু শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আমরা যারা একসাথে কাজ করেছি- রিফাত, সিয়াম, শাবাব। এদের ছাড়া আমি অভ্রর নামে একুশে পদক গ্রহণ করতে পারব না। উনি মেনে নিয়েছেন, বাকিদেরও রাজি করিয়েছেন। ওনাদের কথা ছিল- পদক গ্রহণ করা বা না করার কথা পরে, রাষ্ট্রের কাজ জানানো যে আপনাদের কাজের জন্য রাষ্ট্র কৃতজ্ঞ, তাঁরা তাই করেছেন।’
‘আমিও মেনে নিয়েছি। পরের প্রজন্মের জন্য অভ্রর মিশনটা যদি রেখে যেতে হয়, সাথে আমাদের টিমওয়ার্কটাও উদাহরণ হিসেবে থাকুক। একা একা তো বেশিদূর যাওয়া যায় না।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ভালো হলো শেষমেশ। ওনারা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও পদক দিচ্ছেন। দলকে স্বীকৃতি দেয়ার এ সংস্কৃতি চালু থাকুক। অভ্রর জন্য একুশে পদকের দাবি নিয়ে অনেকে অনেক বছর ধরে অনলাইনে ক্যাম্পেইন করছেন, আপনাদের দাবি পূরণ হলো।’
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘পদক তো একটা প্রতীক বা উপলক্ষ, এ উপলক্ষে সবার একসাথে হওয়া হবে আবার। "Maybe the real treasure was the friends we made along the way" (ক্লিশে, জানি আমি। করলাম ক্লিশে, আমার ইচ্ছা!)
- মেহদী হাসান খান
(আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অনেকদিন ধরে বন্ধ, তাই এখানে লিখলাম।)’
ডিআর/এমবি