Logo

জাতীয়

স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাচ্ছেন ১৭ কয়েদি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:১৭

স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাচ্ছেন ১৭ কয়েদি

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর

এ বছর ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশের ৭টি কারাগারে থেকে ১৭ বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এদের অনেকেই গুরুতর অসুস্থ, ইতোমধ্যে তারা মোট সাজার মেয়াদের অর্ধেকও ভোগ করে ফেলেছেন।

তারা চলতে-ফিরতেও অক্ষম। সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকরা এসব বন্দির মুক্তির বিষয়ে সুপারিশ করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও কারা অধিদপ্তর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ) মো. মিজানুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা দিবসে লঘুদণ্ডে দণ্ডিত এবং অচল ও অক্ষম কারাবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়। এবারও কিছু কয়েদিকে মুক্তি দেওয়ার কাজ চলছে। এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। তাই সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। কারামুক্তির সুপারিশ করে আইন মন্ত্রণালয়ে একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। 

জানা গেছে, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ২০২৫ উপলক্ষে বন্দি মুক্তি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা হতে প্রাপ্ত তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে গত ৩০ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৭ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য প্রস্তুত করা হয়। 

বিভিন্ন জাতীয় দিবস এবং পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুক্তিযোগ্য কয়েদিদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়। 

যারা মুক্তি পেতে যাচ্ছেন

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা আনিসুর রহমান বয়স ৫৫ বছর। খুনের মামলায় আদালতের রায়ে তিনি ৩০ বছরের জেল ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১ বছর ৯ মাস ২৮ দিনের সাজা বাকি আছে তার আর। জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি সম্পূর্ণরূপে অন্ধ। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ৭৬ বছর বয়সি বন্দি মো. অলি মিয়াও হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তারও ৩০ বছরের সাজা ও দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজার রায় হয়েছে। তার আর ৫ বছর ৬ মাস ২২ দিনের সাজা ভোগ বাকি আছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিবেদন অনুসারে, অলি মিয়া স্ট্রোক করে শরীরের বাম পাশ পুরোপুরি অচল। একই কারাগারের ৭০ বছর বয়সি মমতাজ উদ্দিনের হত্যা মামলায় ৩০ বছরের জেল ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত। রেয়াতসহ তিনি ২৭ বছর ৩ মাস ১৮ দিন সাজা ভোগ করে ফেলেছেন। জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুসারে তিনিও স্ট্রোকের রোগী। একাধিকবার মস্তিষ্কের রক্তনালি প্রতিবন্ধকতা ছিল, করোনারি ধমনির প্রতিবন্ধকতা এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগী।

রাজবাড়ি জেলা কারাগারের মেহেদী হাসান যৌতুক আইন-২০১৮ এর ৩ ধারায় দুই বছরের সাজা খাটছেন। আদালত একই সঙ্গে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানাও করেছেন। ৭ মাস ২২ দিনের সাজা বাকি আছে, এই সাজা মওকুফ হতে যাচ্ছে তার। এই বন্দির কোনো অসুস্থতা নেই। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা মহিব উল্যাহের বয়স ৭৯ বছর। হত্যার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত তিনি। বিচার শেষে আদালত ৩০ বছরের জেল ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। মাত্র ১ বছর ৪ মাস ২৫ দিন সাজা ভোগ করেছেন তিনি। তার আরও ২৮ বছর ৭ মাস ৫ দিনের সাজা বাকি। তবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিবেদন মতে, তিনি মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, দৃষ্টিশক্তি সমস্যা ও বার্ধক্যজনিত কারণে অচল ও অক্ষম। একই কারাগারের ৮১ বছর বয়সি খোরশিদ আলী হত্যার অভিযোগে ৩০ বছরের সাজা ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত। ১১ বছর ৬ মাস ২১ দিন সাজা খেটেছেন, বাকি আছে আরও ১৮ বছর ৫ মাস ৯ দিন। তিনি বাতরোগ, শ্বাসকষ্ট, দৃষ্টিশক্তি সমস্যা ও বার্ধক্যজনিত কারণে অচল ও অক্ষম। এ কারাগারের শাহীনুর আলম শাহীনের বয়স ৫০ বছর। চাচাতো বোনকে হত্যার দায়ে ৩০ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড ভোগ করছেন। ২৮ বছর ১ মাস ১৪ দিন সাজা খেটে ফেলেছেন। স্ট্রোকের কারণে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। বার্ধক্যজনিত কারণে অচল ও অক্ষম এবং মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। 

পক্ষাঘাতগ্রস্ত বার্ধক্যজনিত কারণে অচল আরেক বন্দি ৬৯ বছর বয়সি সুফি মিয়ার বিরুদ্ধেও হত্যার অভিযোগ। ৩০ বছরের সাজার মধ্যে ১৭ বছর ৯ মাস ৩০ দিন সাজা খেটেছেন। বাকি আছে ১২ বছর ২ মাস। অন্য আসামিদের অতীত ঘটনা একই রকম বলে জানা গেছে।

এনএমএম/এমআই
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর