আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৮
বাংলাদেশে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও কার্যক্রমের মধ্যেই গত দশ বছরে এ সংখ্যা বেড়েছে সাত লাখ। দেশের পুষ্টি পরিস্থিতির এ অবনতির চিত্র উঠে এসেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় আজ দেশে শুরু হচ্ছে পুষ্টি সপ্তাহ। প্রতিবেদনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, অন্তত আড়াই কোটি লোক প্রতিদিনের খাদ্যে পরিমাণমতো পুষ্টি পাচ্ছে না। ৬০ শতাংশ নারী এখনো প্রয়োজনের তুলনায় কম পুষ্টিমানের খাবার খায়। ৪০ শতাংশ শিশু পুষ্টির অভাবে খর্বকায় হয়ে জন্মাচ্ছে। বাংলাদেশের খবরের অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছু অনিয়মের কারণে সরকারের চলমান জাতীয় পুষ্টি প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও তদন্ত করে দেশের বেশ কয়েকটি উপজেলার পুষ্টি কার্যক্রমে দুর্নীতির প্রমাণ পায়। তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া পুষ্টি খাত উন্নয়নে সরকারের ২০১১ সাল থেকে শুরু করা পাঁচ বছর মেয়াদি ৫৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ৫১৯ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে ওই পর্যন্তই। এ ব্যাপারে দুর্নীতিবিরোধী সরকারি এ সংস্থার আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবার সম্পর্কে অসচেতনতার কারণেও অনেকে অপুষ্টিতে ভুগছে। অথচ দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি পর্যায়ে জাতীয় পুষ্টি সেবা কার্যক্রমে গতি নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার থেকে পুষ্টি সপ্তাহ উদযাপন শুরু হচ্ছে। ‘খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবুন’ স্লোগানে এ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে আজ সোমবার থেকে। চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান এ প্রসঙ্গে গতকাল রোববার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্প্রসারণ কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি ও পুষ্টি উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে প্রথমবারের মতো জাতীয় পুষ্টি সেবা সপ্তাহ উদযাপন করা হচ্ছে।’ জানতে চাইলে খাদ্য অধিকার আন্দোলনের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনে সরকারের অগ্রগতি আছে। সরকার গরিবদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এরপরও অনেক মানুষ খাদ্যে পরিপূর্ণ পুষ্টি পাচ্ছে না দারিদ্র্যের কারণে।’ তবে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবদুল আজিজ মনে করেন, ‘অপুষ্টিতে ভোগার অন্যতম কারণ হলো অসচেতনতা। কোন খাদ্যে কি পরিমাণ পুষ্টি আছে, কোন কোন খাবার দরকার, তা অনেকেই জানে না। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি মানুষের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), শিশু সংস্থা (ইউনিসেফ), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যৌথভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। সংস্থাগুলোর সবশেষ যৌথ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, ‘গত দশ বছরে এখানে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে সাত লাখ। নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ দরকারি পুষ্টিমানের খাবার পাচ্ছে না। তবে অপুষ্টির শিকার মানুষের মোট সংখ্যা বাড়লেও জনসংখ্যার অনুপাতে কমেছে।’ ‘বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি ২০১৭’ শিরোনামে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) দেশীয় প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বিগবেদার বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫৫ লাখ শিশু অপুষ্টির শিকার। তারা সব রকমের অধিকার ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত।’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় শহরের বস্তিগুলোয় পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪০ শতাংশ শিশু পুষ্টির অভাবে খর্বকায়। বয়সের তুলনায় তাদের উচ্চতা কম। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় বস্তির শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১১-২০১২ সালের জরিপ অনুযায়ী, বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোয় খর্বকায় শিশুর হার ছিল ৫১ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার খাদ্য ও পুষ্টিকে গুরুত্ব দেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সরকারের জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫)-এর চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশের ১৮ শতাংশ গর্ভবতী মা অপুষ্টির শিকার। অপুষ্টির কারণে ২৩ শতাংশ শিশু জন্ম নিচ্ছে কম ওজন নিয়ে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১