আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০১৮
চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে এ বছরের নোবেল পুরস্কার জয়ীদের নাম ঘোষণা। চলবে মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত। ইতোমধ্যে চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি। আর আজ শুক্রবার জানা যাবে এ বছর শান্তিতে নোবেল জয়ীর নাম। তবে এরই মধ্যে এই বিভাগের পুরস্কার নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। কে বা কারা এই পুরস্কার জিতছেন সে আলোচনার পাশাপাশি আগে যারা এই পুরস্কার জিতেছেন তাদের কয়েক জনের পুরস্কার পাওয়া নিয়েও আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। আলোচনার মধ্যে এই খাতে নোবেলজয়ী কয়েক জনের পুরস্কার প্রত্যাহারের বিষয়ও রয়েছে। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে এই আলোচনার শীর্ষে আছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। সম্প্রতি কানাডা তার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের খবর সেই আলোচনাকে আরো উসকে দিয়েছে। তবে নোবেল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, সু চি সম্প্রতি তার দেশের সেনাবাহিনী পরিচালিত অভিযানে সহিংসতার শিকার নাগরিকদের রক্ষা করতে না পারলেও ১৯৯১ সালে তাকে দেওয়া নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। নোবেল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক লারস হাইকেনস্টেন বলেছেন, অং সান সু চি তার নোবেল পুরস্কার হারাচ্ছেন না। মিয়ানমারের নেতারা বেসামরিক লোকজনকে প্রতিরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, তাদের আগের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া পুরস্কার প্রত্যাহার করে নিতে হবে। পুরস্কার পাওয়ার পর তারা কী করছেন সেটা কমিটির বিবেচ্য বিষয় নয়। চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার ঠিক আগের দিন লারস হাইকেনস্টেন বলেন, বিচারকরা জয়ীদের আগের কাজের বিষয় বিচার করেই পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করেছেন। সেখানে কোনো ভুল হওয়ার অবকাশ নেই। তবে রোহিঙ্গা নিধনের দায় সু চি এড়াতে পারবেন না। সারা বিশ্বই সেই ঘটনা দেখেছে। সে সময় সু চির নীরব থাকাটা সত্যি খুবই দুঃখজনক। এদিকে চলতি বছরের আগস্ট মাসে সু চির নোবেল প্রত্যাহারের বিষয়ে একই কথা জানায় শান্তিতে নোবেল দেওয়া প্রতিষ্ঠান ‘নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি’। সে সময় ওই কমিটির মহাসচিব ওলাভ এনজয়েলস্টাড বলেন, আপনাদের মাথায় রাখতে হবে পদার্থ, সাহিত্য বা শান্তি যে ক্ষেত্রেই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হোক না কেন তা দেওয়া হয় অতীতের অর্জনের জন্য। অং সান সু চিকে নোবেল দেওয়া হয়েছিল ১৯৯১ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার জন্য। নোবেল কমিটির নিয়ম অনুযায়ী পুরস্কার কেড়ে নেওয়া বা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান ওলাভ এনজয়েলস্টাড। নরওয়ের নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইজ অ্যান্ডারসনের ভাষ্য, নোবেল পাওয়া ব্যক্তির পরবর্তী জীবন পর্যবেক্ষণ করা নোবেল কমিটির কাজ নয়। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে কয়েক মাস মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে নিধনযজ্ঞ হয়েছে তাকে গণহত্যা হিসেবেই আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিবও সম্প্রতি এই ইস্যুতে সু চির সমালোচনা করেছেন। অনেকে এই ঘটনায় সু চির নীরবতাকে তার নৈতিক ব্যর্থতা হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। গত মাসে সু চিও বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি ভিন্নভাবেও সামাল দেওয়া যেত। শান্তির নোবেল জয়ের দৌড়ে ৩৩১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান : ডিনামাইটের আবিষ্কারক সুইডিস বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল যুদ্ধে তার আবিষ্কারের ভয়াবহতা দেখে শঙ্কিত হন। তাই বিজ্ঞানের আবিষ্কার যাতে মানুষের কল্যাণে ব্যবহূত হয়, সে লক্ষ্যে বিজ্ঞানীদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি পুরস্কার প্রদানের চিন্তা করেন। তিনি ডিনামাইট থেকে আয় করা সম্পদের ৯৪ শতাংশ এই কাজের জন্য উইল করে যান। তার সেই উইল অনুসারে ১৯০১ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। মোট ছয়টি খাতে বর্তমানে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। দুই বিশ্বযুদ্ধের সময় ছাড়া প্রায় প্রতিবছরই চিকিৎসা, পদার্থ, রসায়ন, শান্তি ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কারের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পাচ্ছেন শত শত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ বছরও শান্তিতে নোবেল জয়ের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে ৩৩১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান। নোবেল প্রাইজ ডটওআরজির ওয়েবসাইটের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এর মধ্যে ২১৬ ব্যক্তি ও ১১৫টি সংগঠন রয়েছে। ২০১৬ সালে এই ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য সর্বোচ্চ ৩৭৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির অভিযোগে সমালোচনার মুখে এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার স্থগিত করেছে সুইডিশ একাডেমি। আগামী বছর ২০১৮ ও ২০১৯ সালের দুটি পুরস্কার একবারে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে সর্বশেষ ১৯৪৩ সালে এই পুরস্কার দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘ সাত দশকের বেশি সময় পর আবারো একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১