বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৮

যথাযথ তদারকির অভাবে দিন দিন মাত্রা ছাড়াচ্ছে

শীতে ঢাকাবাসীর ‘অভিশাপ’ হয়ে আসবে ধূলিদূষণ

ধুলা দূষণে নাকাল নগরবাসী সংগৃহীত ছবি


নির্মাণাধীন বিভিন্ন অবকাঠামো, অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা কাটাকাটিসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ধূলিদূষণে বিপর্যস্ত ঢাকাবাসী। বিষয়টি বর্তমানে পরিবেশ দূষণ ছাড়িয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে। আসন্ন শীতের আগে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এই দূষণ নগরবাসীর জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ভয়াবহ এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা ও কঠোর তদারকির পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, রাস্তা ও ফুটপাতের সংস্কারে যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ছে আবর্জনা ও ধূলি। ধূলিদূষণের এ মাত্রা যথাযথ তদারকির অভাবে দিন দিন তা মাত্রা ছাড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্মাণ খাতের এই নৈরাজ্যকর অবস্থা ও কর্তৃপক্ষের ‘উদাসীনতা’ মহানগরীর হাজারো বাসিন্দার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাতে তারা বলছেন, ২০১৬ সালে ধূলিদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৩৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।  প্রয়োজনীয় নজরদারি না হলে চলতি বছর কেবল রাজধানী ঢাকায় মৃত্যুর ওই সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সুইডিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এনআইএলইউ) এক গবেষণায় নির্মাণকাজের নির্মাণসামগ্রী খোলা অবস্থায় ফেলে রাখাকে ধূলিদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে। ওই গবেষণায় আরো বলা হয়, নির্মাণকাজের সামগ্রী খোলা অবস্থায় ফেলে রাখা শহরের ধূলিদূষণের জন্য দায়ী ১৮ শতাংশ।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত সম্প্রতি একটি বার্তা সংস্থাকে এই বিষয়ে বলেছেন, এই (ঢাকায়) শহরে ধূলিদূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে এই অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। জরুরি ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শীতে বাসিন্দাদের ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়তে হবে। এই অবস্থায় লাগাম টানার সক্ষমতা কর্তৃপক্ষের আছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, শুধু রাস্তাঘাটেই নয়, বাসাবাড়ি বা অফিস কক্ষেও দেখা যায় এক দিনে ব্যবধানেই মেঝেতে বা আসবাবে ধূলির স্তর জমে যাচ্ছে। তা নানাভাবে মানুষের শরীরেরও প্রবেশ করছে। এর প্রভাবে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকার দূষণের মাত্রা পরিমাপে পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ধূলিদূষণের মাত্রা কমাতে শীতে প্রতিদিন রাস্তায় পানি ছিটানোর পরামর্শ দেন এই পরিবেশ বিষেশজ্ঞ। এ ছাড়া ভবন বা অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের সময় সেগুলো যতদূর সম্ভব কাপড় বা চট দিয়ে ঘিরে রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যথাযথ তদারকি আর সঠিক পরিকল্পনার অভাব, বিদ্যমান আইন প্রয়োগের অভাব এবং সঠিক সময়ে দূষণের মাত্রা পরিমাপ না করার কারণেই দূষণ ইতোমধ্যে মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। নভেম্বর থেকে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে যদি পর্যাপ্ত বৃষ্টি না নামে তবে অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তিনি মনে করেন, বিষয়টি নিয়ে সরকার এবং সশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাব দূষণের মাত্রাকে লাগামহীন করেছে।

পরিবেশ আন্দোলনের মহাসচিব আবদুল মতিন বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এই অবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী। আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই। কিন্তু আমাদের চাওয়া সেটা পরিবেশকে রক্ষা করে করা হোক।

তিনি বলেন, এর দায় দুই সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। তারা রাস্তাঘাট ঠিকমতো পরিষ্কার করছে না। তাদের বর্জ্য ব্যস্থাপনার দশাও বেহাল। কোনো কারখানা বা যানবাহনে থেকে কালো ধোঁয়া কতটুকু নির্গত হচ্ছে সে বিষয়েও তারা কোনো পর্যবেক্ষণ করছে না। সিটি করপোরেশনগুলোকে নগর পরিচ্ছন্নতায় আরো আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে।

পরিবেশ অধিদফতরের বায়ু ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মাদ জিয়াউল হক বলেন, আমরা দেখেছি ঢাকার বায়ুদূষণ বা ধূলিদূষণের পেছনে পাঁচটি কারণ বড় রয়েছে। শহরের আশপাশের ইটভাঁটা, রাস্তা খনন, ভবন নির্মাণ, কালো ধোঁয়া ও সিমেন্ট বর্জ্যই পুরো শহরকে ধূলিকবলিত করছে।

তিনি বলেন, এগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি। তাদের অনুরোধ করেছি দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই বিষয়ে চুক্তি করতে। কিন্তু সেখানে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। তার মতে, সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা আর অংশগ্রহণ ছাড়া এই দূষণ রোধ করা সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই দূষণ ফুসফুসের ক্যানসার, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের মধ্যে ফেলছে নগরবাসীকে। সম্প্রতি এসব রোগের প্রকোপ বেশ বেড়েছে বলেও জানান তিনি। তাই এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১