বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৮

গফরগাঁওয়ে পুকুরপাড়ে বিদ্যালয়

শংকা নিয়ে চলে পাঠদান

টাঙ্গাব দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংগৃহীত ছবি


নজরুল ইসলাম, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে পুকুরপাড়ের একচিলতে জমির ওপর টাঙ্গাব দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার কক্ষের একতলা ভবন অবস্থিত। বিদ্যালয়ের টয়লেট পুকুরের অপর প্রান্তে। পাড় ভেঙে বারান্দা ছুঁই ছুঁই করছে পুকুর। বিদ্যালয় ভবনটিও ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। সামনে বারান্দা ছুঁয়ে পুকুর, পেছনে ভবন ঘেঁষে বিল, একপাশে ব্যস্ত সড়ক আর অন্যপাশে বসতবাড়ির গাছপালা। ফলে স্কুল চলাকালে পুরো সময় প্রায় বন্দি হয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয়। খেলাধুলার ন্যূনতম সুযোগও নেই। এ অবস্থায় ক্লাসের ফাঁকে কখনো শিক্ষার্থীরা বারান্দায় বের হলেও দুর্ঘটনার ভয়ে দুজন শিক্ষককে পাহারায় থাকতে হয়। অদ্ভুত এই পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আশংকাজনকভাবে কম হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাব গ্রামের জনৈক আবদুল্লাহ মণ্ডল ও আবদুল বারী মণ্ডল নামে দুই ব্যক্তি বিদ্যালয় করার উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে টাঙ্গাব মৌজার চরবিলের মাঝখানে ১০১ নং খতিয়ানের ২২২০-২২২১ নং দাগে ৫২ শতাংশ জমি দান করেন। কিন্তু পরে টাঙ্গাব দক্ষিণপাড়া রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয় দান করা জমি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরের পুকুরপাড়ে মাত্র ৪ শতাংশ জমির ওপর। ২০০১ সালে পুকুরপাড়েই সরকারি অনুদানে চার কক্ষের একতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হলেও জায়গা না থাকায় টয়লেট নির্মাণ করা হয় প্রায় ৫০ গজ দূরে পুকুরের অপর প্রান্তে। ২০১৩ সালে সরকারি ঘোষণায় বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ের নামে একটি ভবন বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু জমি না থাকায় বরাদ্দটি বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৩৭ শিক্ষার্থী এবং ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। শিশু শ্রেণি থাকলেও পুকুরের ভয়ে এলাকার কোনো অভিভাবক তাদের শিশুসন্তানকে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করান না।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিফিন পিরিয়ডে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ফুটবল নিয়ে বারান্দায় খেলা করছে। প্রধান শিক্ষক রাহিমা খাতুন ও সহকারী শিক্ষক শাহজাহান কবীর বারান্দার একপাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের পাহারা দিচ্ছেন। এ সময় হঠাৎ ফুটবলটি পুকুরের পানিতে পড়ে গেলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শফিক, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আনজাম দৌড়ে গিয়ে ঢিল ছুড়ে বলটি তীরে আনার চেষ্টা করছে। অন্য শিক্ষার্থীরা বলের জন্য অপেক্ষা করছে।

প্রধান শিক্ষক রাহিমা খাতুন বলেন, স্কুলের সামনের পুকুরটি জমিদাতার স্বজনদের। আমরা তাদের প্রস্তাব দিয়েছিলাম স্কুলের নামে থাকা বিলের জমি নিয়ে পুকুর থেকে বিদ্যালয়কে কিছুটা জমি ছেড়ে দিতে; কিন্তু তারা রাজি হননি। স্কুল চলাকালে আমরা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। ছোট ছেলেমেয়েগুলো ক্লাসের ভেতর প্রায় বন্দি হয়ে থাকে। বাইরে বের হলেই বিপদ হতে পারে। তাই ছুটির সময় বা ক্লাসের ফাঁকে বাচ্চারা শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হলেই পাহারা দিতে হয়। তা ছাড়া বিদ্যালয় ভবনটিও ভাঙনের মুখে রয়েছে। যে কোনো সময় পুকুরে ধসে পড়তে পারে।

টাঙ্গাব দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান বিএসসি বলেন, ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ের নামে একটি ভবন বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু জমি না থাকায় বরাদ্দটি বাতিল হয়ে যায়। সবসময় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও অনেক কমে গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ ছাড়া বিদ্যালয়টি বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে।

জমিদাতা আবদুল্লাহ মণ্ডলের নাতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুুগ্ম সম্পাদক আলতাফ হোসেন মণ্ডল বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়টি যেখানে আছে, সেটি বিদ্যালয়ের জমি নয়। বিদ্যালয়ের জমি হলো পাশের চরবিলের মাঝখানে। সেখানে মাটি ভরাট করে ভবন করা সম্ভব নয়। ১/১১-এর সময় আমরা পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য ৯ শতাংশ জমি বিদ্যালয়কে লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে আর সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হয়নি।

সাদুয়া ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টির বারান্দা ঘেঁষে বিশাল পুকুর। খেলার মাঠ নেই। দুর্ঘটনার শংকার মধ্যে চলে পাঠদান।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি হুমকির মুখে রয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্যও অনিরাপদ। বিদ্যালয়টি সরেজমিনে ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করব।

 

 

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১