বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৮

এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় তিতলি

কাল উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গতকাল মঙ্গলবার ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় সেটি ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভারী থেকে মাঝারি-ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এদিকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে তিতলি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আট দেশের আবহাওয়া দফতর ও ডব্লিউএমওর প্যানেল আসন্ন ঘূর্ণিঝড়টির এই নাম দিয়েছে। তিতলির অর্থ প্রজাপতি।

সেপ্টেম্বর মাসেও বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে তার কোনো নাম দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশেও তার তেমন প্রভাব পড়েনি। ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে এবারের ঘূর্ণিঝড়টি সেটির তুলনায় শক্তিশালী হবে বলে আগেই আশঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি মাসের প্রথম দিকেই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ‘অক্টোবর ২০১৮-এর দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস’ শীর্ষক আউটলুকে যখন আসন্ন এই ঘূর্ণিঝড়টির পূর্বাভাস দেয় তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইদ্রিস আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেছিলেন, ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্য সময়ের ব্যবধান কমে আসার কারণ হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। জলবায়ুর পরিবর্তনসংশ্নিষ্ট কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ার ঘটনা ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি তীব্রতা বাড়ারও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, একই কারণে ঘূর্ণিঝড়-সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের বর্তমান সীমানা স্থলভাগের আরো অভ্যন্তরে বর্ধিত হওয়ারও আশঙ্কা করেছিলেন তিনি।

গতকাল ভারতের আবহাওয়া অফিসের (আইএমডি) তথ্যও ইদ্রিস আলমের সেই ভাষ্যকেই একপ্রকার সমর্থন দিয়েছে। আইএমডির জানাচ্ছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আজ বুধবার সে গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, যা ঘণ্টায় ৭৫ থেকে ৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়বে। আর বৃহস্পতিবার স্থলভাগে আঘাত হানার আগে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের কম থাকলে সে ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। তবে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত হলে তাকে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় বলে। সেক্ষেত্রে উপকূলীয় এলাকার জন্য সাধারণত ৮ নম্বর বা তারও বেশি নম্বরের বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মাদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। তিনি জানান, এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভারী থেকে মাঝারি-ভারী বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১