বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৮

আইএফসির এক দিনের বাংলাদেশি প্রধান মহুয়া

আইএফসির এক দিনের বাংলাদেশি প্রধান মহুয়া ছবি : বাংলাদেশের খবর


ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন- এর সংক্ষিপ্ত নাম আইএফসি। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে এ প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় গুলশানে সুরম্য এক বাড়িতে। বাংলাদেশে এ সংস্থার প্রধান মার্কিন নাগরিক ওয়েন্ডি ওয়ার্নার। ওয়েন্ডির এ পদে এক দিনের জন্য দায়িত্ব নেয় ঢাকার শ্যামপুরের ম্যাচ ফ্যাক্টরি এলাকার মেয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মহুয়া আকতার। ডাকনাম লতা। ১৬ বছরের মেয়েটির আইএফসির প্রধান হওয়া ওর নিজের কাছেই ছিল বিস্ময়ের।

আইএফসির বিশালকায় অফিসটির প্রধানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। মহুয়া নিজেও বলছিল, ‘কখনো ভাবিনি এমন সুযোগ হবে।’

মহুয়ার মতো অসংখ্য কিশোরীর স্বপ্নসম্ভব বিষয়কে বাস্তব রূপ দিতেই এই আয়োজন। আয়োজক, শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। গত ৪ অক্টোবর আইএফসির দায়িত্ব নিয়েছিল মহুয়া। উপলক্ষ ছিল ১১ অক্টোবরের আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। এই আয়োজনকে প্ল্যান বলছে ‘গার্লস টেকওভার’। তারা বলছে, এটি একটি বৈশ্বিক কার্যক্রম। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ১১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। এর পর থেকে বিশ্বব্যাপী ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালনে আয়োজন থাকে গার্লস টেকওভারের। ২০১৬ সাল থেকে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল এই কার্যক্রম শুরু করে।

প্ল্যানের কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট আলিম বারী বললেন, এই ‘গার্লস টেকওভার’ কর্মসূচির মাধ্যমে একজন কিশোরী অথবা যুবা নারীকে নেতৃত্ব প্রদানকারীর ভূমিকা পালনে সহায়তা করা হয়। যাতে তার মধ্যে একটি স্বপ্ন তৈরি হয়, তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে, সে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। যখন সে পেশাগত দায়িত্ব গ্রহণ করবে, তখন যেন ওই নেতৃত্ব প্রদানকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্ল্যানের ঢাকা কার্যালয়ের এ উদ্যোগের সঙ্গী হয় আইএফসি। তারা রাজি হয় নারায়ণগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মহুয়াকে আইএফসির এক দিনের প্রধান করতে।

মহুয়া আগে থেকেই প্ল্যানের শিশু সুরক্ষা দলের সঙ্গে ছিল। কিশোরীদের নিয়ে প্ল্যান বাল্যবিবাহ রোধ, কন্যাশিশুর অধিকার নিয়ে কাজ করার দল গঠন করে। সেই মহুয়াকে খানিকটা শিখিয়ে-পড়িয়েই আনিয়েছিল প্ল্যান কর্তৃপক্ষ আইএফসির ‘দেশীয় প্রধান’ হওয়ার জন্য। তবে যতই শেখানো-পড়ানো হোক, নানা নিরাপত্তায় ঘেরা ঝকঝকে অফিসটিতে ঢুকে মহুয়ার কিন্তু বুক দুরুদুরু করছিল। মহুয়া তা স্বীকার করে বলল, ‘একটু ভয় তো লাগছেই।’

৪ অক্টোবর সকালে আইএফসির কার্যালয়ে ঢোকার খানিক পরে মহুয়ার এই ভীতি কিন্তু কমে যায়। যার পদ সে ‘দখল’ করবে, সেই ওয়েন্ডি ওয়ার্নার খোদ এসে বরণ করলেন নতুন বাংলাদেশি প্রধানকে। মহুয়াকে বললেন, ‘তোমার মতো কিশোরী তো আমিও ছিলাম। আজ এ পদে এসেছি। তুমিও পারবে।’

কথা বলে চলে গেলেন ওয়েন্ডি। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিতে এবার ‘তার অফিস’ ঘুরে ঘুরে আইএফসির ঢাকা কার্যালয়ের কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হতে লাগল মহুয়া। খুদে নতুন অফিসপ্রধান পেয়ে খুশি আইএফসির প্রোগ্রাম অ্যাসিস্ট্যান্ট নাদিয়া ইসলাম। বললেন, ‘ধারণাটি অভিনব আর এর বড় একটি প্রভাব আছে। নিশ্চয়ই মহুয়াকে দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে।’

আইএফসির কার্যালয়ে দেশীয় প্রধান ওয়েন্ডির ঘরে ঢুকে পড়ল মহুয়া। ওয়েন্ডি এসে ওকে অভিনন্দন জানালেন। ছেড়ে দিলেন নিজের আসন। ওয়েন্ডির আসনে বসে মহুয়া জানতে পারল আইএফসির নানা কার্যক্রম। মহুয়া শুনেছে, আইএফসি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। কিশোরীর তাই প্রশ্ন, ‘আমরা যেমন ব্যাংকে টাকা রাখি, এখানেও কি এভাবে রাখা যায়?’

ওয়েন্ডি জানান, আইএফসি এমন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়ন, সম্পদ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিনিয়োগেও পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ও তৈরি পোশাক খাতে এবং ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কাজ করে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে অনেক বিনিয়োগ করেছে সংস্থাটি। বছর ১৫ আগেও ওয়েন্ডি আইএফসিরই অন্য দায়িত্বে এই বাংলাদেশেই ছিলেন। বলেন, ‘সেই সময়ের বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের অনেক পার্থক্য। এ সময়ে বাংলাদেশ আর্থসামাজিক নানা খাতে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে।’

প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানার পর মহুয়া নিজের সম্পর্কেও জানায়। কেমন করে নগরের একটি প্রান্তে বাস করে ওরা নানা সচেতনতামূলক কাজ করে, তা শোনায়। জানায়, ওদের দল দুটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছে। এ কথা শুনে ওয়েন্ডির চোখ কপালে ওঠে। এই সাহসী আচরণ বজায় রাখতে বলে মহুয়াকে।

পদ ছেড়ে দিয়ে কেমন লাগছে? হাস্যোজ্জ্বল ওয়েন্ডির উত্তর, ‘নতুন দেশীয় প্রধান অনেক স্মার্ট।’ ওয়েন্ডি বিশ্বের নানা দেশে কাজ করেছেন। তবে এমন অভিজ্ঞতা তার এই প্রথম বলে জানালেন। বললেন, ‘এটি প্রতীকী হলেও এর গুরুত্ব অনেক। আজ মহুয়ার এ ঘটনা অনেক শিশুকে অনুপ্রাণিত করবে।’


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১