বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৮

ভিন্নমত

রাজনীতি কেন আজ সবার ভাউজ?

এহন রাজনীতি হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের মতো সংগৃহীত ছবি


মোহাম্মদ আবু নোমান

‘আমাদের গ্রামে একটা প্রবাদ আছে, গরিবের বউ নাকি সবারই ভাউজ। অহনে যারা শহরে থাকেন, তারা তো ভাউজ চিনবেন না। ভাউজ হইল ভাবি। ভাইয়ের বউকে ভাবি ডাকি আমরা, গ্রামে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাবিদের ভাউজ ডাকা হয়। আর গরিবের বউ হলে মোটামুটি পাড়া বা গ্রামের সবাই আইস্যা ভাউজ ডাকে। এহন রাজনীতি হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের মতো। এখানে যে কেউ, যেকোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে। কোনো বাধা বিঘ্ন নাই।’ স্বভাবসুলভ রসবোধ আর কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণে গত ৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বক্তব্যে পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের রাজনীতিবিদ বনে যাওয়ার প্রবণতাকে কটাক্ষ করেছেন এসব কথা বলে।

কথা সত্য; মুগ্ধ করার মতো সরলতা, অকপটতা ও রসবোধে অতুলনীয় রাষ্ট্রপতি কৃত্রিমতা ছাড়া ঠিক কথাই বলেছেন। কিন্তু এদেশে কে শুনবে কার কথা! বাংলাদেশের রাজনীতি তো ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থা। রাষ্ট্রপতির হালকা মেজাজে বলা কথাগুলো হালকাভাবে না নিয়ে গভীরে খুঁজে দেখা দরকার। সবাই এখন রাজনীতি করতে চায়। তার কারণ কী? কারণ হলো- বর্তমানে রাজনীতি একটা লাভজনক ব্যবসা! এখন দেশপ্রেমের রাজনীতি কেউই করে না। আগে সমাজের মহৎ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগীরা স্ব-উদ্যোগে, নিজের অর্থ, বাপের সম্পত্তির ওপর, বিভিন্ন সেবামূলক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল গড়ে পৈতৃক সম্পত্তি নিঃশেষ করতেন। আর এখন নিঃস্বরা রাজনীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়!

তখন উদ্দেশ্য ছিল সেবার ও শিক্ষার প্রসার। বর্তমানে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও তার উদ্দেশ্যও থাকে ব্যবসা। আর রাজনীতি! এখানে শুধুমাত্র চামচামি আর তেল মাখাতে পারলেই বিনা পুঁজিতে সবচেয়ে বেশি লাভ! এজন্যই চাকরিরত অবস্থায় ডাক্তার, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা তাদের পেশাগত দায়িত্বের চেয়ে ক্ষমতাসীনদের দালালি, চামচামি, গলাবাজি আর টকশোতে সময় বেশি দেয়। রাজনীতির জন্য বিশেষ কোনো পূর্বযোগ্যতা থাকতে হয় না। ক্ষমতায় গেলেই কোনো না কোনোভাবে টাকা বানানো যায়। এভাবেই সরকারি আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে, চাকরি জীবনে এরা দুর্নীতির ষোলকলা পুরা করে। পরিশেষে চাকরি শেষে রাজনীতিতে লেগে পড়ে। কারণ, চাকরি শেষে রজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় না পেলে অথবা বিদেশে পাড়ি না দিলে অবৈধ সম্পদের নিরাপত্তা থাকে না। এ ছাড়া রাজনীতি হলো পা চাটার মতো, খাবার দিলেও থাকবে, লাথি মারলেও থাকবে। অর্থাৎ লেজুড়বৃত্তি রাজনীতিতে দলের প্রধানরা যাই বলুক তাতেই নাচতে হবে, নিজ দলের দেশপ্রেমের দোহাই, কি সংবিধানের দোহাইসহ যেকোনো সিদ্ধান্ত নিক না কেন বলতে হবে ভালো!

এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘আমাদের দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে না।’ প্রকৃতপক্ষে গুণগত পরিবর্তন শুধু রাজনীতিতেই নয়, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। এর জন্য প্রয়োজন সব ধর্মের ধর্মীয় ও নৈতিকতামূলক শিক্ষা, জনসচেতনতা আর প্রয়োগের জন্য দরকার সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্ব।

মহামান্য রাষ্ট্রপতির সব কথারই যুক্তি আছে। বক্তব্যের গভীরতা ও তাৎপর্য ব্যাপক। মজা করে বললেও অনেক জায়গায় তিনি স্পষ্ট করেছেন আমাদের গলদগুলো কোথায়। কিন্তু এখন রাজনীতিতে কোনো নীতি, আদর্শ আছে কি? রাজনীতি বর্তমানে অতি মুনাফার পেশা, যেখানে অবসরেরও মেয়াদ নেই। এজন্য রাজনীতি করতে হলে, কর্মী ও নেতা পর্যন্ত একটা যোগ্যতা নির্ধারণ করা দরকার। রাজনীতি যেন একটা টাঁকশাল! রাজনীতি যেন শুধু ন্যায়নীতি লঙ্ঘন, যেখানে স্বার্থান্বেষীরাই সর্বেসর্বা, রাজনীতি আজ যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্যত্ববোধকে হত্যা, রাজনীতির মাঠটা কিছু অসৎ পরগাছার অবাধ বিচরণ; রাজনীতি যেন শুধু গরিবের কান্না, রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলা, রাজনীতি মায়ের কোল, বাবার বুক খালি করে দেওয়া, রাজনীতির কোথায় সে ‘নীতি’! যেখানে এখন ভর করে চলছে মিথ্যা আর অসৎদের পদচারণা।

রাষ্ট্রপতি মহোদয় মাঝে মধ্যেই কিছু অপ্রিয় সত্য উপহার দেন। যা কতিপয় ছোট মনের মানুষের কাছে খারাপ লাগতে পারে। সত্য কথা সমালোচনার ভয়ে অনেকেই বলতে চায় না। কথায় আছে— ‘উচিত কথায় মাওই বেজার, ডাইল ভাতে বিড়াল বেজার।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সমাজের প্রথম শ্রেণির জায়গায় রসিকতা করতেও কলিজা লাগে, হিম্মত লাগে, গুণ লাগে। যা কিনা আজ পর্যন্ত কাউকেও এভাবে দেখা যায়নি। চটাং চটাং কথা বলা, কতিপয় দিবস ও জানাজায় অংশগ্রহণ করা, আর ভাব ধরে রাখার নামই ব্যক্তিত্ব নয়। নিজেকে নিয়ে রসিকতা সবাই করতে পারেন না। তার জন্য অসামান্য আত্মবিশ্বাস ও সৎসাহস প্রয়োজন।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি একজন সাদা মনের, ভালো ও ভদ্র মানুষ, স্পষ্টভাষী, যার সরলতা ও রসবোধ অতুলনীয়। সততা ও সারল্য অতি দুর্লভ মানবিক গুণ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে গেলে তিনিই। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অন্তিম মুহূর্তে তার কাছে সর্বসাধারণ অনেক কিছুই আশা করছে। জনগণের স্বার্থে, দেশের কল্যাণে, স্বচ্ছতার মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ, পছন্দের প্রার্থীকে ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ভোট দিয়ে নিরাপদে, নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতে পারে, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে এরকম পরিবেশ তৈরিতে আপসহীন ভূমিকা কামনা করে দেশের সর্বসাধারণ।

লেখক : নিবন্ধকার

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১