আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৮
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা আরো সপ্তাহখানেক পর। তবে এর মধ্যেই আগের বছরগুলোর মতো সক্রিয় হয়ে উঠেছে জালিয়াত চক্র। চক্রটি পরীক্ষার্থীদের টাকার বিনিময়ে দিচ্ছে ভর্তির আশ্বাস। আগের কয়েক বছরের মতো এবারো এই চক্রে ছাত্রলীগ নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংগঠনটির এক নেতার জড়িত থাকার বিষয়ে একটি ফোনালাপও ফাঁস হয়েছে। অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক তারেক আহমেদ খান শান্ত। আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর জন্য ওই ছাত্রলীগ নেতা ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর ৯ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ফোনালাপটি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই অডিওতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, শান্ত ভাইয়া, আমি এবার সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার রেজাল্টও খারাপ। এবার তো রাজশাহীতে পরীক্ষার নতুন সিস্টেম। আমার মনে হয় আসবে না। রেজাল্ট কম। তখন ছাত্রলীগ নেতা শান্ত বলেন, তোমার কত (রেজাল্ট) আছে? জবাবে ভর্তিচ্ছু বলেন, ৯ (জিপিএ) আছে ভাই। আর আমার প্রিপারেশন একটু খারাপ ভাইয়া। এজন্য আপনার কাছে ফোন দিলাম। আমার ফ্রেন্ড বলল, গত বছর ভর্তি হয়েছিল নাকি আপনার মাধ্যমে। বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে যে করেই হোক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। টাকাপয়সা যা লাগে দেবে। শান্ত তখন বলেন, তুমি কোন ইউনিটে ফরম তুলছো? সায়েন্স হলে একটু কঠিন, আর্টসে সহজে করে দেওয়া যাবে। এজন্য ৩ লাখ টাকা লাগবে। এ সময় ভর্তিচ্ছু টাকা কিছুটা কমানোর কথা বললে শান্ত বলেন, ভাই, আমাদের সিস্টেম হচ্ছে প্রক্সি। এখানে ঢাকা থেকে এক্সপার্ট এসে পরীক্ষা দিয়ে যায়। তাদেরকে দিতে হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। একটি সিন্ডিকেট আছে তাদেরও টাকা দিতে হয়। তারপর আমাদের জন্য খুব একটা বেশি লাভ থাকে না। ঠিক আছে তুমি যেহেতু বলছ তোমার জন্য আড়াই লাখে করে দিতে পারব। এর কম হবে না। এরপরও ভর্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে দুজনের মধ্যে আরো কিছু আলাপ হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে আড়াই লাখ টাকায় চুক্তি হয়। এরপর ওই ভর্তিচ্ছুকে রাজশাহীতে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেন ছাত্রলীগ নেতা শান্ত। ফোন রেকর্ডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে তারেক আহমেদ খান শান্ত বলেন, আমার কাছে একটা ফোনই এসেছিল। এর পর থেকে ওই ফোন নম্বর বন্ধ। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমনটা করা হয়েছে। তার অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে রাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্ত ও উপপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ওই দুজনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে অনেক শিক্ষার্থীকে আটক করা হলেও তারা পরে পার পেয়ে যান। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন। এ ঘটনায় তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলেও পরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। একই বছর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন রাবি ছাত্রলীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সজল ও ছাত্রলীগকর্মী মোস্তফা বিন সজল। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ভর্তি জালিয়াতির আইনে মামলাও দায়ের হয়। কিন্তু তারা এখন জামিনে আছেন। এর আগে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে রাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আতিকুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধেও। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শান্তর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমাদের কোনো নেতাকর্মী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত কি না আমার জানা নেই। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কোনো নেতাকর্মীর এসব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এদিকে জালিয়াতি ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সজাগ আছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, গত বছরের মতো এবারো ভর্তি পরীক্ষায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর থাকবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১