আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২০
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের উদাসীনতায় নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। প্রায় ২১শ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বছর দুই আগেও রাস্তায় চলাচলের সময় দেখা যেত অসংখ্য গুইসাপ, বেজি, গিরগিটি, কাঠ-বিড়ালিসহ নানা ক্ষুদ্রপ্রাণীর আনাগোনা। দিনশেষে রাতের বেলায় শিয়াল, বাগডাশ, হুতুম ও লক্ষ্মীপেচাঁসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণির হাঁক-ডাক আর চলাচলের শব্দে চিরকেলে গ্রামীণ রাতের আবহ বাঙময় হয়ে উঠতো এখানে, পড়তে আর পড়াতে আসা ক্যাম্পাসবাসীদের সৃষ্টি করতো জীবনানন্দের কবিতার আবহ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। লাগানো হচ্ছে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। ফলে নষ্ট হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক গাছপালা ও তৎসংলগ্ন ঝোপ-ঝাড় এসব বন্যপ্রাণীর জন্য প্রাকৃতিক অভয়াশ্রমের কাজ করে। কিন্তু আগুন দিয়ে এভাবে এসব জায়গা পরিষ্কার করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। এদিকে, পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু এর ঠিক তিন দিন যেতে না যেতেই ফের পাহাড় কেটে মাটি ভরাট করে রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে। সচেতন ছাত্র সমাজ এসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কয়েক দফা অবহিত করলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জানা গেছে, যিনি পাহাড় কেটে মাটি ভরাট করছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের ডেপুটি রেজিস্ট্রার। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দখলে নেয়ার কারণে তাকে জেল এবং চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে। পরে উপাচার্যের পালাবদলে নতুন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠজন হয়ে উঠেন তিনি। গড়তে থাকেন তার আগের সা¤্রাজ্য। দখলে নেন তার জায়গা। পাহাড় কেটে ভরাট করেন সে জায়গাও। এখন যেন দেখার কেউই নেই। গতকাল রাতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীদের অভয়ারণ্য খ্যাত কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাহাড়েও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘণ্টাব্যাপী সেখানে আগুন জ্বললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এ নিয়ে সাপের বন্ধু খ্যাত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রফিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শুধু রফিকই নয় এ নিয়ে খুব শিগগির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর হুশিয়ারি দেন অনেক শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে পাহাড়ে আগুন, পাহাড় কাটা এসব বন্ধ করতে হবে। আর এসব গর্হিত কাজ যারা করছে তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন বলেন, আমরা পরিবেশবিদ্যা বিভাগ অনেক কষ্ট করে পরিবেশ রক্ষা করতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ক্যাম্পাসে এক হাজার প্রজাতির গাছ শনাক্ত করেছি। কিন্তু অন্যদিকে, পাহাড়ে আগুন দিয়ে ও পাহাড় কেটে এসব কিছু নষ্ট করছে গুটি কয়েকজন মানুষ। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১