আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২০
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ১৩ এপ্রিল, সোমবার পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৩ জনে। রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত দেশে মোট মারা গেছেন ৩৯ জন। সরকার পরীক্ষার আওতা বাড়ানোয় গত তিন থেকে চারদিন ধরে রোগীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। করোনা সংক্রমণ দেশে এখনো এক ধরনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরিস্থিতি আসলে কোন দিকে গড়ায়, তা এখনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদদের ধারণার বাইরে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে (ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি ইত্যাদি) করোনা যে ভয়াবহ সংক্রমণের দিকে গেছে, বাংলাদেশে রোগটির পরিস্থিতি সেদিকে যেন না যায়, তা ঠেকাতে আগেই সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। তেমনই আগে থেকেই বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগের পাশাপাশি করোনার ভয়াল দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের গাইডলাইনও থাকা দরকার বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। করোনার দুর্যোগ রোধে বেশ কিছু গাইডলাইন উপস্থাপন করেছেন রাজধানীর ল্যাব-এইড বিশেষায়িত হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ভাস্কুলার সার্জন ডা. বজলুল গনি ভূঁইয়া। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, ‘ইউরোপের কয়েকটি দেশের মতো যদি আমাদের দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, তখন আইনি কাঠামোর মধ্যে ও সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে জাতীয় কমিটি গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি বিবেচনায় দুই থেকে তিন মাসের জন্য স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় সব মন্ত্রনালয়ের তখন পর্যাপ্ত সংস্থান ও অভিজ্ঞ জনবল দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহায়তা দিতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় জরুরি ত্রাণ তহবিলে ৫০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা জোগাড় করার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবেলাসহ বহুমুখি সহায়তার জন্য যুব মন্ত্রণালয় সারা দেশে লাখো স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখতে পারে। এছাড়া অন্য মন্ত্রণালয়গুলো তখন প্রতিদিনের রুটিন কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘খাদ্য, কৃষি এবং মৎস্য মন্ত্রণালয় হাসপাতালে কর্মরতদের স্বাস্থ্য জনশক্তি হিসেবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাদের দরকারি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রি সরবরাহ করতে হবে। যোগাযোগ মন্ত্রনালয় রোগী, চিকিৎসক ও হাসপাতালের জন্য পরিবহন এবং অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করতে পারে। র্যাব ও পুলিশকে শূন্য সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) সঙ্গে ত্রাণের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কাজ করা উচিত। পেশাদারদের তত্ত্বাবধানে ডায়াগনোসিসে সহায়তার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সংস্থার ল্যাব সুবিধাগুলো নিয়ে তখন এগিয়ে আসা উচিত।’ বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. বজলুল গনি ভূঁইয়া বলেন, ‘চিকিৎসক, নার্স, প্রযুক্তিবিদ ও চিকিৎসা সহায়ক কর্মীদের অগ্রাধিকার স্বাস্থ্য জনশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে তাদেরকে দরকারি সব বিষয়ে সমর্থন দিতে হবে। স্বাস্থ্য, সুস্থতা, সনাক্তকরণ, ডায়াগনোসিস, চিকিৎসা, বিচ্ছিন্নতা, পৃথকীকরণ এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের কবরস্থানের বিষয়গুলোও অগ্রাধিকারে থাকতে হবে। সবার দৃষ্টিভঙ্গি হতে হবে বর্ণ, ধর্ম এবং রাজনৈতিক সম্পর্ককে এড়িয়ে গিয়ে মানবসেবাকেন্দ্রিক।’ তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বিশুদ্ধ পানির পরিষেবাগুলো সব হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংক, বিমা ও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকা-ে সহায়তা করতে পারে। পিপিই, অবকাঠামো, খাদ্য ও সুরক্ষা এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তার লাশ থেকে দূষণ যেন না ছড়ায়, সেজন্য নীতিমালা অনুসরণ করে তাড়াতাড়ি দাফনের ব্যবস্থা হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম বা প্রচারমাধ্যমের উচিত ইতিবাচক মনোভাবসহ কার্যকর সংবাদ সরবরাহ করা বা মানুষের কাছে তুলে ধরা। করোনা দুর্যোগে দেশব্যাপী কোথাও যেন কোনো অস্থিরতা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ দিয়ে মাঠে সতর্ক পাহারায় রাখতে হবে।’ উল্লেখ্য, করোনা প্রতিরোধে ও মানুষের জীবন রক্ষায় ‘আদর্শ আইসোলেশন ওয়ার্ড’ তৈরি, অর্থাৎ সেগুলোকে মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত করতে সম্প্রতি বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন ভাস্কুলার সার্জন ডা. বজলুল গনি। তার এসব প্রস্তাব সরকারের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে বেশ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। প্রস্তাবনা অনুযায়ী দেশের আইসোলেশন ওয়ার্ডগুলোতে পর্যায়ক্রমে যথাসম্ভব ব্যস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১