বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২১

আজ জাতীয় সমবায় দিবস

নিষ্ক্রিয় এক-তৃতীয়াংশ সমবায় সমিতি  


দেশে মোট সমবায় সমিতির সংখ্যা এক লাখ ৯৬ হাজার ৩১৬টি। এর মধ্যে সমবায় অধিদপ্তরের অধীনে এক লাখ ৬ হাজার ৮৯০টি এবং পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) অধীনে ৮৯ হাজার ৪২৬টি। এগুলোর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই নিষ্ক্রিয়। যেগুলো সক্রিয়, সেগুলোর কার্যক্রমও চলছে সীমিত পর্যায়ে। এমন তথ্য উঠে এসেছে সমবায় অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, দেশে প্রাথমিক সমিতির সংখ্যা এক লাখ ৯৫ হাজার ৮৬টি। যার মধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এক হাজার ২০৮টি এবং জাতীয় পর্যায়ে ২২টি। এসব সমবায় সমিতির মোট সদস্য এক কোটি ১৭ লাখ ৭ হাজার ৫১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৯ লাখ ৮১ হাজার ৮৬৫ জন এবং নারী ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৪৯ জন। সমবায় সমিতির মূলধন ১৫ হাজার ৪৪২ কোটি ৫৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। সমিতির ভৌত সম্পদ তিন হাজার ৯০৮ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা। বিনিয়োগকৃত সম্পদ এক হাজার ৭৫৫ কোটি ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। মজুত তহবিল এক হাজার ১১৪ কোটি ৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা। সর্বমোট ৬ হাজার ৭৭৮ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। বিগত সময়ে সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৯ লাখ ৬৩ হাজার ১৫১ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সমিতিগুলো নিষ্ক্রিয় হওয়ার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, সদস্যদের টার্গেট পূরণসহ নানা কারণেই দিনে দিনে এসব সমবায় সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। তবে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে তাদের খুব একটা করণীয় নেই। তারা রেগুলেটরি বডি হিসেবে কেবল উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সমিতির সদস্যদেরই এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, সমবায় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) আওতাভুক্ত সমবায় সমিতির ৩০ শতাংশই অকার্যকর। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ সমিতির মধ্যে প্রায় অর্ধেক অকার্যকর না হলেও কার্যক্রমের পরিধি তেমন বিস্তৃত নয়। ফলে অবদান দৃশ্যমান নয়। প্রতিবেদনে সমবায় খাতের সমস্যা হিসেবে নিবন্ধিত সমবায় সমিতির সংখ্যা অনুযায়ী জনবল স্বল্পতা ও সমিতি ব্যবস্থাপনায় অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানীয় প্রভাবের কথা উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন আরো বলছে, আশির দশকে কৃষি সমবায় সমিতিগুলো খু্বই কার্যকর থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় নিষ্ক্রিয়। এ ছাড়া অন্যান্য সমিতির অবস্থাও একই ধরনের। তবে মৎস্য সমবায় সমিতি, দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডসহ কিছু সক্রিয় সমিতিও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার কৃষি সমবায় সমিতির এক নেতা জানান, আগে তারা সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষিঋণসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা পেতেন। কিন্তু এখন সেটা আগের মতো আর দেওয়া হয় না। তাছাড়া সমিতিতে সক্রিয় রাখতে হলে নিয়মিত সভা, নির্বাচন ও অডিট করানোসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এ কারণে সদস্যরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, তার উপজেলায় ১২০টির মতো সমবায় সমিতি রয়েছে। এর মধ্যে ২০টির মতো দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। বাকিগুলো আমাদের হিসাবের মধ্যে সক্রিয়। তবে সত্যিকার অর্থে নিয়মিত লোন নিচ্ছে, পরিশোধ করছে এবং অডিট ও নির্বাচন ঠিকমতো হচ্ছে এমন সক্রিয় সমিতির সংখ্যা ৫-৭টি।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘নানা কারণে এসব সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়েছে। দেখা যায়, একটি উদ্দেশ্য নিয়ে সমবায় সমিতি করেছে, সেটা বাস্তবায়ন হলে তারা আর সক্রিয় থাকে না। আর ব্যর্থ হলেও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। আবার দেখা গেলো একটি ফান্ড গঠনের জন্য সমিতি করে। একটি পর্যায়ে আসার পর তারা টাকা পয়সা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। পরে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘সমবায় সমিতি যেমন নানা ধরনের, তাদের নিষ্ক্রিয় হওয়ার কারণও ভিন্ন। যেমন তাঁতী সম্প্রদায়ের অনেকগুলো সমবায় সমিতি ছিল। এখন আগের মতো তাঁত নেই। তাঁতীও নেই। যে কারণে তাদের সমিতিগুলো আর সক্রিয় নেই।’ নিষ্ক্রিয় হওয়ার পেছনে সমবায় অধিদফতরের মাঠ প্রশাসনের গাফিলতি থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

আজ জাতীয় সমবায় দিবস। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন’। ৫০তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন সমবায়ের শক্তিকে একটি গণমুখী সমবায় আন্দোলনে পরিণত করতে  সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে চলেছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকারের এ লক্ষ্য পূরণে দেশের সমবায় সংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হবো।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১