আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ নিয়ে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সীমান্তরক্ষী বিএসএফের সাথে পণ্য পরিবহনকারী ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসন না হওয়ায় তৃতীয় দিনের মতো অনিদিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে। পেট্রাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সম্প্রতি সীমান্তে জারি করা হয়েছে নতুন কিছু বিধিনিষেধ। আর তাতেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে রপ্তানি বাণিজ্যে। সেখানে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভারতের ট্রাক চালকদের সমস্ত রকমের সঠিক কাগজপত্র ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। আর তারই প্রতিবাদে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ট্রাক তল্লাশির নামে অত্যাচার চালাচ্ছে বিএসএফ। চালক, মালিক এবং ক্লিয়ারিং এজেন্টদের নাজেহাল করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি ও নানাভাবে জুলুম চালাচ্ছেন।এ অভিযোগে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে বিক্ষোভ করে তারা। বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন সোমবার থেকে অনির্দিস্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। তাদের সমর্থন দেন ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন, বনগাঁ নব মালিক সমিতি, বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সীমান্ত পরিবহণ মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠনসহ কয়েকটি সংগঠন। তবে দুই পক্ষই তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় টানা বন্ধের কবলে পড়েছে বাণিজ্য। এর আগেও গত সপ্তাহে একই দাবিতে ৩ দিন বন্ধ ছিল আমদানি বাণিজ্য। ভারত অংশে ধর্মঘট বা কর্মবিরতিতে বছরের বড় একটি সময় বন্ধের কবলে পড়ে বাণিজ্য। পেট্রাপোল সীমান্তে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে অচলাবস্থা কাটাতে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সোমবার ও মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব পক্ষ আলোচনায় বসলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর, কাস্টমস, বিএসএফ, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ট্রাক মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা তাদের নিজ নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকায় বিষয়টি সুরাহা হয়নি। আজ বুধবার আবারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের শূন্য রেখায় প্রায় দেড় হাজার ট্রাক আমদানি ও রফতানি পণ্য নিয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। এসব পণ্যের মধ্যে শিল্পকলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, অক্সিজেন, কেমিকেল ও শিশু খাদ্যসহ পচনশীল জাতীয় পণ্য রয়েছে। দ্রুত বাণিজ্য চালু না হলে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ছোট-খাট বিষয়ে ধর্মঘট ডেকে বাণিজ্য বন্ধ না করে বৈঠকে সমাধানের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, দেশের চলমান ১২টি বন্দরের মধ্যে সব চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি-রফতানি হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে। বৃহৎ এ বন্দরে সমস্যা থাকবে। তবে কথায় কথায় ধর্মঘট ডেকে বাণিজ্য বন্ধ না করে বিকল্প পন্থায় সমস্যা সমাধানের পথ বের করতে হবে। বাণিজ্য বন্ধ থাকলে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় কমে তেমনি ব্যবসায়ীরাও লোকশানের কবলে পড়েন। যার প্রভাব পড়ে দেশে আমদানি পণ্যের বাজারে। একটি ট্রাক ওপারে আটকে থাকলে দিনে দুই হাজার রূপি বাড়তি গুণতে হয়। এছাড়া শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন কাজে বিঘ্ন ঘটে। বিষয়টি নিরসনে বাংলাদেশ কাস্টমস বা বন্দরের ভূমিকা রাখতে হবে। বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোকন পাল বলেন, রবিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত থেকে কোনও ট্রাক বাংলাদেশে যায়নি। বিএসএফ এবং পেট্রাপোল বন্দরের ম্যানেজার কমলেশ সাইনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা আলোচনা চাই। তবে কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত সেই আবেদনে সাড়া দেননি। পেট্রাপোল স্থলবন্দর বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন খোকন। দুই দিন ধরে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিএসএফ প্রতিনিধিদের সাথে ব্যবসায়ীদের বৈঠক হচ্ছে। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল। ব্যবসায়ীরাও অবৈধ হস্তক্ষেপ মানছে না। এতে বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বন্দরের নিরাপত্তায় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ থাকবে। তবে তারা যদি বাণিজ্যে হস্তক্ষেপে সময়ক্ষেপণ করে তবে ধীরগতি আসবে পণ্য পরিবহনে। দিনে প্রায় সহসাধিক ট্রাক পণ্যের আমদানি-রপ্তানির চাহিদা থাকলেও সীমান্তরক্ষী বিএসএফের হস্তক্ষেপে চাহিদার অর্ধেক পণ্যও আমদানি বা রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ম্যানেজার কমলেশ সাহানির অভিযোগ, সম্প্রতি এই সীমান্তে বহি:বাণিজ্যের ট্রাক থেকে সোনা, গাঁজা, জাল লাইসেন্স উদ্ধার করেছে বিএসএফ। এরপর থেকে কেন্দ্র সরকার দেশের স্বার্থে সীমান্তে কিছু নিয়ম জারি করার নির্দেশ দিয়েছে। ট্রাক চালকসহ অন্যদের কমন আই কার্ড চালু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, চলমান সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে যাতে দ্রুত বাণিজ্য চালু হয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় ভারতের সাথে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য খালাস সচল রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারীযাত্রী যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১