বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩

ব্যাটারি পোড়ানোর কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত অ্যাসিড ছড়িয়ে দূষিত হচ্ছে ফসলি জমি


বদিউজ্জামান রাজাবাবু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বেতবাড়িয়া এলাকায় ফসলি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানা। সেখানে অর্ধেক দামে কিনে নেওয়া হচ্ছে অটোরিকশা ও চার্জার ভ্যানের পুরাতন ব্যাটারি। আর রাতের আঁধারে সেই ব্যাটারি পুড়িয়ে বের করা হয় সীসা। এই ব্যাটারি পোড়ানোর কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত অ্যাসিড ছড়িয়ে দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার ফসলও।
এদিকে, প্রশাসনের নজর এড়াতে কাপড় ও ইট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে কারখানার আশপাশ। কোনো অনুমোদন ছাড়াই ফসলি জমিতে এমন স্পর্শকাতর পদার্থের কারখানা গড়ে তোলার প্রতিবাদ জানিয়ে তা বন্ধের দাবি স্থানীয় কৃষকদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আলিম বলেন, জনবসতিহীন এলাকা হওয়ায় নির্জনতার সুযোগে এই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। রাত গভীর হলেই পোড়ানো হয় ব্যাটারি। এসব পোড়া ব্যাটারির নির্গত সীসা ও অন্য পদার্থ পুনরায় ব্যাটারি তৈরির কারখানায় বিক্রি করা হয়। রাতে যখন ব্যাটারি জ্বালানো হয়, তখন আশপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বিষাক্ত ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়।
কারখানার পাশেই আট বিঘা ফসলি জমি আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারোঘরিয় বাজারের ফয়সাল আহমেদের। তিনি বলেন, এই কারখানা স্থাপনের ফলে আমার আমবাগানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি আশপাশের সব জমির একই অবস্থা।
শিবগঞ্জের নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের মর্দনা গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, রাতে পুরোনো ব্যাটারিতে আগুন দেওয়া হয়। সেসময় বিশাল কুণ্ডলী তৈরি হয়। ব্যাপক গন্ধযুক্ত ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে ওঠে বাতাস।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে কৃষি জমিতে কোনো ধরনের কলকারখানা করা যাবে না। অথচ এখানে ব্যাটারির অ্যাসিড বের করা, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খোলা ও ব্যাটারি পোড়ানোর মতো কাজ করা হচ্ছে। কৃষি জমি ও পরিবেশের ক্ষতি হলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
জানা যায়, পুরাতন ব্যাটারির এই কারখানায় এখানে দৈনিক ১০০-১৫০টি ব্যাটারির যন্ত্রাংশ খোলা ও আগুনে পোড়ানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক জানান, পুরাতন ব্যাটারিগুলো খুলে যন্ত্রাংশগুলো আলাদা করা হয়। রাতে ব্যাটারি পুড়িয়ে তা থেকে বিশেষ পদার্থ তৈরি করা হয়। অ্যাসিডের বিষয়ে তিনি বলেন, আশপাশে গর্ত করে অ্যাসিডগুলো রাখা হয়।
এ বিষয়ে কারখানা মালিক রাসেল আলী বলেন, আমরা এখনো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাইনি। তবে আবেদন করতে গিয়েছিলাম। আমরা কারখানার নিবন্ধন নেওয়ার চেষ্টা করছি। আর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, জেলায় এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তাছাড়া কৃষি জমির ক্ষতি করে এভাবে ব্যাটারির অ্যাসিডের কারখানা করতে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এটি পরিবেশের জন্য যেমন মারাত্মক ক্ষতিকর, তেমনি ফসলের জন্যও ভয়ঙ্কর ক্ষতির কারণ।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রওশন আলী বলেন, এখনো আমাদের কাছে কোনো কৃষক বা স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করেননি। এরপরেও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১