আপডেট : ১৬ মে ২০২৪
তরিকুল ইসলাম সুমন: প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবলের ঘাটতিতে রয়েছে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। তা সত্যেও হাসপাতালটি সেবাদানে সুনাম কুড়িয়েছে। শুধু শহর নয়, দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের রোগীরাও এখানে আসছেন চিকিৎসা নিতে। গড়ে দিনে ৭ হাজার রোগী আসেন বহির্বিভাগে। ভর্তি রোগী, বহির্বিভাগের রোগী, রোগীর সেবা সহকারী থেকে শুরু করে প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ হাজার লোক সমাগত হয় হাসপাতালটিতে। এসব মানুষের সেবা নিশ্চিত করা বেশ কষ্টকর। সুনামের কারণে এখানে সর্বস্তরের রোগী আসছেন। বর্তমানে এখানে প্রতিদিন ৩০-৪০ জনের বেশি ক্যান্সার রোগীকে সেবা (ক্যামোথেরাপি) দেয়া হয়। তবে চাহিদা আরো বেশি। এখানে ক্যান্সারের সেবা আসা অধিকাংশ রোগীই ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ফেরত। বিদেশে তারা চিকিৎসা সেবায় সন্তুষ্ট হতে না পেরেই কুর্মিটোলায় আসছেন বলে জানিয়েছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান। সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা প্রসঙ্গে এই পরিচালক বলেন, দেশের সর্ব স্তরের মানুষের সেবা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। এখানে অনুমোদিত শয্যা ৫০০ হলেও বর্তমানে ৬৬০টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিমীত জনবল দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ একটি হাসপাতালের অগ্রানোগ্রাম দিয়ে চলছে কর্মিটোলা সুপার স্পেশালাইজড এই হাসপাতাল। তবে, জনবল সংকটে আমাদের সেবা যে ব্যাহত হচ্ছে, সেটা বলা যাবে না। আমরা সীমিত জনবল দিয়েই আমাদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করছি। ভর্তি রোগী ও আউটডোরের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ম্যানেজ করা কষ্টসাধ্য। ভর্তিসহ সকল রোগীর প্রয়োজনীয় সকল ওষুধ ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রায় সকল প্যাথলজি টেস্ট এখানেই করানো হচ্ছে। দু’একটি টেস্ট আইসিডিডিআরডিতে করানো হলেও তা সরকারি রেট অনুযায়ী করতে পারছেন রোগীরা। আমাদের সেবার মান ও সেবায় সন্তুষ্ট রোগী ও রোগীর স্বজনরা। এছাড়াও সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। কথা বলেছেন রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে। এসময়ে তারা এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান এবং সর্বস্তরের জনগণকে আরো চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা নিশ্চিত করারও আশ্বস দিয়েছেন। পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামাল দেওয়া কষ্ট কর। আমাদের এখানে ২টি এক্সরে মেশিন, ১টি এমআরআই মেশিন দিয়ে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫-৭ জন রোগীকে সেবা দেয়া সম্ভব। অথচ এমআরআইয়ের চাহিদা থাকে ২০ টির অধিক এবং ১ টি সিটিস্ক্যান মেশিন দিয়ে প্রতিদিন ১৫ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হলেও চাহিদা প্রায় দ্বিগুন। আর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসসি দেওয়া। প্রতি সেশনে এখানে খরচ হয় ৪১০ টাকা। অন্যান্য হাসপাতালে এ সেবা নিতে লাগে প্রায় তিন হাজার টাকা। কিন্তু আমরা প্রতিদিন দুই শিফটে মাত্র ১০০ জন রোগীকে এই সেবা দিতে পারলেও চাহিদা ১১শ এর অধিক। এক্ষেত্রে সান্ধ্যকালীন একটি শিফট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাহলে নতুন করে আরও ৫০ জনকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও এ সেবা নিশ্চিত করা হলে সপ্তাহে আরও ১৫০ জন নতুন রোগীর ডায়ালাইসিস নিশ্চিত করা যাবে। রোগীদের অনেক আবেদন থাকলেও রোগী মারা না গেলে নতুন রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকে না। সর্বস্তরের মানুষ কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে ৫২ টি কেবিন রয়েছে। ১৬টি (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) আইসিইউ রয়েছে। এছাড়াও ২৩ সিটের একটি করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। সকল রোগীদের বেটার সার্ভিস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি দায়িত্ব নিয়েই স্বাস্থ্য অধিদতরের মহাপরিচালকের কাছে দ্রুত জনবল নিয়োগের জন্য একটি চাহিদা পত্র দিয়েছেন। তিনি আশা করেন দ্রুত এ জনবলের সমস্যার সমাধান হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টঙ্গী জেনারেল হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাঝামাঝি কোনো সরকারি হাসপাতাল ছিল না। এ জন্য ২০০৪ সালে কুর্মিটোলায় একটি হাসপাতল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সরকারি অর্থায়ন এবং সেনাবাহিনীয় সহায়তায় করা হয় ভবন নির্মাণ। নানা প্রতিবন্ধকতার অবসান শেষে নান্দনিক ও আধুনিক এই ১২ তলা বিশিষ্ট ৫০০ শয্যা হাসপতালটি ২০১২ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। যেখানে কম খরচেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের অর্থায়নে চলা এই হাপসাতালটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের সঙ্গে অধিভুক্ত হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি। হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে রোগী দেখানো যায়। সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। মেডিসিন, অপারেশন ও খাবার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। বর্তমানে চিকিৎসক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ৩৯৬ জন কর্মরত রয়েছেন। তবে হাসপাতাল ভালোভাবে পরিচালনার জন্য ৫৭০ জন জনবলের একটি চাহিদা পত্রও দেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতালটি ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশনের পার্টনার। হাসপাতালের কাছেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমান দুর্ঘটনা বা জরুরি কিছুর চিকিৎসা যেন এখানে করা যায়, এ জন্য এই পার্টনারশিপ। এখন পর্যন্ত হাসপাতালটি জাইকা, ওডিসি, ডব্লিউএইচও পরিদর্শন করেছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১