নিজস্ব প্রতিবেদক:

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাট রেট হিসেবে অনেক পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর যুক্ত করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ধাপে ধাপে সব পণ্য ও সেবায় স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাট রেট প্রয়োগ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা। ফলে বিভিন্ন পণ্যে উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ভ্যাটের হার হবে ১৫ শতাংশ।

জানা গেছে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে গত সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট সংক্রান্ত এক সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

বাজেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে কর আরোপের ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। করের টাকা আদায় করতে ধাপে ধাপে যেভাবে কর আরোপ করার কথা বলা হচ্ছে এতে নতুন করে অনেক পণ্য ও সেবার ওপর কর বসবে। মোবাইলে কথা বলতে খরচ বাড়বে। এছাড়া এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল হবে। তবে, কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে শুল্ক সুবিধা বেড়ে যাবে এবং করপোরেট করহার বেড়ে যাবে।

বর্তমানে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভেদে ২ থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করে এনবিআর। অন্যদিকে ভ্যাটের অভিন্ন হারের মতো কয়েকটি খাতে ভ্যাট অব্যাহতিও ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার গণভবনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বাজেটবিষয়ক সভায় বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অনুবিভাগের বাজেট বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এনবিআর চেয়ারম্যান ছাড়াও তিন অনুবিভাগের নীতি শাখার সদস্য, প্রথম সচিব, দ্বিতীয় সচিব ও বাজেট সমন্বয়কারী দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সরকার ভ্যাটের স্ট্যান্ডার্ড রেট ১৫ শতাংশ কার্যকর করার দিকে এগোচ্ছে। তবে, আগামী অর্থবছরেই সবক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন হবে না। বাস্তবায়ন হবে ধাপে ধাপে। অন্যদিকে উৎপাদনশীল খাত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া ভ্যাট অব্যাহতির ক্ষেত্র কমে যাবে আগামী বাজেটে।

মোবাইলে কথা বলতে বাড়ছে খরচ : রাজস্ব আদায়ের আওতা বৃদ্ধি করতে মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে ইতিবাচক সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে মোবাইলে কথা বলতে আরো বাড়তি অর্থ গুনতে হবে ভোক্তাকে। বর্তমানে একজন ভোক্তা মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৭৩ টাকার কথা বলতে পারেন। বাকি ২৭ টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে কেটে নেয় মোবাইল অপারেটরগুলো। প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেবার ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে ভোক্তা ৬৯.৩৫ টাকার কথা বলতে পারবেন।

শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানিতে এমপিদের সুবিধা থাকছে না : বর্তমানে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। বৈষম্য হ্রাসে বাজেটে এই সুবিধা বাতিলের পক্ষে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে গাড়ি আমদানি করতে হলে সংসদ সদস্যদের ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি হাইটেক পার্কের জন্য আমদানি করা গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলেও আগামী বাজেটে শুল্ক আরোপের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

কমছে করপোরেট করহার : শর্তসাপেক্ষে করপোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। যাতে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ঢালাওভাবে সব খাতে নয়, আগের মতো উৎপাদনশীল খাতের সঙ্গে জড়িত পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত শিল্পের কর কমানো হচ্ছে। এ জাতীয় কোম্পানির কর সাড়ে ২৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাকি সব খাতের কর অপরিবর্তিত থাকছে।

কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে শুল্ক সুবিধা : কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে শুল্ক না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে সার আমদানি ও কৃষি উপকরণ আমদানি ব্যয় বাড়ছে না বলে জানা গেছে।

বাতিল হচ্ছে রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট : রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিসহ করদাতাদের হয়রানি কমাতে আগামী বাজেটে ব্যক্তি ও কোম্পানি সব শ্রেণির করদাতাকে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট করা হয় না। বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে হয়। অন্যদিকে কোম্পানি করদাতারা স্বনির্ধারণী ও সাধারণ-দুই নিয়মেই রিটার্ন জমা দিতে পারেন। সাধারণ নিয়মে জমা দেওয়া রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে চূড়ান্ত কর আদায় করা হয়। আর স্বনির্ধারণী পদ্ধতির রিটার্ন অডিট করা হয়। এজন্য আগামী বাজেটে এনবিআর আয়কর আইনে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাড়ছে না করমুক্ত আয়সীমা : মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে না। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। অবশ্য রাজস্ব বাড়াতে বিত্তশালীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায়ে ছক আঁকছে এনবিআর। বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ রয়েছে। বছরে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় থাকলে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। এটিকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে।