কড়াইল বস্তিতে আগুন
ঝলমলে লেক, পোড়া বস্তিতে চেয়ে স্বস্তি মেলে কি?
হাসনাত কাদীর
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:১২
‘ঈশ্বর থাকেন ঐ ভদ্র পল্লীতে— এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’ তাই লেকের ওপাড়ে যখন গুলশানের ঝলমলে রঙিন আলো, এপাড় তখন আগুনে পুড়ে অন্ধকার। সোনার সংসার ছাই হবে বারবার— এই-ই যেন কপালের লিখন রাজধানীর কড়াইল বস্তিবাসীর। বুধবারও (১৮ ডিসেম্বর) খণ্ডানো গেল না তা। শিঙারা-পুরীর দোকানের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে মুহূর্তে পুড়ে অঙ্গার হলো দেড় শতাধিক পরিবারের ঘর-দোর, সম্বল।
ছাই হওয়া ঘরের জায়গায় দাঁড়িয়ে শূন্য চোখে তাকিয়ে ছিলেন রুমানা। তিনি যখন ভাবছেন, এই শীতের রাতে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে এখন ঠাই নেবেন কোথায়, তখন শক্ত হাতে কয়লা খুঁড়ে চলেছেন তাঁর স্বজন ও সমব্যথী প্রতিবেশীরা। ঘরের এখানেই ছিল ওয়াড্রোব। আর তার ভেতরে ছিল রক্ত পানি করে তিল তিল করে জমানো নগদ ৩০ হাজার টাকা। ঘামে গড়া সম্বল আর অনেক ভালোবাসার স্মৃতিমোড়া সোনার কিছু গহনা। তিনি কি তা খুঁজে পাবেন?
বিকেল ৪টার দিকে কড়াইলের এই বস্তিতে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। ফায়ার সার্ভিস যে এক ছুটে পৌঁছে যাবে, সেই উপায় কই? পথে বাগড়া দিতে তৎপর রাজকীয় মহামারি যানজট। দানব এই জট ঠেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়। প্রথম ইউনিট পৌঁছাতে পারে ৪টা ৩৯ মিনিটে। কিন্তু যেখানে আগুন, ভদ্র পল্লীর মতো চওড়া রাস্তা সেখানে নেই। ফলে হাটা পথে প্রায় ১২ মিনিটের দূরত্বে থামতে হয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট পাইপ টেনে পানি নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হতাহতের বড় ধরনের ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেও, পুড়ে ছাই হয় দেড় শতাধিক দরিদ্র পরিবারের ঘটি-বাটি-কম্বল; বিছানা-বালিশ, তিল তিল করে জমানো সব সম্বল।
ঘরপোড়া মানুষগুলোকে দেখা যায় অন্ধকারে ফ্যালফ্যাল করে অসহায় দাঁড়িয়ে থাকতে। কেউ কেউ নিজেকে সামলে নিয়ে ঘরের টিন, বেড়া ঠেলে দেখছেন আগুনের উদর থেকে রক্ষা পাওয়া কিছু খুঁজে পাওয়া যায় কি না। কেউবা রুমানার স্বজনের মতো খুঁড়ে চলেন কয়লা।
বেয়াড়া জীবন বড় রসিক হয়ে ওঠে কখনো কখনো। সমস্ত গিলে খেলেও কয়লায় আড়ালে তাই পাওয়া গেল রুমানার স্বর্ণের আংটি, কানের দুল, গয়না। রুমানারা এই আংটি আকড়েই উদ্বেল হন বটে। তবে ঝলমলে লেক-তটে দাঁড়ানো পোড়া বস্তির দিকে চোখ রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস কোনো মানবিক প্রাণ নিতে কি পারে?