Logo
Logo

মতামত

বাগেরহাটে বিশুদ্ধ পানির সংকট : টেকসই সমাধান প্রয়োজন

শেখ আবু তালেব

শেখ আবু তালেব

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৫

বাগেরহাটে বিশুদ্ধ পানির সংকট : টেকসই সমাধান প্রয়োজন

বাগেরহাটের বিশুদ্ধ পানির সংকট। ছবি : লেখক

বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে প্রতিবছরই গ্রীষ্ম মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। বিশেষত,  শরণখোলা উপজেলার মংলা ও রামপালের পেড়ীখালী, ভোজপতিয়া ও মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা সহ্য করে আসছে। নদীগুলোতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে এই এলাকার পুকুর এবং কূপগুলো বছরের পর বছর শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষ পানীয় ও দৈনন্দিন কাজে দূষিত বা লবণাক্ত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। এই সমস্যা শুধু বাগেরহাটের জন্য নয়, বরং সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলের জন্যও এটি চরম সংকটের বার্তা বহন করছে।

বাগেরহাটের মানুষের বিশুদ্ধ পানির অভাব তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত করছে। রামপালের গ্রামগুলোতে নারীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে দূরবর্তী স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করেন, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, লবণাক্ত পানির ব্যবহারে এই এলাকার নারীরা নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো গর্ভধারণ ক্ষমতা হ্রাস। এ ধরনের সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সমগ্র সমাজকেও প্রভাবিত করছে।

বাগেরহাটের এই সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা প্রবেশের কারণে খাল-বিলগুলোও লবণাক্ত হয়ে উঠছে। অপরদিকে, পানির চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। কারণ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এই এলাকায় অনেক গভীরে অবস্থিত। ফলে, সমস্যার সমাধানে টেকসই উদ্যোগ প্রয়োজন।

সম্ভাব্য সমাধান ও করণীয়

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ : ও ব্যবহার গ্রীষ্ম মৌসুমে সংকট মোকাবিলায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের উচিত ঘরে ঘরে রেইনওয়াটার হারভেস্টিং ট্যাংক সরবরাহ করা। দীর্ঘমেয়াদি এই প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল হলেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে এটি কার্যকর পদক্ষেপ হবে।

পুকুর পুনঃখনন ও রক্ষণাবেক্ষণ : প্রতিটি ইউনিয়নে কয়েকটি পুকুরকে পুনঃখননের মাধ্যমে এবং নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করে লবণমুক্ত পানির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এ কাজে স্থানীয় সরকার ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বিকল্প পানি সরবরাহ ব্যবস্থা : বাগেরহাটের সমস্যাটি বিশেষ বিবেচনায় এনে জাতীয় পর্যায়ের বিকল্প পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। পানির ট্যাংকার সরবরাহ বা পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি পৌঁছানো সম্ভব হলে এলাকার মানুষের দৈনন্দিন পানির সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে।

সচেতনতা বৃদ্ধি : শুধু পানি সরবরাহই নয়, পানির সংরক্ষণ, পুনঃব্যবহার, এবং দূষণ কমানো নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা যেতে পারে।

শেষ কথা

বাগেরহাটের পানির সংকট একটি জটিল এবং বৈশ্বিক সংকটের প্রতিফলন। আমাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় ঘটিয়ে এই সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব। বিশুদ্ধ পানি মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার, যা বাগেরহাটের মানুষও দাবি করে। তাদের এই মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয় ও জাতীয় প্রশাসনকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। আজকের এই সংকট শুধু বাগেরহাটের মানুষের দুর্দশা নয়, এটি আমাদের দায়িত্বের চরম পরীক্ষা।

লেখক : সাংবাদিক; বাগেরহাট প্রতিনিধি, বাংলাদেশের খবর

এমএইচএস


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর