Logo

অন্যান্য

শেখ হাসিনাকে ‘খোলা চিঠি’ লিখলেন যুবক

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:১৭

শেখ হাসিনাকে ‘খোলা চিঠি’ লিখলেন যুবক

ছবি : সংগৃহীত

গণআন্দোলনে পদত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে ‘খোলা চিঠি’ লিখেছেন আবুল ইসলাম শিকদার নামের এক যুবক। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি ‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলছি’ শিরোনামে একটি বার্তা পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা বা শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছে পোস্টটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পোস্টটি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের খবরের পাঠকের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলছি-

(আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কিংবা শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত কোনো ব্যক্তি যদি এই লেখাটি তার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন তবে সবিশেষ কৃতজ্ঞ থাকব।)

কান ফেলে শুনুন,

আপনি ক্ষমতায় থাকতে কথাগুলো কখনোই বলতে পারতাম না। কারন লেখাটি প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে আপনার দলীয় উশৃঙ্খল কর্মীরা আমার বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে আমাকে জানে মেরে ফেলতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ করত না। দলীয় ফোরামে যদিও আপনার অনেক সমালোচনা করেছি, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে এসব কথা বলবার মতো সাহস আমার কেন, বাংলাদেশে কারোই ছিল না।

প্রথম থেকে যদি বলি, তবে বলতে হয়, আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ দল চালাবার মতো মেধা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা আপনার ছিল না। শুধু দলের ঐক্যের প্রতীক বিবেচনায় সেদিন বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে আপনাকে ওই আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রয়াত জনাব মালেক উকিল সাহেবের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই কিন্তু আওয়ামী লীগ বেশ ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। ৩৯টি আসন পেয়ে তারা বিরোধীদলের আসন অর্জন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর পতনের পর অনেকেই বলাবলি করছিল, আওয়ামী লীগ আগামী একশো বছরেও রাজনীতিতে ঠাঁই পাবে না। কিন্তু সেটি পেয়েছিল আপনার নেতৃত্ব ছাড়াই।

দ্বিতীয়ত, আপনি দলের ভেতর কোনো নেতৃত্বের বিকাশ একেবারেই সহ্য করতে পারেননি। আপনার পিতা ভুলবশত তাজউদ্দিনকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন, আর আপনি সজ্ঞানে কামাল হোসেনের মতো মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন, তোফায়েল, রাজ্জাক সাহবদের মতো ত্যাগী নেতাদের নানাভাবে অপদস্ত করেছেন। তাদের জনপ্রিয়তা আপনি মেয়েলি প্রতিহিংসায় সহ্য করতে পারেননি। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় এসব নেতার অবদান জ্বলজ্বল করে এখনো জ্বলছে।  মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী সাহেবকে আপনি ধরে রাখতে পারেননি।


তৃতীয়ত, অত বড় দলের নেতা হিসেবে কী বলা উচিত আর কী উচিত নয়, এই জ্ঞান আপনার ছিল না। আপনি কথা বলতেন সাধারণ মানুষের মতো ঝগড়ার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে। সেসব কথায় বড় নেতা কিংবা দেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনো ছাপ ছিল না। মাধুর্যহীন, প্রতিহিংসার বাক্য ও শব্দ আপনার বক্তব্যকে অত্যন্ত নিম্নমানের বক্তব্যে পরিণত করত। একটি বক্তব্যের পনেরো আনা জুড়ে থাকত বিরোধীদের সমালোচনা। আর সে সমালোচনায় কোনো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা একেবারেই ছিল না। ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণের রোষানল।

চতুর্থত, বঙ্গবন্ধু একটা বিশেষ আদর্শকে সামনে রেখে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন। আর আপনি একমাত্র ক্ষমতাকে ধরে রেখে লুটপাটের আদর্শ কায়েম করার জন্য স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনার লক্ষ্য ছিল শুধুই ক্ষমতা এবং এক ভীতিকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আপনার সামান্য সমালোচনা করেও কতজন যে গুরুদণ্ড, এমনকি জীবন পর্যন্ত হারিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আমি নিজেও কিছুটা ভুক্তভোগী হয়ে সন্দ্বীপ পর্যন্ত দেখে এসেছি। সেটি ছিল পুরাকালের দীপান্তরের মতোই।

পঞ্চমত, এদেশের মানুষ দুইবার আপনাকে খাতির করে ক্ষমতায় বসিয়েছে। বাকি তিনবার আপনি নজীরবিহীন ভোট ডাকাতি করে, জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ভুলুন্ঠিত করে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন।

আপনি এখনো প্রশ্ন করেন, আমার কি অপরাধ ছিল? এটা তো একটা প্রতিবন্ধীর প্রশ্ন। আপনার তো আর কোনো অপরাধ করার প্রয়োজন নেই। শুধু এই বিনাভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই যেকোনো শাস্তি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আপনি যদি আপনার অপরাধ না বুঝতে পারেন, তাহলে আপনাকে প্রতিবন্ধী ছাড়া ভদ্রভাবে আর কী বলা যায়। 

ষষ্ঠত, আপনাকে থামাবার বা সাবধান করার কোনো মানুষ ছিল না। আপনার চারপাশে ছিল কেবল মেরুদণ্ডহীন স্বার্থ উদ্ধারকারী কিছু তোষামোদকারী। আপনি পাগলের প্রলাপ বকলেও তারা উলুধ্বনি দিয়ে তা সাপোর্ট করত। আপনি একটা পরিশীলিত জনবহুল সভায় দাঁড়িয়েও মুখে লাগাম দিতে পারেননি। কাউকে কাক বলেছেন, কাউকে পদ্মাসেতু থেকে টুস করে ফেলে দিয়ে পদ্মায় চুবাতে চেয়েছেন। এসব একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায়? হ্যাঁ মানায়। আপনার মতো অর্ধশিক্ষিত, ক্ষমতালোভী এর চেয়ে ভালো কথা আর কী বলতে পারে।

১৯৯৬ সালের মেয়াদে বাংলাদেশের প্রথিতযশা সকল বুদ্ধিজীবী আপনার পক্ষে ছিলেন। কারণ আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তারা আপনাকে সাবধান করে ‘সাধু সাবধান’ রচনা করতেন। কিন্তু আপনি তাদের সকলের মুখেই চুনকালি মাখিয়েছেন। এ জন্য ২০১৪ থেকে আপনি তাদের দিক থেকে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। ২০২৪ সালে এসে তারা কেউই আপনার পাশে ছিল না। শুধু আপনার ঠোঁটের জন্য আপনার পতন বারো আনা ত্বরান্বিত হয়েছে। আদালতও একবার আপনার জিহ্বা সংবরণ করার জন্য হুঁশিয়ার করেছিল। কিন্তু আপনার স্বভাব আপনি বিন্দুমাত্র পরিত্যাগ করতে পারেননি।

আপনি প্রচুর মিথ্যা কথা বলতেন, যা একজন রাষ্ট্রনায়ককে মানায় না। জয়-পরাজয় নিয়েই তো রাজনীতি। আপনি কখনো হেরে যাবেন, এটা ভাবতে পারেননি। আপনার আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ থেকে বহুদূর সরে এসেছিল। আপনার আওয়ামী লীগ একেবারে গ্রাম পর্যন্ত টাউট-বাটপার আর মাস্তান তৈরি করেছিল। বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলেছিলেন একটা মধ্য চরিত্রের সেবক শ্রেণি। আর আপনি গড়ে তুলেছিলেন একটা সন্ত্রাসী লুটেরা শ্রেণি।

আপনি কখনোই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেননি। আমলা-কামলা আর প্রতিরক্ষার মানুষ ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন শুধু আপনার ক্ষমতার জন্য। কিন্তু কে আর চিরকাল ব্যবহৃত হতে চায়? আপন বিবেচনা থেকেই তারা একদিন পিছুটান দিতে বাধ্য হয়।

আপনি উন্নয়নের ঘ্যানর-ঘ্যানর ফিরিস্তি আওড়ান, যা খুবই বিরক্তিকর। কান ঝালাপালা হয়ে গেছে জনগণের। জনগণ উন্নয়ন চায়, কিন্তু তারচেয়ে বেশি চায় তার রাজনৈতিক অধিকার তথা ভোটাধিকার। আপনি সেই পবিত্র অধিকার পদদলিত করেছেন। যা আপনার সমস্ত উন্নয়নকে ম্লান করে দিয়েছে।

আপনার হাতে সুযোগ ছিল ইতিহাস রচনার। আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। আপনার আর কী চাই। অর্থ-সম্পদ থাকবে আপনার পায়ের নিচে। আপনি হতে পারতেন নির্লোভ ত্যাগী মহীয়সী। কীসের অভাব আপনার। আপনি সেসব না করে লুটপাটে নামলেন নিজেই। আর পিওনকে বানালেন পাঁচশো কোটি টাকার মালিক।

জনসভায় দাঁড়িয়ে পাগল উন্মাদের মতো আপনি আবার সেসব কথা গর্বের সাথে বলে বেড়ান। এদেশের মানুষকে আপনি নির্মমভাবে আশাহত করেছেন। মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল আপনার কাছ থেকে। আপনি সে প্রত্যাশার মোটেও যোগ্য ছিলেন না।

আপনার কোনো সংশোধন নেই। আজ ভারতে বসেও আপনি যে প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য প্রদান করেন, তাতে আপনাকে পাগল ছাড়া আর কী বলা যায়?

আওয়ামী লীগ আর রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না, একজন রাষ্ট্র্ব বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি তা মনে করি না। হয়তো আসবে। কিন্তু সেটি বহুদূরের পথ। বাইরে বাঁধার দরকার নেই। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ প্রজন্ম কোনমুখে দাঁড়াবে জনগণের দরজায়? বদলাতে হবে। খোলনলিচাসহ। সেটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।ততদিনে ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকবে কি না কে জানে।

যাহোক, একটি প্রগতিশীল পার্টির কর্মী হিসেবে মনে করি আপনার ফিরে আসা না আসা কোনো ম্যাটার করে না। ম্যাটার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। যেটি বিক্রি করে আপনি খেয়েছেন। আর ভবিষ্যতে তা বিলীন হওয়ার পূর্বাভাস আমাদেরকে ব্যথিত করে।

তবে এদেশের জনগণ বড়ই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে জানে। তারা সময়মতো রুখে দাঁড়াবেই। রক্ষা করবে তাঁদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। সেটি ইতিহাসের অবধারতি নিয়মেই হবে। 

আর শেষে আপনাকে বলি, স্বভাব পাল্টান। সেটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাজে না লাগলেও বৃদ্ধ বয়সে আপনার নিজের কাজে লাগবে।

আগেই বলেছি, এসব কথা আগে হয়তো বলতে পারতাম না। এখন বলছি। জানি দৈবাৎ যদি ক্ষমতায় ফিরে আসেন, তবে আমাকেই আগে খুঁজবেন। কারণ আপনি সংশোধন হবেন না। হবেন আরও প্রতিহিংসাপরায়ণ।

ডিআর/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর