• শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪২৮

রাজনীতি

মুরাদ সাদেকে সংগঠন দুর্বল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ এপ্রিল ২০১৮

রাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে দুশ্চিন্তা বাড়ছে মূল দলে। দলীয় রাজনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি থমকে রয়েছে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে। নগরের দুই নেতার ‘একক’ আধিপত্য ও কমিটি গঠনকেন্দ্রিক জটিলতায় নগরের সঙ্গে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন নেতাদের দূরত্ব এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। এতে সংগঠন বেহাল হয়ে পড়েছে এমন মূল্যায়ন কেন্দ্রীয় নেতাদের। 

জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সঙ্গে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের দূরত্ব বেড়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ সভাপতি আবুল হাসনাতকে কিছু না জানিয়ে একাই নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ পরিস্থিতিতে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ৩১ মার্চ বিকালে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নগর নেতাদের নিয়ে বসে তিনি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে বলেন।

গত ৩০ মার্চ সকালে আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় নগর আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে নেতারা অভিযোগ করেন, ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি সিন্ডিকেটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সংগঠন বিশৃঙ্খল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন এক সাংগঠনিক সম্পাদক।

তবে পার্টির সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশের পর নড়েচড়ে বসেছে মহানগর উত্তর। এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে বিভিন্ন থানার নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ঢাকা-১৮ আসনের সাত থানা ও ১১ আসনের তিন থানার নেতাদের নিয়ে বসে কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব। দ্বিতীয় দিন ঢাকা-১৫ আসনের তিন থানার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। ৪ এপ্রিল ঢাকা-১৪ আসনের নেতাদের সঙ্গে বসার খবর দেন দারুস সালাম থানার সভাপতি মাজহান আনাম।

গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ২৬ থানা, ৪৬ ওয়ার্ড ও ৯ ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দ্বিতীয়বারের মতো অনুমোদন দেওয়াকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ জটিলতা শুরু হয়। এর আগে গত বছরের ৫ জুলাই একই কমিটি অনুমোদন করা হয়েছিল। এ নিয়ে তৃণমূলের অভিযোগ পেয়ে কমিটি স্থগিত করে তদন্তের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই তদন্ত চলাকালীন আবারো তড়িঘড়ি গত ২৭ ডিসেম্বর কমিটি অনুমোদন দেন মহানগরের ওই দুই শীর্ষ নেতা। গত ২ জানুয়ারি দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি বাতিল করে শেখ হাসিনা বলেন, ফারুক খানের স্বাক্ষর ছাড়া কোনো কমিটি অনুমোদন পাবে না। আমি তাকে বলে দিয়েছি, সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে কমিটি চূড়ান্ত করতে। আপাতত সব কমিটি স্থগিত।

এসব বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তরের সমন্বয়ক কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সমস্যা নিয়ে থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে বসতে বলেছি। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জটিলতা নিরসনের পরামর্শ দিয়েছি। এতেও সমস্যা না মিটলে আমি দেখব এমন কথাও বলেছি। তবে নগর নেতারা এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে বসেননি বলেও জানান তিনি।

কমিটি নিয়ে এককভাবেই কাজ করছেন দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করানো ছাড়া সভাপতি আবুল হাসনাতকে অন্য কোনো কিছুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মুরাদ ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গেও কোনো ধরনের যোগাযোগ করেন না- এমন অভিযোগও রয়েছে।

কমিটি গঠন নিয়ে মহানগর নেতারা যোগাযোগ করেন না বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নেত্রী তাদেরকে কাজ করতে বলেছেন। কিন্তু তারা কোনো কিছুই করছেন না। তারা না পারলে নেত্রীর নির্দেশে আমরা চেষ্টা করব। তবে এখন পর্যন্ত কমিটির কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আমাকে ডাকা হয়নি।

দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে কী হচ্ছে আমি তার কিছুই জানি না। আমার কাছে কোনো কমিটি জমা দেওয়া হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আমাকে কখনোই ডাকা হয়নি।

দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, আমাদের কমিটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ওদের (উত্তর) নিয়ে বলেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। কোনো সমস্যা থাকলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত কমিটি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কাদের ভাই। আমাদের ওয়ার্ড ও থানা কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ। শিগগির তা ঘোষণা করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads