• শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪২৮

প্রতীকী ছবি

রাজনীতি

জোটে শরিক বাড়াতে ‘বিশেষ টোপ’ পদ্ধতি

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০৫ মে ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের সামনে ঝুলছে নৌকা, ধানের শীষ প্রতীকসহ ক্ষমতার ‘বিশেষ টোপ’। এতে রাজি হলে ভালো। আর অন্যথা হলে দেওয়া হচ্ছে নানা মাত্রার চাপ।

ক্ষমতাসীনদের লক্ষ্য, সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আর বিরোধী রাজনৈতিক জোটের লক্ষ্য হারানো মসনদ পুনরুদ্ধার। এ জন্য ১৪ ও ২০ দলীয় জোট শরিকদের প্রতি বাড়তি তোয়াজের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আচরণে। আর এ দুই জোটের বাইরে থাকা ছোট দলগুলোকেও নিজ নিজ বলয়ে টানার চেষ্টা শুরু হয়েছে।

টোপের মধ্যে আছে মন্ত্রিত্ব, প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কিংবা সংসদ নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীক। আবার নিজেদের প্রয়োজনে বড় দলের দ্বারস্থ হচ্ছেন ছোট ছোট দলের নেতারাও। বাংলাদেশের খবরের কাছে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন একাধিক দলের শীর্ষ নেতা।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে বড় দলগুলো ছোটদের গুরুত্ব বুঝে নানা লোভনীয় প্রস্তাব দেয়। এবারো দেওয়া হচ্ছে। কাউকে মন্ত্রিত্ব, কাউকে সংসদ সদস্য করার প্রস্তাব। তবে এখন পর্যন্ত আমরা কোন পক্ষে যাব, সে সিদ্ধান্ত নিইনি।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচনের আগে সরকার গঠনের টার্গেট নিয়ে বিএনপি-আওয়ামী লীগ অন্যদের ওপর সোয়ার হয়। এবারো হবে। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মহাসচিব শাহ আলমের চিন্তা জোট-মহাজোটের বাইরে। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বুর্জোয়া দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ক্ষমতার অংশীদারিত্বের প্রস্তাব আগেও ছিল, এখনো আছে। সিপিবি নিজেই বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে পৃথক মোর্চা গঠন করবে।

বিএনপি শাসনামলের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে গুলশান থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ঘুষ গ্রহণের মামলায় এই নেতার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর চার বছরের কারাদণ্ডের রায় হয়। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।   

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০। নিবন্ধনহীন দল ১২০টির মতো। সাধারণ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে বিশেষ টোপের আলোচনা তত গতি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে জোট রাজনীতি নতুন কিছু নয়। নির্বাচনী জোটের সূচনা হয়েছিল অখণ্ড পাকিস্তানের পূর্বাংশ আজকের বাংলাদেশে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে। যুক্তফ্রন্ট নামে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় তিন দশক পর জোট রাজনীতি নতুন মাত্রা পায় ১৯৯৯ সালে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে গঠিত হয় চারদলীয় জোট।

আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন- এই তিন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের মঞ্চে ওঠে ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টি। এক পর্যায়ে পতিত সেনা শাসক এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টি বেরিয়ে গেলে সে শূন্যস্থান পূরণ করে নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। ওই সময় থেকেই মূলত ক্ষমতার বিশেষ টোপ পদ্ধতি চালু হয়।

বিএনপি জোটের সঙ্গে পাল্লা দিতে আওয়ামী লীগও ছোট দলগুলোকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে। দলটির নেতৃত্বে ২০০৮ সালে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। সরকারও গঠন করে এ জোট। তাতে শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিসহ ছোট দলগুলোকে আরো গুরুত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। গঠন করে মহাজোট। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও জাসদ (একাংশ) এর মাঈনুদ্দিন খান বাদলসহ অন্য নেতাদের মন্ত্রিত্ব, সংসদ সদস্য, প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

 

 

 

মাঝেমধ্যে এরশাদ মহাজোট ছাড়ার হুমকি ধমকি দিলেও অন্যরা আছেন সক্রিয়। এখন চেষ্টা চলছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না, নাজমুল হুদা, হেফাজতে ইসলাম, সিপিবি, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশসহ নিবন্ধিত ও নিবন্ধনহীন দলগুলোকে কাছে টানার। বিএনপিও বসে নেই। আরো আগেই দলটির নেতারাসহ বিএনপি ঘরানার কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আবদুর রব, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু জামায়াত প্রশ্নে সে আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি। জানা গেছে, ২০ দলের সমন্বয়ক বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমসহ তাদের প্রতিনিধিরা শরিকদের সঙ্গে নিয়মিত বসছেন। এর বাইরে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশকে ১৪-দলীয় জোটে নেওয়ার বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তবে শরিকদের আপত্তির কারণে প্রক্রিয়াটি ঝুলে আছে। আর মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা থাকলেও সুর পাল্টে এরশাদ এখন আওয়ামী লীগের কাছে ৭০ আসনে ছাড় এবং ১২ মন্ত্রণালয় দেওয়ার আবদার করেছেন।

গত জানুয়ারিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) মুফতি ইজহারুল ইসলাম। তবে জোট শরিকদের বিরোধিতায় দলটির ২০ দলে অন্তর্ভুক্তি আটকে গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads