Logo
Logo

রাজনীতি

ইসলামি দলগুলো ঐক্য জোরদার করলে নির্বাচনে ভালো করবে

Icon

বেলায়েত হুসাইন

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২৮

ইসলামি দলগুলো ঐক্য জোরদার করলে নির্বাচনে ভালো করবে

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর

দেশের ইসলামি রাজনীতিতে পরিচিত নাম মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন। প্রতিভাবান এ আলেম বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ও দলটির ঢাকা মহানগরীর সভাপতি। ইসলামি রাজনীতি, রাজনীতিতে আলেমদের ভবিষ্যৎ ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেলায়েত হুসাইন

বাংলাদেশের খবর : দেশের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোকে আপনি কোন স্তরে দেখছেন?

মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন : বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামি দলগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে ইসলামি দলগুলো সবসময়ই ন্যায়বিচার, সাম্য এবং নৈতিকতার জন্য কাজ করছে। তবে নির্বাচনের ফলাফল অনেকাংশে নির্ভর করবে দলগুলোর সাংগঠনিক প্রস্তুতি, নেতৃত্বের দৃঢ়তা এবং জনগণের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার ওপর। ইসলামি দলগুলো যদি নিজেদের মধ্যকার ঐক্য জোরদার করতে পারে এবং জনগণের সমস্যাগুলো সমাধানের কার্যকর প্রস্তাব দিতে পারে, তবে আগামী নির্বাচনে তারা একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। আমাদের বিশ্বাস, জনগণ ন্যায়ের পক্ষে থাকা দলগুলোকেই বেছে নেবে।

বাংলাদেশের খবর : আগামী নির্বাচনে সমীকরণটা কেমন হতে পারে বলে আপনি মনে করেন এবং বড় কোন দুই দল কিংবা কোন দুই জোটের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে?

মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন : বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দুটি বড় দল বা জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে আসছে, তবে এই ধারা আগামী নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে না। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ছোট দলগুলোর ভূমিকা এবং নতুন কোনো জোটের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইসলামি দলসহ অন্যান্য তৃতীয় শক্তির ভূমিকা এবার আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। জনগণ এখন এমন নেতৃত্ব খুঁজছে, যারা দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে, ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ সুগম করবে।

বাংলাদেশের খবর : আগামী নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কি কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে এবং তারা কি বিগত সময়ের মতোই জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে, কাদের সঙ্গে জোট গড়ার বেশি সম্ভাবনা?

মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সবসময়ই ন্যায়ের পক্ষে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা এবং ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা। আমরা আগামী নির্বাচনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং সে অনুযায়ী তৎপরতা চলছে। জোট গঠনের বিষয়টি রাজনৈতিক কৌশলের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং জাতীয় স্বার্থে কাজ করতে ইচ্ছুক সমমনা দলগুলোর সাথে আমরা জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করছি। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো একটি কার্যকর এবং কল্যাণমুখী নতুন ধারার রাজনীতির সূচনা করা।

বাংলাদেশের খবর : দেশের ইসলামি দলগুলোকে সাধারণত দেখা যায় যে, সেগুলো বড় বড় মাদ্রাসাকেন্দ্রিক; আপনাদের দল রাহমানিয়া মাদ্রাসাকেন্দ্রিক, জমিয়ত বারিধারা মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ইত্যাদি। এর বাইরে দলগুলোর উল্লেখযোগ্য তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। এর কারণ কী?

মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন : আমাদের দল রাহমানিয়া মাদরাসাকেন্দ্রিক- এটা সম্পূর্ণ অমূলক প্রশ্ন। অন্য সংগঠনের বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না, তবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কোনো মাদ্রাসাকেন্দ্রিক নয়; বরং প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করছে। কাজের ক্ষেত্র মাদ্রাসার গণ্ডি ছাড়িয়ে অনেক বিস্তৃত। আমাদের প্রচেষ্টা হয়তো সবসময় গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হয় না, কিন্তু মাঠপর্যায়ে আমাদের কর্মসূচি ও মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা যথেষ্ট সুসংগঠিত।

বাংলাদেশের খবর : অনেকে বলেন যে, খেলাফত মজলিস শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.)-এর পারিবারিক দল। এই অভিযোগ কি সঠিক?

মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন : খেলাফত মজলিস কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা পারিবারিক দল নয়। এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন, যার মূল লক্ষ্য হলো খেলাফত ভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা। শাইখুল হাদিস (রহ.)-এর অবদান এবং নেতৃত্বে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তবে এটি কোনোভাবেই তার পরিবারকেন্দ্রিক দল নয়। আমাদের সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের কাজ এবং নেতৃত্বের সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের খবর : রাজনীতিতে আলেমদের অবস্থান দুর্বল কেন এবং শুধু কওমি মাদ্রাসার আলেমরাই কেন এতগুলো দলে বিভক্ত, তারা কি ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন না, এক্ষেত্রে ঐক্যের প্রতিবন্ধকতা কী?

মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন : রাজনীতিতে আলেমদের ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু বর্তমান সময়ে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মতাদর্শিক ভিন্নতা, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে আলেমদের মধ্যে বিভক্তি দেখা গেছে। তবে ইসলামি ঐক্য প্রতিষ্ঠা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। আমরা বিশ্বাস করি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বৃহত্তর কল্যাণের জন্য কাজ করার মানসিকতা তৈরি হলে আলেমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারবেন। ইসলামি ঐক্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশের খবর : নির্বাচনকে সামনে রেখে একজন আলেম রাজনীতিক হিসেবে দেশবাসীর প্রতি আপনার কী আহ্বান?

মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন : আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাবো, আপনারা সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্বকে বেছে নিন। এমন নেতাদের সমর্থন করুন, যারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। নির্বাচনের সময় দলীয় বিভাজন নয়; বরং জাতীয় ঐক্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আসুন, একটি ইনসাফপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই একত্রে কাজ করি।

বিএইচ/

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর