বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার কেবিনে ঢুকতে দেননি মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের। ফলে তারা পুরনো ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে আবারো মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বসবেন। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তিন সদস্যের বিষয়ে আপত্তি তুলে বিএনপি জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা আবার আদালতে যাবেন।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপি নেত্রীর জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও বিএসএমএমইউর মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল জলিল চৌধুরীর নেতৃত্বে বোর্ড সদস্যরা ৬১১ নম্বর কক্ষের সামনে যান। কিন্তু খালেদা জিয়া কেবিনের দরজা খোলেননি। পরে বোর্ডের সদস্যরা তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখেন। এ সময় জলিল চৌধুরী ছাড়াও ছিলেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ, রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, অর্থোপেডিক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নকুল কুমার দত্ত। তাদের সঙ্গে ছিলেন খালেদার ব্যক্তিগত চিকিৎসক মামুন রহমান।
পরে বোর্ড সদস্যদের পর্যালোচনার বিষয়টি তুলে ধরেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. হারুন অর রশীদ। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টার মধ্যে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা গিয়েছিলেন। সেখানে তারা অপেক্ষা করেছেন, তবে সাক্ষাৎ হয়নি। তারা খালেদা জিয়ার ব্যবস্থাপত্র দেখেছেন।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে খালেদা জিয়ার সব কাগজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আপাতত নতুন চিকিৎসা লাগবে না। চলমান চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে। মেডিকেল বোর্ড আগামীকাল (আজ) দুপুর ১টায় আবার বসবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ধরনগুলো শুনে কোনো পরীক্ষা লাগলে করা হবে। হাসপাতালে তার সুচিকিৎসাই হবে।
আদালতে যাওয়ার হুমকি বিএনপির : দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএসএমএমইউর পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে যায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে চার সদস্যের আইনজীবী প্রতিনিধিদল। সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মওদুদ। বলেন, খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা হাসপাতালের পরিচালককে জানিয়েছেন, মেডিকেল বোর্ডের ডাক্তার নিয়ে খালেদা জিয়া সন্তুষ্ট না হলে তারা আবারো হাইকোর্টে যাবেন। তিনি বলেন, তারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বোর্ডে ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোলজিস্ট রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মওদুদ বলেন, তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাননি। হাসপাতালে পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তার চিকিৎসার বিষয় নিয়ে তারা কথা বলেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
স্বাচিপের কেউ নেই : কনফারেন্স রুমে হাসপাতালের পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে বোর্ডের কোনো চিকিৎসক বর্তমানে স্বাচিপ বা ড্যাবের কার্যকরী সদস্য হতে পারবেন না। হাসপাতালের গঠিত বোর্ডের কোনো চিকিৎসকও বর্তমানে কোনো সংগঠনে নেই। তাই এটা নিয়ে আপত্তি করা যুক্তিসঙ্গত নয়। তবে বোর্ডের সদস্য সজল ব্যানার্জি জরুরি কাজে বরিশাল থাকায় তার স্থলে বিএসএমএমইউর সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাসনিয়া পারভিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি এলে বোর্ডে যোগ দেবেন।
খালেদা জিয়া পছন্দের ডাক্তারের কথা বলেছেন কি না জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, তিনি পছন্দের কোনো চিকিৎসকের কথা এখনো বলেননি। যদি বলেন, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউর অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করিম মানিক ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি ডা. মো. এমএ জলিল।
যাদের বিষয়ে আপত্তি বিএনপির : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) এক নেতা বাংলাদেশের খবরকে জানান, পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের তিন সদস্যের ব্যাপারে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এরা হলেন ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, অধ্যাপক ডা. নকুল কুমার দত্ত ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ। তারা সবাই স্বাচিপ সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, ডা. সজল এর আগে গুরুতর অসুস্থ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে সুস্থ বলে সার্টিফিকেট দেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এছাড়া সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার বই ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম’-এ সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি সম্পর্কে লিখেছেন, ওই চিকিৎসক তাকে অসুস্থ বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন।