একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় যাই হোক তা নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াবে না বিএনপি। রায়ের প্রতিবাদে রাজপথে মিছিল, মিটিং, ভাঙচুরসহ কোনো ধরনের নাশকতায় না জড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, সরকার যেহেতু মামলাটিকে রাজনৈতিক রূপ দিয়েছে সেহেতু বিএনপি বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে। এর বাইরে রায় ঘোষণার পর দলের আইনজীবী প্যানেল রায় পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার বিচারকের ওপর অন্যায়ভাবে চাপ সৃষ্টি করছে একটি ফরমায়েশি রায় দেওয়ার জন্য। এমন অবস্থায় বিচারকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার যতই চাপ প্রয়োগ করুক না কেন, তাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। বিচারকসহ বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় আইনজীবীরা পাশে থাকবেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার যে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করছে তা এখন দেশের প্রতিটি জনগণ জানে। তারা দেখেছে, একটি রায় সরকারের পছন্দ না হওয়ায় বিচারপতি এস কে সিনহাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। এছাড়া একটি মামলার রায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে যাওয়ায় সেই বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। শুধু রাজনীতিবিদ নন, বিচারকসহ বিচার বিভাগের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করছে বিষয়টি জনগণ জানে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে সরকার যে রাজনীতি করছে, ফাঁদ পাতছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে। ইতঃপূর্বে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রায় হলে বেকায়দায় পড়বে বিএনপি। এছাড়া গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রায় ঘিরে বিএনপি নাশকতা করলে জবাব দেওয়া হবে। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, বিষয়টি উপলব্ধি করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন রায়কে ঘিরে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না। মিছিল, মিটিং, ভাঙচুর করা যাবে না।
তিনি বলেন, এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেন বকশীবাজারের বিশেষ আদালত। তখনো বিচারের দিন সরকারের পক্ষ থেকে গুজব ছড়ানো হয়েছিল রায় ঘোষণার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাঙচুর করবে, পেট্রোল বোমা ছুড়বে। শুধু তাই নয়, এসব বলে আবার রাজপথে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি মহড়া দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে তা মোকাবেলা করেছে। একইভাবে তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িয়ে শাস্তি দিলে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবে না বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের চেষ্টা করেনি। বরং কীভাবে এই মামলায় বিএনপিকে ফাঁসানো যায় সেই অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তাদের সেই অপচেষ্টার ইঙ্গিত পাওয়া যায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য থেকে। তারা বলে আসছেন একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হলে বিএনপি বেকায়দায় পড়বে।
তিনি বলেন, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় এমন এক সময় সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে যখন নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র তিন মাস। পরিকল্পিতভাবে এটি করা হচ্ছে। সরকার ভাবছে নির্বাচনকে সামনে রেখে মামলার রায় দিলে বিএনপি খারাপভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সেই সুযোগটা তারা নেবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সরকার বিচার বিভাগের ওপর জুলুম করছে। বিচার বিভাগের ওপর সরকার অবৈধ প্রভাব খাটাচ্ছে। এটি নজিরবিহীন।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যার কারণে তারা তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া গায়েবি মামলায় জামিন নিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
এদিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য টিএস আইয়ুব বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রায় নিয়ে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া না দেখানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, তাদের নেতা বলেছেন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছে। এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন নেই।