বাউফলে খাস জমির দখল নিয়ে বিএনপির দুইপক্ষে সংঘর্ষ
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:২৫
পটুয়াখালীর বাউফলে সরকারি খাস জমির দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুইপক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) উপজেলা চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ফেডারেশন চর এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন- উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার হোসেন রিয়াজ, কালাইয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রস্তাবিত সভাপতি শাহরাজ হোসেন জয়, ছাত্রদল নেতা রেদওয়ান, ইয়াসিন, রায়হান এবং কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন তুহিন। এরমধ্যে নিরাপত্তাজনিত কারণে জসিম উদ্দিন তুহিনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। এছাড়া রিয়াজ, জয় ও রেদোয়ানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চর ফেডারেশন এলাকায় সরকারি খাস জমির বরাদ্দ পান স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের থেকে এক একর জমির লিজ নেয় ছাত্রদলের শাহরাজ হোসেন জয়। ওই খাস জমির পাশাপাশি ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জসিমউদ্দিন তুহিনের ব্যক্তি মালিকানা কিছু জমি ছিল। শনিবার সকালে লিজ নেয়া ওই জমির দখল নিতে যায় শাহরাজ হোসেন জয় ও তার সহযোগীরা। এ সময় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিমউদ্দিন তুহিনের লোকজন বাধা দিলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় শাহরাজ হোসেন জয় ও সরোয়ার হোসেন রিয়াজসহ তাদের তিন সহযোগী আহত হয়। পরে কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন তুহিন হাসপাতালের সামনে গেলে জয় ও রিয়াজের অনুসারীরা তার ওপরে অতর্কিত হামলা চালায়। তাকে উদ্ধারে সহযোগিতা করতে গেলে সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেন উপজেলা বিএনপির একাংশের কয়েকজন নেতা। এ সময় পুলিশ জসিমকে উদ্ধার করে একটি দোকানের মধ্যে আটকে রাখেন এবং পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেয়া হয়।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ফটকের সামনে তুহিনের উপর হামলা চালায় ছাত্রদল নেতা মুজাহিদুলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা। তখন তুহিন আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে স্থানীয় একটি ক্লিনিকের মধ্যে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে এনে তাকে মারধর করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, তুহিনের নেতৃত্বে চরফেডারেশ এলাকায় তার কয়েকজন কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। ওই ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন তুহিন। তিনি তাকে (তুহিন) রক্ষা করেছেন এবং ধরে থানায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন। মারধরের ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না।
এ বিষয়ে সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার হোসেন রিয়াজ বলেন, আমরা নিজেদের জমি চাষাবাদ করতে গেলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন তুহিন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদেরকে আহত করেছেন।
কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন তুহিন বলেন, আমি কালাইয়া হাটবাজারের ইজারা নেয়ার পর থেকেই একটি পক্ষ আমাকে বিভিন্নভাবে হামলা করার চেষ্টা করে। শনিবার আমি ওষুধ কিনতে হাসপাতাল এলাকায় আসলে তারাই অতর্কিত হামলা চালায়। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারির বিষয়ে তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।
বাউফল উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ফিরোজ বলেন, জসীম আহমেদ তুহিন একজন নম্র-ভদ্র মানুষ। তাকে অপমান অপদস্থ মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার জড়িতদের শাস্তির দাবি করছি।
এ বিষয় বাউফল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একপক্ষের আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে নিয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে অপরপক্ষের একজনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরিফুল ইসলাম সাগর/এমবি