Logo
Logo

রাজনীতি

হঠাৎ কেন ‘বিবৃতি-যুদ্ধে’ বিএনপি-জামায়াত

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৪৬

হঠাৎ কেন ‘বিবৃতি-যুদ্ধে’ বিএনপি-জামায়াত

বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে চলছে বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতির ‘যুদ্ধ’। একে অন্যকে দোষারোপ করে করা হচ্ছে আক্রমণ। একদল আরেক দলকে ‘মোনাফেক’ও বলছে। একে অপরকে বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগও করে দুটি দল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সরগরম। দল দুটির নেতাকর্মীরা এ নিয়ে বাকযুদ্ধে মেতেছেন। 

এ ঘটনার সূত্রপাত হয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘আমরা তো প্রথমেই দেখলাম ৫ আগস্টের পরদিনই ইসলামী ব্যাংক দখল করেছে, এটা কি জনগণ দেখেনি? দেখেছে জনগণ। হাসিনার আমলে দেখেছি চাপাতি লীগ, হেলমেট লীগ, বন্দুক লীগ। আবার জনগণ এটাও জানে খুর লীগ, পায়ের রগ কাটা পার্টি। এরা কারা জনগণ কি জানে না? তাদের জনগণ ঠিকই চেনে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু পার্শ্ববর্তী দেশই অপপ্রচার করছে না, দেশের দুই-একটি রাজনৈতিক দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। একাত্তরের বিরোধিতাকারীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে।’

রিজভী বলেন, ‘ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানেতো বারবার মোনাফেকি করা না। জনগণের প্রতি অঙ্গীকার থেকে বিএনপি কখনো পিছিয়ে আসেনি। ১৯৭১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কখনও মাথা নত করেনি।’ রিজভীর অভিযোগ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত।

রিজভীর এমন বক্তব্যের পর ওই দিন রাতেই জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

তিনি বলেন, ‘রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ, কারা পায়ের রগ কাটে তাদের চিনে জনগণ, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারী জামায়াত।’

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘রিজভীর এ জাতীয় বক্তব্য বিগত কয়েক দশক ধরে প্রচার করা হচ্ছে। রগ কাটা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার, ৭১ এর বিরোধিতা এসব বক্তব্য জনগণ বহু পূর্বেই প্রত্যাখ্যান করেছে। রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে এসব কথা উচ্চারণ করে কী অর্জন করতে চান, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। জামায়াত রগকাটা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি কখনো করেনি। তিনি জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে ‘ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না’ তার এই বক্তব্য চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘জামায়াত ‘ইসলাম’ নিয়ে রাজনীতি করে না। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে। জামায়াতে ইসলামী কখনো মোনাফেকি করেনি। জামায়াত দেশের মানুষের অধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপসহীনভাবে লড়াই করেছে। জামায়াত কখনো মোনাফেকির আশ্রয় নেয়নি।  রিজভী অবশ্যই অবগত আছেন ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্ন মতের লোকদের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ঐক্য করা হয়েছিল তা কি জাতির সঙ্গে মোনাফেকি নয়? জনগণ এই রাজনৈতিক ছন্দ পতনের ইতিহাস ভুলে যায়নি।’

‘রিজভীর গাত্রদাহ’ হয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। জামায়াতের এই ভূমিকা গোটা জাতি গ্রহণ করেছে। আর এ কারণেই সম্ভবত রিজভীর গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে।’

এরপর জামায়াতের বিবৃতির পাল্টা জবাব দেয় বিএনপি। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জামায়াত আমিরের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সংক্রান্ত একটি ছবি যুক্ত করে বলা হয়, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত দর কষাকষি করে ২২ আসন বাগিয়ে নেয় জোট থেকে। সেই নির্বাচনে ডা. শফিকুর রহমান (জামায়াত আমির) নিজেও ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাহলে কার সঙ্গে জোট? আর কার সঙ্গে মোনাফেকির কথা বললেন আমির?’

ডিআর/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর